এক নজরে

ডান্সিং অন দ্য গ্রেভ  

By admin

June 21, 2023

১৯৯১ সালে একদিন হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান এক সময়ের ভারতের অন্যতম বিত্তশালী নারী শাকিরা খলিলি। নিখোঁজ হওয়ার পরবর্তী তিন বছরে শাকিরার দ্বিতীয় স্বামী শ্রদ্ধানন্দ অজস্র মনগড়া কাহিনী বানিয়ে গিয়েছেন স্ত্রীর হদিস সম্পর্কে।

তিন বছর পর ১৯৯৪ সালে বেঙ্গালুরুতে তাদের নিজের বাড়ির উঠান খুঁড়ে শাকিরার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, প্রথমে মাদক সেবন করানোর পর কাঠের বাক্সে ভরে তাকে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তদন্তে বেরিয়ে আসে যে তাকে জীবন্তই মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল! শাকিরা খলিলির এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সেই সময় ভারতজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল।

২০০৩ সালে ট্রায়াল কোর্ট স্বামী শ্রদ্ধানন্দকে খুনের দায়ে অভিযুক্ত করে এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়, যা পরে নিশ্চিত করে হাইকোর্ট। আদালত এই সিদ্ধান্তে আসে যে তিনি শাকিরা খলিলিকে তার কোটি কোটি টাকার সম্পদের লোভে বিয়ে করেছিলেন। তার আপিলের সময় সুপ্রিম কোর্ট এই ঘটনাকে ‘একজন মানুষের জঘন্য লোভ এবং শয়তানের মতো ধূর্ততা’ বলে আখ্যা দেয়। তবে শ্রদ্ধানন্দকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৩০ বছর আগে যে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ভারতজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, সেই ঘটনা অবলম্বনেই এবার তৈরি হচ্ছে নতুন একটি ওয়েব শো। আমাজন প্রাইম ভিডিওতে প্রচারিত হবে ‘ডান্সিং অন দ্য গ্রেভ’ নামের একটি ওয়েব শো। ওয়েব শো’র এরকম নামকরণের কারণ- যে উঠানে স্ত্রীকে মাটিচাপা দিয়েছেন, সেই উঠানেই একাধিক নাচের পার্টি আয়োজন করেছিলেন স্বামী শ্রদ্ধানন্দ।

ওয়েব শো’টির প্রযোজক, ইন্ডিয়া টুডে অরিজিনালস প্রোডাকশন-এর চাঁদনি আলাওয়াত দাবাস জানান, শাকিরার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে এখনো অনেক ‘কি, কেন, কিভাবে’ প্রশ্ন রয়েছে যা এখনও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। যদিও খুনের ঘটনা ও খুনীর ওপর নির্মিত সিরিজে এই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না, কিন্তু এটি দর্শকদের দেখার জন্য আকর্ষণীয় একটি সিরিজ এবং ভারতে এটি বেশ সাড়া ফেলেছে। চার পর্বের এই সিরিজের প্রথম দুটি এপিসোডে শাকিরা খলিলির জীবনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। মাইসোর, ব্যাঙ্গালোর, জয়পুর ও হারদরাবাদের দেওয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা, স্যার মির্জা ইসমাইলের নাতনি শাকিরা খলিলি প্রথম বিয়ে করেছিলেন সুদর্শন কূটনীতিবিদ আকবর খলিলিকে। এই দুজনের সংসারে চার মেয়ের জন্ম হয়।

পরিবারের সদস্যরা শাকিরাকে একজন ‘মনোমুগ্ধকারী, লার্জার দ্যান লাইফ চরিত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন, যার ‘ভিন্টেজ গাড়ির শখ ছিল, যিনি ছিলেন খুবই সামাজিক এবং স্নেহময়ী নারী’। কিন্তু আশির দশকের মাঝামাঝিতে শ্রদ্ধানন্দের সাথে পরিচয় হয় তার এবং শাকিরার জীবন নতুন দিকে মোড় নেয়।

সেই সময়কার প্রেস ক্লিপিংসে স্বামী শ্রদ্ধানন্দকে খুবই দরিদ্র ঘরের সন্তান এবং স্কুল থেকে ঝরে পড়া একজন হিসেবে অভিহিত করা হয়। একই সঙ্গে তাকে একজন ‘ভণ্ড সাধু’ ও ‘কাজের ছেলে’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি ‘কিছু সম্পত্তি সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে শাকিরাকে সাহায্য করে’ তার প্রিয় হয়ে ওঠেন। শাকিরার ছেলে সন্তানের মা হওয়ার ইচ্ছার সুযোগ নেন শ্রদ্ধানন্দ এবং দাবি করেন যে তিনি জাদুকরী শক্তিতে তার সেই ইচ্ছা পূরণ করবেন।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮৬ সালে শ্রদ্ধানন্দকে বিয়ে করার পরপরই দুজনের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। তারা দুজনে প্রায়ই ঝগড়া করতেন এবং বেশিরভাগ সময়ই তা হতো টাকাপয়সা নিয়ে। ফলে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে খুন করে তার সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন শ্রদ্ধানন্দ। ট্রায়াল কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের মোট আটজন বিচারক শ্রদ্ধানন্দকে দোষী সাব্যস্ত করলেও, তার আইনজীবীদের দাবি- তার বিরুদ্ধে ‘সারকামসটেনশিয়াল এভিডেন্স’ পাওয়া গেছে। আর ওয়েব সিরিজে শ্রদ্ধানন্দ নিজে দাবি করেছেন যে তিনি শাকিরা খলিলিকে খুন করেননি।

কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন যে এই শো-এর মাধ্যমে অপরাধীদের একটি প্ল্যাটফর্ম দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ‘ড্যান্সিং অন দ্য গ্রেভ’ এর পরিচালক, মুম্বাইভিত্তিক ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা প্যাট্রিক গ্রাহাম শ্রদ্ধানন্দকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন।