বাঁকা চোখে

বাঙালির হাইকোর্ট

By admin

October 30, 2020

সূর্য গুপ্ত

পৃথিবীতে বাঙালি কত রকম?সে অনেক রকম আছে দাদা! বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবিদ, প্রমোটার,টোটোওয়ালা, ডাক্তার, পুলিশ, প্রেমিক, দালাল অনেক। বাঙালিরা এক একটি রত্ন, জানেন তো ?তাই নাকি? কিরকম?দাদা, কি যে বলেন !!! কবি মধু বলেছিল, হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন !!বাবা, তোমার তো প্রচুর জ্ঞান?আমি মুখ্যু মানুষ, লজ্জা দেবেন না। তবে বাবু , বাঙালিদের কিছু জিনিসে খুব মিল। যেমন, দুর্গা পূজা আর হাইকোর্ট!

দুর্গা পূজা তো বুঝলাম, কিন্তু হাইকোর্ট ? হাইকোর্ট তো বাঙালদের একচেটিয়া, ঘটিরা কবে থেকে ওদিকে গেলো ?

না , বাবু – এখন তো বাঙালি, দুর্গা পূজা আর হাইকোর্ট একাকার। একই অঙ্গে এত রূপ । বাঙালি গরিব, বাঙালি দুর্বল, কিন্তু বাঙালির তেজ মরেও মরে না । বাঙালি লকডাউন করছে, বাঙালি বাজার করছে আবার সেই বাঙালি প্লাস্টিকে মুড়ে বিন্দাস শ্মশানে যাচ্ছে ওঁয়াও ওঁয়াও করতে করতে। আমরা তো বড় রাস্তার পাশে থাকি বাবু, অ্যাম্বুলেন্স যাওয়া দেখতে পাই, সারাদিন কত কত যায়, এদিক থেকে ওদিক । প্রথম প্রথম বেশ মজা হতো – একটা কেস বেড়োলেই সারা পাড়াতে ভয়ে কাঁটা , সামনে বাঁশের বেড়া পড়ে যেত ! তারপর যে কখন আস্তে আস্তে বাঁশের বেড়া পাড়া থেকে গলির ভিতর দিয়ে বাড়ি বাড়ি চলে এলো, বোঝা গেল না। এখন তো আমরা করোনাকে কবেই নিজের করে নিয়েছি। দেখেছেন নাকি পুজোর সময় বিরিয়ানির দোকানের লাইন, রেস্টুরেন্টের ভিড়ের ঠেলাঠেলি? সবাই বলে করোনাতে নাকি বাজারে মন্দা, লোকের হাতে টাকা নেই- কি সব ভুলভাল ভাবনা।কি বলছো কি তুমি? এবার তো মন্ডপে ভিড় কত কম আর পুজোগুলো ছোট ছোট!! সবাই তো রাস্তায় বের হয়নি।বাবু,ওই যে বললাম- হাইকোর্ট। বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখিলাম বলে পুজোতে একটু খালি ছিল। কিন্তু, সত্যি কি তাই ছিল দাদা ? প্যান্ডেলের বাইরে গাদাগাদি ভিড়ের চাপ আর ফুচকা-রোলের দোকানে অকথ্য আকুল হাত দেখেননি? এমন হাবভাব যেন আজকে ওগুলো না খেতে পারলে কালকের সূর্যোদয় আর দেখতে পাবে না । মাস্ক পড়ার স্টাইল দেখলে তো হেসে বাঁচি না- এতদিনে বুঝেছি যে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা কাকে বলে।

এটা তুমি অন্যায় করছো কিন্তু। এতটাও খারাপ নই আমরা।সত্যি বলছেন দাদা? ঠিক করে ভেবে বলছেন? লোকজন প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরার সময় বিরক্ত হয়ে বলেছে – কত লোক বেড়িয়ে পড়েছে – সত্যি , কি বেআক্কেলে হুজুগে লোক সব । আর দাদা , আপনি ভাবছেন আমরা ভালো হয়ে গেছি ? সত্যি করে বলুন তো , এই হাইকোর্ট না থাকলে কি হতো? আমার কিন্তু খুব ভয় করছে। হাইকোর্টের তো এখন পুজোর ছুটি- তাই ।

হাইকোর্ট ছুটি তো তোমার ভয়ের কি ?

দাদা, লক্ষ্মী পুজো আসছে, কালী পুজো, জগদ্ধাত্রী, কার্তিক, ছট-মাইয়া- কি হবে ভাবতে পারছেন? হাইকোর্ট ছুটি হয়ে গেলে কে থামাবে মানুষকে? কে রায় দেবে ছোট করে পুজো করার? আমরা তো যে কোন ছুতোতে জুতোতেও ঝাঁপিয়ে পড়ি !!! আর তারপর!!! তারপর তো মহাপ্রলয়!

মহাপ্রলয়!! কি করে? কবে??দাদা, শীত আসছে! আপনি মাথায় বন্দুক ধরলেও বাঙালিকে বড়দিনের সময় পিকনিক বাতিল করে বাড়িতে রাখতে পারবেন? বাঙালি পিলপিল করে হনুমান টুপি আর মাফলার পড়ে একটা কমলালেবু হাতে ওই প্লাস্টিক ড্রেস পড়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে। এখন দিনে চার হাজার হচ্ছে আর তখন কুড়ি হাজার হবে। দেড় শতাংশ ধরলেও দিনে তিনশো।কি হবে দাদা?

সত্যি তো ! সত্যি চিন্তার ব্যাপার!! কি করা যায় তাহলে? কিছু ভাবলে??

আর কিছু করার নেই দাদা, শুধু একটা রাস্তা বাকি! ঘরে ঘরে হাইকোর্ট বসান দাদা- হাইকোর্ট রায় দেবে- ভাই,দাদা, বন্ধু- বাইরে বেরোস না – তোর বৃদ্ধ বাড়ির লোকদের কথা ভাব ,তোর ভাই,বোন,বন্ধুর কথা ভাব ,যাদের সারাবছর ওষুধ খেতে হয়-তোর নিজের ডায়াবেটিসের কথা ভাব । একবার সামনের বছরের পুজোর কথাও ভাব – তোকে ছাড়া প্যান্ডেল যে বড্ড ফাঁকা লাগবে !!