কলকাতা ব্যুরো: মোহান্ত বাবা লালদাসের কথা আজ আরও মনে নেই। ভাবছেন, কে আবার এই লালদাস? নিশ্চয়ই কোন ধর্মগুরু বা পূজারী হবেন হয়তো। হ্যাঁ, পুরোহিত তিনি। অযোধ্যার রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত তিনি। তবে ছিলেন। এখন আর নেই। বেঁচেও নেই। ২৭ বছর আগে খুন হয়েছিলেন তিনি। অযোধ্যাতেই। তাঁর হত্যাকাণ্ডের কিনারা হয়নি। পুলিশি তদন্তের অগ্রগতিও কিছু জানা যায়নি। দেশ কিন্তু তাঁকে চেনে। “রাম কে নাম” মনে আছে? বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর সেই বিখ্যাত তথ্যচিত্র। বিশিষ্ট তথ্যচিত্র নির্মাতা অনন্ত পট্টবর্ধনের তৈরি রাম কে নাম-এ তাঁর সাক্ষাৎকার শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। তখন তিনি অযোধ্যায় রামলালার প্রধান পুরোহিত। তাঁর সামনেই ধ্বংস হয়েছিল বাবরি মসজিদ। সাক্ষাৎকারে মসজিদে করসেবকদের চড়াও হওয়ার বর্ণনা দিয়েছিলেন লালদাস। জানিয়ে ছিলেন, কীভাবে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক পুলিশ করসেবকদের জায়গা ছেড়ে দিয়েছিল।
মসজিদের ওপর হামলার সময় নিষ্ক্রিয় ছিল। ষড়যন্ত্রে কারা জড়িত, তাও তথ্যচিত্রে জানিয়েছিলেন অকুতোভয় লালদাস। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন। হিন্দু ধর্মে এমন মৌলবাদী হিংসার স্থান নেই বলে শাস্ত্র ব্যাখ্যা করে শুনিয়ে ছিলেন। এজন্য তাঁকে কম মাশুল দিতে হয়নি। তথ্যচিত্রের দৌলতে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেও কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা তাঁর ওপর খড়্গহস্ত হন। ১৯৯১-এ উত্তরপ্রদেশে কল্যাণ সিংয়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বে বিজেপি সরকার ফিরতেই রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিতের পদ থেকে রাতারাতি অপসারিত হয়েছিলেন। এরপর নানা মামলায় জড়িয়ে যান লালদাস। ভিটেছাড়া হন। অন্য কোন মন্দির তাঁকে কাজ দেয় না তিনি হিন্দু মহাসভার সমালোচনা করেছিলেন বলে। অর্থকষ্ট গ্রাস করে তাঁকে। তবু নিজের বক্তব্যে অটল ছিলেন। ১৯৯৩ সালে নিজের বাড়িতে দুষ্কৃতী হামলায় নিভে যায় তাঁর জীবনদীপ। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল তাঁর দেহ। আজ অযোধ্যায় মহাসমারোহ। রামমন্দিরের শিলান্যাস। মন্দিরের এই নির্ভীক প্রাক্তন প্রধান পুরোহিতকে কেন মনে রাখবে অযোধ্যা?