কলকাতা ব্যুরো: কারো কারো মতে, শহরটা নাকি আনুমানিক ৯ হাজার বছরের পুরনো। সে তুনলায় অযোধ্যা বিতর্ক সাকুল্যে পাঁচশো বছরের। পাঁচশো বছর সময়কাল মানে অবশ্য মধ্য যুগ থেকে আধুনিক হয়ে উত্তর আধুনিক যুগে বিচরণ।
এক অদ্ভুত শহর এই অযোধ্যা। সাবেক কোশল রাজ্যের রাজধানী থেকে মহাকাব্যের এপিসেন্টার। মধ্যযুগের মোঘল সাম্রাজ্যের নাম এবং বিতর্কও আবার যুক্ত এরই সঙ্গে। আধুনিক ভারতেও সরকার পতন, দীর্ঘ মামলা, রাজনৈতিক সমীকরণ বদলের সঙ্গেও যুক্ত অযোধ্যার ইতিহাস।
চলমান সেই ইতিহাসেরই আরো একটু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আজ। সেখানে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে রাম মন্দিরের ভূমি পুজো।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক অযোধ্যা বিতর্কের প্রায় পাঁচশো বছরের ইতিহাস।
ফিরে দেখা
১৫২৮- বাবরের সেনাপতি মীর বাকি বাবরি মসজিদ তৈরি করলেন।
১৮৮৫- ফৈজাবাদ জেলা আদালতে বাবরি মসজিদের বাইরে চাঁদোযা টাঙানোর আবেদন জানালেন মহান্ত রঘুবর দাস। আবেদন নাকচ হলো।
১৯৪৯- বিতর্কিত ধাঁচার মূল গম্বুজের মধ্যে বসানো রামলালার মূর্তি।
১৯৫০-রামলালার মূর্তিগুলির পূজার অধিকারের আবেদন জানিয়ে ফৈজাবাদ জেলা আদালতে আবেদন। মূর্তি রেখে দেওয়ার এবং পূজা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মামলা।
১৯৫৯- ওই জায়গার অধিকার দাবি করে মামলা নির্মোহী আখড়ার।
১৯৬১- একই দাবিতে মামলা সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের।
১৯৮৬- ১ ফেব্রুয়ারি — স্থানীয় আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয়, হিন্দু তীর্থযাত্রীদের প্রবেশাধিকার দিতে। সে সময়ে রাজীব গান্ধী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি দেবকীনন্দন আগরওয়ালের মাধ্যমে মামলা দায়ের।
১৯৮৯, ১৪ অগাস্ট– এলাহাবাদ হাইকোর্ট বিতর্কিত স্থানে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়।
১৯৯০, ২৫ ডিসেম্বর– বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি গুজরাটের সোমনাথ থেকে রথযাত্রা শুরু করলেন।
১৯৯২, ৬ ডিসেম্বর, — বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিলো কর সেবক বাহিনী।
১৯৯৩, ৩ এপ্রিল — অযোধ্যার ওই জমি অধিগ্রহণ করার জন্য বিতর্কিত এলাকার অধিগ্রহণ আইন পাস হল। অধিগ্রহণ আইনের বিভিন্ন বিষয়কে চ্যালেঞ্জ করে এলাহাবাদ হাইকোর্টে নতুন মামলা। সংবিধানের ১৩৯-এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে ওই রিট পিটিশন বদলি করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট, যা এখনও হাইকোর্টে বিচারাধীন।
১৯৯৪, ২৪ এপ্রিল — সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে ইসমাইল ফারুকি মামলায় রায়ে জানায় মসজিদ ইসলামের অন্তর্গত ছিল না বলে জানায়।
২০০২ এপ্রিল- বিতর্কিত জমির মালিকানা নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।
১৩ মার্চ, ২০০৩–অধিগৃহীত জমিতে কোনও ধর্মীয় কার্যকলাপ করা যাবে না বলে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্ট আরও বলে, এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে অন্তর্বর্তী আদেশ বলবৎ থাকবে।
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০– বিতর্কিত জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রামলালার মধ্যে সমবণ্টন করে দেওয়ার পক্ষে রায় দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। তিন বিচারপতির বেঞ্চে ২-১ ভিত্তিতে রায়দান করা হয়।
৯ মে, ২০১১– অযোধ্যা জমি বিতর্কে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দিলো সুপ্রিম কোর্ট।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬– সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির তৈরির অনুমতি চেয়ে আবেদন।
২১ মার্চ, ২০১৭– প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর আদালতের বাইরে সমঝোতার প্রস্তাব দেন।
৭ অগাস্ট, ২০১৭ — এলাহাবাদ হাইকোর্টের ১৯৯৪ সালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা সুপ্রিম কোর্টে। তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন।
৮ অগাস্ট, ২০১৭ — উত্তরপ্রদেশের শিয়া সেন্ট্রাল বোর্ড সুপ্রিম কোর্টে জানায়, বিতর্কিত জায়গা থেকে কিছুটা দূরে মসজিদ বানানো যেতে পারে।
২০ নভেম্বর,২০১৭ — অযোধ্যায় মন্দির ও লখনউয়ে মসজিদ বানানোর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে মত দেয় উত্তর প্রদেশের শিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড।
১ ডিসেম্বর, ২০১৭ — এলাহাবাদ হাইকোর্টে ২০১০ সালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা ৩২ জন নাগরিক অধিকার রক্ষা কর্মীর।
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮– সুপ্রিম কোর্টে সমস্ত দেওয়ানি মামলার আবেদনের শুনানি শুরু।
১৪ মার্চ, ২০১৮ — মামলায় যুক্ত হতে চেয়ে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী-সহ সকল অন্তর্বর্তী আবেদনকারীর আবেদন সুপ্রিম কোর্টে।
৬ এপ্রিল,২০১৮–১৯৯৪ সালের রায়ে যে পর্যবেক্ষণ ছিল তা বৃহত্তর বেঞ্চে পুনর্বিবেচনা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন।
২০ জুলাই, ২০১৮ — সুপ্রিম কোর্ট রায়দান স্থগিত রাখলো।
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ — পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে মামলা নিয়ে যেতে অস্বীকার করল সুপ্রিম কোর্ট। ২৯ অক্টোবর থেকে তিন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানির ঘোষনা।
৮ জানুয়ারি, ২০১৯ — প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সংবিধানিক বেঞ্চ গঠন। প্রথমে বেঞ্চে বিচারপতি এসএ বোবদে ( বর্তমান প্রধান বিচারপতি), এনভি রামানা, ইউইউ ললিত এবং ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে রাখা হয়।
১০জানুয়ারি, ২০১৯ — বিচারপতি ইউইউ ললিত নিজেকে মামলা থেকে সরিয়ে নেন।
২৫ জানুয়ারি, ২০১৯ –নতুন বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ছাড়া বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস এ নাজির জায়গা পান।
২৯ জানুয়ারি, ২০১৯ — বিতর্কিত অংশ বাদ দিয়ে বাকি ৬৭ একর জমি কেন্দ্রীয় সরকার তাদের আদত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে।
৬ মার্চ, ২০১৯ — জমি বিতর্ক মধ্যস্থতার মাধ্যমে মীমাংসা করা হবে কিনা সে সম্পর্কিত রায় দান স্থগিত রাখে সুপ্রিম কোর্ট।
৯ এপ্রিল, ২০১৯ — কেন্দ্রের জমি ফেরানোর আবেদনের বিরোধিতা করে নির্মোহী আখড়া।
৯ মে, ২০১৯ — তিন সদস্যের মধ্যস্থতাকারী কমিটি সুপ্রিম কোর্টে তাদের অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দেয়।
১৮ জুলাই, ২০১৯ — মধ্যস্থতার সময় বাড়িয়ে ১ আগস্ট রিপোর্ট দিতে বলে সুপ্রিম কোর্ট।
১ অগাস্ট, ২০১৯ — মুখ বন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ে মধ্যস্থতা সংক্রান্ত রিপোর্ট।
৬ অগাস্ট, ২০১৯ — দৈনিক শুনানি বলে জানায়
সুপ্রিম কোর্ট।
১৬ অক্টোবর- সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শেষ, রায়দান মুলতুবি।
৯ নভেম্বর’২০১৯- ১৩৪ বছরের বিতর্কের নিষ্পত্তি। অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম রায় ঘোষণা। কোর্ট জানালো, ৪৯১ বছর আগে অযোধ্যার হনুমান গড়ি টিলায় বাবরের সেনাপতি মীর বাঁকি মসজিদ গড়েছিলেন, তা আদতে রামলালা। গর্ভ গৃহ সমেত বিতর্কিত ওই জমি দেওয়া হোক রাম জন্মভূমি ন্যাসকে। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের পাশাপাশি নির্মহী দাবি করে জমির মালিকানা আবেদন খারিজ হলো।
শীর্ষ আদালতের কেন্দ্রকে নির্দেশ, তিন মাসের মধ্যে রাম মন্দির গড়ার জন্য ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। অযোধ্যার সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে মসজিদ গড়ার জন্য পাঁচ একর জমি দিতে হবে।
৪ফেব্রুয়ারি, ২০২০– ১৫ জনের শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট গঠন কেন্দ্রের। ট্রাষ্টে একজন দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসককে রাখা হলো। দিল্লির গ্রেটার কৈলাশে হলো সদর দপ্তর।
৫ফেব্রুয়ারি, ২০২০ — সেই ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে করোনা অতিমারি আবহে মাত্র ২০০ জন আমন্ত্রিতকে রেখে রাম মন্দিরের ভূমি পুজো। প্রধানমন্ত্রীর হাতে শিল্যান্যাস।