%%sitename%%

এক নজরে

ভক্ত আর ভগবানের মধ্যে কেউ না থাকলেও চলে

By admin

August 05, 2020

ইন্দ্রনীল বসু

রাম ছিলেন কি ছিলেন না, রামমন্দির অস্তিত্ব ছিল কি ছিল না, জানি না। জানি শুধু রামায়ন বাল্মীকির লেখা যা পরে গোস্বামী তুলসিদাস হিন্দিতে অনুবাদ করে ভুভারতে জনপ্রিয় করেছিলেন। আর সেই থেকেই মানুষের মনে , ‘ রাম নাম এক আবেগ। রাম ভারতের একেমাদ্বিতীয়ম অবতার। বিষ্ণুর যত অবতার আছেন তার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় শ্রীরামচন্দ্র। রাম ভারতে এক উন্মাদনার নাম। শহর তো দূর অস্ত কোনো ভারতের অজ পাড়াগাঁয়ে একটা বাচ্চাও রামের নাম জানে। আর সে জন্য কোনো রাজনৈতিক দলের বাহবা প্রাপ্য নয়, প্রাপ্য তুলসীদাসজীর আর অবশ্যই দস্যু রত্নাকর থেকে রূপান্তরিত মহাকবি বাল্মীকির। অনেক আলোচনা হচ্ছে রাম আর অযোধ্যা নিয়ে। শোনা যাচ্ছে বর্তমান বড় বড় পুরোহিত, মোহান্ত আর রাজনৈতিক নেতা – নেত্রীর নাম। কিন্তু চর্চা চোখে পড়ছে না মহাকবিদের। কোথায় তুলসিদাস?, কোথায় তার দর্শন? স্রষ্টা নেই। সৃষ্টি নিয়ে রাজনীতি আজ।কি সুন্দর রামের বর্ণনা গোস্বামীর লেখায় আর ভজনে।

শ্রী রামচন্দ্র কৃপালু ভজমন , হরণ ভাগভায় দারুনাম ।নব কাঞ্জলচন কাঞ্জমুখ করকঞ্জো পদকাঞ্জনুরাম।।

রামের অমন সুন্দর বর্ণনা তো চোখে জল এনে দেবে মানুষের। পড়তে পড়তে এক অপার্থিব জগতে হারিয়ে যাবে মন। আর রামরাজ্য ? সেখানে তো সব মানুষ জীবন মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তির ভাবনায় মশগুল থাকবে। রাম, রাম করে শুধু ধর্মান্ধতা এক জিনিষ আর রামকে কেন্দ্র করে আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডল রচনা আর এক। মারপিট , দাঙ্গা, হাঙ্গামার ভারতবর্ষ , আধ্যাত্মবাদ আশ্রয় নিয়েছে হিমালয়ের গহন অরণ্যে অথবা কোনো এক ক্ষুদ্র ঘরের কোণে । মানুষ মন থেকে উন্নত না হলে ধর্মচর্চা বিভেদ আর বৈষম্য ডেকে আনতে পারে শুধু। রামকৃষ্ণ যুগপুরুষ ছিলেন। বলতেন ধ্যান করবে বনে , মনে আর কোনে( ঘরের কোনে, যাতে কেউ জানতে না পারে ) । কোথায় সেই মহাপুরুষদের দর্শন, কোথায় সিম্পল লিভিং, হাই থিঙ্কিং-র দর্শন? অতীতের ভারতাত্মার বাণীকে ধর্মের জাতাকলে পিষে মরার ফন্দিফিকির নজরে আসে। আসলে ধর্ম আর আধ্যাত্ববাদের মধ্যে পার্থক্যটাই জানে না অর্ধেক মানুষ । ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া নিয়মের চর্চা। আর আধ্যাত্ববাদ ? স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে কোনো কাজ বা ঈশ্বর সাধনা যার কথা পরতে পরতে সন্ত কবির, মিরাবাই, চৈতন্য থেকে রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, ঋষি অরবিন্দ বলে গেছেন।\

আজ অযোধ্যা সাজবে জমকালো পোশাকে। আলো জ্বলবে, মন্ত্রচ্চারন হবে, লোক সমাগম হবে, নেতা, নেত্রী, মন্ত্রী-সান্ত্রী রাম নাম উচ্চারণ করবেন। কিন্তু ভারতাত্মার বাণী কি শোনা যাবে ? জীবে প্রেম করে যেই জন , সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। গুঞ্জরিত হবে কি সেই মঙ্গলধ্বনি – অযোধ্যা জুড়ে, ভারত জুড়ে ? নাকি মহাকবিদের ভাঙিয়ে আর রাম নামকে ঢাল করে একদল লোক তাদের লোভ, লালসা , স্বার্থ চরিতার্থ করে চলার পথ আরো সুগম করবে? আশা রাখবো, ‘ঠমকি চলতো রামচন্দ্র , বাজে পায়জনিয়া’র সৃষ্টি কর্তার ভাবনা আর দর্শনের নবজন্ম হবে একশো তিরিশ কোটির দেশে।