%%sitename%%

বাঁকা চোখে

শ্বেত ভালুকের মন খারাপ…

By admin

July 26, 2020

শ্বেত ভালুকের মন খারাপ। হিম হিম শীত, প্লাস্টিকের সচল খেলনায় মোড়া ভালুকটি বসে আছে এক টুকরো বরফের মেঝের উপর। এক সাংবাদিক ভারী চিন্তিত— বুম হাতে উত্তেজিত গলায় তিনি বলে চলেছেন কে ভাল করে দেবে মেরু ভালুকের মন?…মেরু ভালুকের মন বদলাতে ময়দানে নামলেন এক রং-মিস্ত্রী। নির্দিষ্ট কোম্পানির পুট্টি লাগালেই নাকি দেওয়াল হয়ে উঠবে এমন সাদা— অমনি চনমনে ভালুকদাদা!আহা হা! কী জব্বর বিজ্ঞাপনখানাই না বাজারে ছেড়েছে কোম্পানি

!বিশ্ব পরিস্থিতি বলছে, ক্রমশ গলে যাচ্ছে পৃথিবীর উত্তর মেরুর বরফ প্রদেশ। মহাসাগরের জলে ভেসে যাচ্ছে মেরু ভাল্লুক, পায়ের নীচে এক টুকরো সাদা বরফের চাঁই, ক্রমশ গলছে তা-ও— ছবিটা নাকি তাবড় বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, প্রকৃতিপ্রেমীদের মেরুদণ্ডে বাইয়ে দিয়েছিল মেরু-শীতল স্রোত। আমরা নাকি খুব চিন্তিত, পরিবেশ নিয়ে!কোভিড আসার পর গেল গেল রব… তারাই মাঝখানে হাই হাই রব উঠেছিল খানিকটা— “মাদার নেচার হিলিং”… নেট দুনিয়া ছেয়ে গেল ছবিতে, গাছ বেরোচ্ছে, পাখি দেখা যাচ্ছে, শিং নেড়ে হরিণ ঘুরে বেড়াচ্ছে পিচঢালা রাস্তায়। কিছু ছবি সত্যি, বেশ কিছু মিথ্যা। হাঙড়, তিমি, অলিভ রিডল… বেশ কিছুদিন আশার আলো দেখা গেল সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে।ভাবা গেছিল, হয়তো সত্যিই প্রকৃতি মা গুছিয়ে নিচ্ছেন নিজের গেরস্থালি। বেয়াড়া ছেলেকে ঘরে তালা দিয়েছেন, রাতের আগে মিলবে না খাওয়া। দারুন দারুন অপরাধ সে করে আসছে বহু দিন ধরেই। ভাবা গেছিল, এ বার হয়তো শুধরে যাবে বেপরোয়া ছেলেটা।

হায় রে আশা! লকডাউনের ধরি ধরি ছুপাছুপি খেলার মধ্যে বেপরোয়া শিরোমণি ভারতীয়রা এমন একখানা বিজ্ঞাপন বানিয়ে ফেললে!! একটা মেরু ভাল্লুককে ধরে এনে কৃত্রিম শীতলতা দিয়ে বন্দি করে ফেলেছে চার দেওয়ালে। ভালুকের মনোরঞ্জনের জন্য নাকি খেলনার প্রয়োজন! সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে যখন দেখা যায় পুট্টি করা সাদা দেওয়ালে দিলখুশ ভাল্লুক, তখন একটা দেওয়াল লাগে বৈ কি… মাথা কুটে মরার জন্য।

ভয়ে শরীর হিম হয়ে যায়। এ ভাবে আর কত অত্যাচার করবে মানুষ প্রকৃতির উপর!প্রবল ঝড়ে বিধ্বস্ত মানুষের পাশে আমরা থাকতে চাই। আছি। আহা মানুষের বড় কষ্ট। কিন্তু প্রকৃতিরও যে বড় কষ্ট। সুন্দরবনের একের পর এক দ্বীপ দখল করে বেড়েছে মনুষ্যবসতি। কেউ বাধা দিতে সাহস করেনি কখনও! ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে তবু দোষ হয় প্রকৃতিরই! কে কার জায়গা দখল করল ভাই! বিচার হবে কোন আদালতে?এটাই তো নিয়ম। পরিবার ক্রমশ বাড়বে বহরে, আড়ে। জমি চাই। আরও জমি। বসত গড়বে মানুষ। অট্টালিকা, ফ্ল্যাটের পর ফ্ল্যাট। প্লে-স্টোর খুললে আপনি একের পর এক গেম পাবেন। সে সব ডাউনলোড করার পরামর্শ দেবে নির্দিষ্ট সংস্থা। দেখবে কী মনোহারি তাদের চেহারা। কী সব ঝকঝকে গল্প। সমুদ্রে দিশাহারা নাবিক হঠাৎ খুঁজে পায় ছোট্ট একটি ভূমিখণ্ড। শুরু হয় অভিযান। সে ভূমিখণ্ড ক্রমশ গ্রাস করে নিতে থাকে গোটা সমুদ্রটাকেই। বাঁশের ছোট্ট মাথা গোঁজার আস্তানা থেকে ধীরে ধীরে বসত, নগর, মহানগর।

২০১২ সাল নাগাদ খুব জনপ্রিয় হয়েছিল ফার্মভিল। আহা কী সুন্দর খেলা। নিজের এক টুকরো জমি। রোজ জল দেওয়া, বাগান করা, নিজের হাতে লাগান টোম্যাটো… কী মনোহারি। একটা ছোট্টো বাড়ি, আর চারধারে ঝোপ জংলা… খেলা যত এগোয়, লেভেল যত বাড়ে, আপনাকে তত বলা হয় কেটে ফেলো গাছ, সাফ করে দাও ঝোপ। সেখানে বসাতে হবে খামারবাড়ি, গরু পোষো, মুরগি পোষো। শুরু হয় বাণিজ্য। একেবারে আদিম ব্যবস্থা।

আচ্ছা এর মধ্যে কি অন্যায় আছে কিছু? এ ভাবেই তো টিঁকে থাকবে মানুষ, মানুষের সন্তান, প্রজন্মের পর প্রজন্ম।তবে এ পৃথিবীর কথা ভাববে কে? আর কোনও প্রজাতি তো এ ভাবে পৃথিবীর সব কিছু কেড়ে নেয় না! সবটা দখল করে নেওয়ার কথা ভাবে না আর কেউ!কেন?তবে কি মানুষ এ পৃথিবীর কেউ নয়! মানুষ কি নিজেই তবে অন্য কোনখান থেকে এসে পড়েছে এ পৃথিবীতে? শুষে নিতে রূপ, রস, গন্ধ, বর্ণ!কে জানে!