এক নজরে

আহমদ ফারহাদের গোটা জমিটাই কি সেনাবাহিনীর 

By admin

May 07, 2025

প্রায় বছর খানেক আগে পর্যন্ত আহমেদ ফারহাদের নিখোঁজ সম্পর্কে পাকিস্তান সরকার মিথ্যে কথা বলতো। মাত্র কিছুদিন আগেও ইসলামাবাদ পুলিশ ফারহাদের অপহরণের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য (এফআইআর) দায়ের করে। তার ভাগে ইসলামাবাদ পুলিশ অস্বীকার করেছে যে ফরহাদ তাদের হেফাজতে রয়েছে। উল্লেখ্য, আহমেদ ফরহাদের স্ত্রী আইন নাকভি লোহি বিয়ার জানিয়েছিলেন, ২০২৪-এর ১৫ মে ভোরে ইসলামাবাদে তার বাসভবন থেকে পাকিস্তানের সাংবাদিক ও কবি আহমেদ ফারহাদকে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন অপহরণ করে নিয়ে যায়। তিনি থানায় অভিযোগ করেন যে মুখোশধারী কয়েকজন রাত ১টা নাগাদ জোর করে তাঁদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং ফরহাদকে জোর করে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু এই ঘটনা পাকিস্তানের প্রশাসন সম্পূর্ণ অস্বীকার করে।

কে এই আহমেদ ফারহাদ? পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ফারহাদ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের বিক্ষোভে নিয়ে তাঁর একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তিনি পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের বাগ জেলার বাসিন্দা হয়েও তাঁর দেশের সরকারের তীব্র সমালোচনা করতেন এবং পরবর্তীতে সেটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়, এর জন্য পাকিস্তানের সরকার বা পাক সেনাবাহিনী তাকে বিশেষ পছন্দ করতো না। তবে ফরহাদ তাঁর রাজনৈতিক প্রতিরোধের কবিতার জন্যও পাকিস্তানে আরও বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। ফারহাদ সংবিধানকে “খেলনার মতো” ব্যবহার করার জন্য সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করেছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সামরিক সংস্থার লক্ষ্যবস্তু। তাঁর অপহরণের কয়েকদিন আগেই তিনি তাঁর জীবন যে যথেষ্ট হুমকির মধ্যে রয়েছে সেকথা টুইট করেছিলেন

অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী, সে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান যারা অন্যমত দমন করার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। কয়েক দশক ধরে সমালোচকদের অপহরণ, হত্যা এবং গুম করার জন্য সেনাবাহিনীর বিভিন্ন এজেন্সি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও তারা এই বিষয়টিকে কখনও কিছুতেই স্বীকার করতে চায়না। কিন্তু পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ জানে, ওভাবে যাদের নিয়ে যাওয়া হয় তাদের অনেকেই আর জীবিত ফেরে না।  গত বছর মে মাসে ফারাদ অপহরণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রথমবারের মতো কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন যে তাকে একটি ছোট, গরম, দুর্গন্ধযুক্ত জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেই জায়গায় খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। পরিবর্তে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টেনে আনা হয়েছিল।

তার অপহরণকারীরা স্পষ্ট করে বলেছিল যে তাঁর রাজনৈতিক কবিতা, তার সক্রিয়তা এবং পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাপ্রধানকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি সাম্প্রতিক পোস্ট, অপহরণকারীদের বাধ্য করে তাঁকে তুলে নিতে। “তারা আমাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে, সেনাপ্রধান এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমার সমস্যা কি? তাঁরা আমার প্রতিরোধের কবিতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, বিশেষ করে সামরিক বাহিনী এবং জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে আমার দুটি কবিতা নিয়ে তাঁরা জানতে চান। কেন কবিতার শিরোনাম হিসেবে সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করলেন, সেনাবাহিনীকে ঘৃণা করেন কেন? এসব কথাই তাঁরা আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করেছিল।” ফারহাদ জবাবে জানিয়েছিলেন যে তিনি সামরিক বা প্রধানকে ঘৃণা করেন না তবে বিশ্বাস করেন যে সকলেরই সংবিধান মেনে চলা উচিত। সামরিক বাহিনীরও।

তাকে অপহরণ করার দু’সপ্তাহ পর, পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়। পরে জামিনে মুক্তি পান। তবে এরপর তিনি একটি চেকপয়েন্টে একজন সরকারী কর্মচারীকে “বাধা” দেওয়ায় ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হন। কিন্তু তিনি দাবি করেন যে, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ফারহাদের অপহরণ নিয়ে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর মিডিয়া শাখা কোথাও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মুক্তি পাওয়ার ঠিক আগে ফারহাদকে বলা হয়েছিল কোনো সাক্ষাৎকার না দিতে। বিষয়টাকে চেপে যেতে এবং আবার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার না করতে। যাইহোক, তিনি বলেছেন যে, তিনি নীরব থাকতে অস্বীকার করেছেন এবং এখনও তার প্রতিরোধমূলক কবিতার একটি বই প্রকাশ করার পরিকল্পনা করছেন। কিছুদিন আগে ফারহাদ বলেছিলেন, “আমি আশঙ্কা করছি যে তারা আমাকে কথা বলার জন্য মেরে ফেলবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমার সব কথা বলা উচিত। আমাকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং আমি জানি কে আমাকে অপহরণ করেছে।”

শিল্পী, কবি এবং সমালোচকদের কথা বলার জন্য পাকিস্তানের পরিস্থিতি সর্বোত্তমভাবে তুলে ধরে ফারহাদ বলেছেন, তার নিজের একটি রাজনৈতিক কবিতা, ফৌজ নামা, বা আর্মি বিষয়ক শ্লোক, যেটি তার জিজ্ঞাসাবাদকারীদেরকে বিরক্ত করেছিল। একটা লাইন এরকম: “আমরা এখানে বাস করি শুধু নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য, আর কোনো অধিকার নেই; কারণ পাকিস্তানের পুরো ভূমিই সেনাবাহিনীর, জনগণের নয়।”