এক নজরে

Cyclone Update: জাওয়াদ-এর জের বাংলায়

By admin

December 06, 2021

কলকাতা ব্যুরো: আমফান, ফণি, যশের পর এবার বাংলার দুয়ারে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। যার প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়েছে রাজ্যে। এরই মধ্যে আরও দু’ থেকে তিনটি সাইক্লোন আছড়ে পড়ার সম্ভাবনার কথা জানালেন ভূতত্ত্ববিদ সুজীব কর। তাঁর কথায়, ‘শীতকালে সাধারণত শান্ত জলবায়ু বিরাজ করে। সাইক্লোন ফর্ম করে না। কিন্তু, মরশুমের ট্রানজিশন পিরিয়ডে অর্থাৎ শীতকাল কেটে গিয়ে যখন গ্রীষ্মকাল আসবে তখন পরপর সাইক্লোন দেখা যাবে। অর্থাৎ মার্চ থেকে মে-র মধ্যে দু’ থেকে তিনটি সাইক্লোন আছড়ে পড়তে পারে। জুন পর্যন্ত যতগুলো সাইক্লোন তৈরি হয় সেগুলো পশ্চিমবঙ্গ কিংবা বাংলাদেশের দিকেই আসে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গে ওই সাইক্লোনের প্রভাব পড়বে।’

কিন্তু, এত ঘনঘন সাইক্লোন আসছে কেন? বিশেষজ্ঞের উত্তর, ‘এ বছর আমরা দীর্ঘ শীতকাল পাব। কিন্তু, শীতেও মাঝেমধ্যেই বৃষ্টিপাত হবে। আসলে জলবায়ুর পরিবর্তনের একটি পদ্ধতি এটি। জলচক্র সক্রিয় হয়ে গিয়েছে। যার ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি, এই ধরনের সাইক্লোনের পরিমাণ বাড়তে থাকবে।’তাঁর সংযোজন, ‘ঘোড়ামারা, মৌসুনি দ্বীপের পাশাপাশি পুরো সাগর আইল্যান্ড এভাবেই জলের তলায় তলিয়ে যাবে খুব শীঘ্রই। শুধু তাই নয়, কলকাতা সহ ১২টি শহর ভবিষ্যতে জলের তলায় তলিয়ে যাবে একথা আমরা আগেও বলেছি। জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে দুটি সাইক্লোন এর মধ্যে যে ব্যবধান থাকতো যে বিরোধী থাকতো সেই পরিমান সেই ব্যবধানটা কমে আসছে। ভবিষ্যতে এই ব্যবধান আরও কমবে সাইক্লোনের সংখ্যা আরও বাড়বে।’

ইতিমধ্যেই জাওয়াদের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে বাংলার একাধিক জেলায়। এই বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই জানাচ্ছেন ভূতত্ত্ববিদ সুজীব কর। তিনি বলেন, ‘শনিবার দুপুরের মধ্যেই অনেকটা শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল জাওয়াদ। সোমবার দুপুরের পর সাগরে এসে পৌছবে ওই ঘূর্ণিঝড়। ইতিমধ্যেই ভারী বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। দুপুরের পর থেকেই বৃষ্টি আরও বাড়বে। কলকাতা সহ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং নদিয়ায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরে এই সাইক্লোন ধীরে ধীরে শক্তি হারিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে চলে যাবে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হবে সুন্দরবন অঞ্চলে। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ দুই সুন্দরবনেই রবিবার দুপুর থেকে সোমবার দুপুরের মধ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হবে।’

সুজীব কর বলেন, ‘এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে জলের তাপমাত্রা অনেকটা বেশি। ডিসেম্বরে যে পরিমাণ তাপমাত্রা নামার কথা তা এখনও হয়নি। যার ফলে ভূমিভাগেও তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে অনেকটা বেশি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে জলের উপরে তাপমাত্রার একটা তারতম্য তৈরি হয়। সেই তারতম্য থেকেই এই ধরনের ঘূর্ণাবর্তের উৎপত্তি। তবে এই ঘূর্ণিঝড় ব্যতিক্রমী। কারণ, এটি প্রশান্ত মহাসাগর থেকে থাইল্যান্ডের উপর দিয়ে আন্দামান সাগর হয়ে বঙ্গোপসাগরে নেমে এসেছে। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার কারণে এই সাইক্লোন অনেকটা শক্তি সঞ্চয় করেছিল। বঙ্গোপসাগরে তাপমাত্রা কিছুটা সমতা থাকার কারণে বেশ কিছুটা পথ গভীর নিম্নচাপ হিসেবেই প্রবাহিত হয়েছে জাওয়াদ। তারপর এটি সাইক্লোনে রূপান্তরিত হয়েছে।’

তাঁর সংযোজন, ‘এই ঘূর্ণিঝড় ল্যান্ডফল করার কথা ছিল অন্ধ্রপ্রদেশে। কিন্তু, এই মুহূর্তে অন্ধপ্রদেশের ভূমিভাগ এবং জলভাগের তাপমাত্রার মধ্যে সাম্যতা তৈরি হয়ে গিয়েছে। যার ফলে ওই সাইক্লোন ভূমিভাগের প্রবেশ করতে পারেনি। একেবারে উপকূল রেখা বরাবর ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছে। যে পথ ধরে ওই নিম্নচাপ যাত্রা করেছে সেখানে কিছুটা ‘ডিফ্লেক্ট’ হয়ে গিয়েছে। ফলত পুরীতেও আর ল্যান্ডফল হচ্ছে না। কোস্টাল এরিয়া থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ গিয়ে এই ঝড় অন্যদিকে ঘুরে যাবে।’