বাঁকা চোখে

মর্ত্য নারীর অবস্থা আর লক্ষ্মীদেবীর উপলব্ধি

By admin

September 12, 2020

পারমিতা মুখোপাধ্যায়

—দেখলে তো মা, লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকার কী ভীষণ সুবিধা আমার৷ বাব্বা! তোমার মতো রণচণ্ডী হলে এখন আর ভাল কিছুই হতো না৷—কেন? শুনি! রণচণ্ডী না হলে মহিষাসুরমর্দিনী হতাম কী করে? ত্রিলোক রক্ষা করত কে?—থাক মা৷ এই তো, দেখলে না নীলাঞ্জনার অবস্থা! সত্যিই তো, কী সাহস৷ আর শুধু সাহস না৷ একটা বড় মনও আছে ওঁর৷ অত রাতে, কে না জানে বিপদ হতে পারে! তবু তো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন৷ কী ভাবে আহত হলেন!—হ্যাঁ, সে তো বটেই৷ আজও তো দুর্গতিনাশিনীরা আছেন পৃথিবীতে৷ যত অধর্ম, অনাচার, পাপ বিনাশ হবে তাদের হাতেই৷—ঘণ্টা হবে৷ যাকে উদ্ধার করতে গিয়ে মারাত্মক জখম হলেন নীলাঞ্জনা, তিনি আসলে তাঁর বাগদত্ত পুরুষটির সঙ্গে ছিলেন৷ দাম্পত্য কলহ চলছিলই বলা যায়৷ ঘটনার পর সে মেয়ে সতী নারীর মতো আপ্রাণ চেষ্টা করেছে পুরুষটিকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে৷ মা গো হাসব! না নীলাঞ্জনার জন্য কাঁদব!!— কী বলছিস লক্ষ্মী! এটা দাম্পত্য কলহ? তা যে সম্পর্কে গাড়িতে বসে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করতে হয়, কলহে পুরুষ নারীর মুখে ঘুঁষি, পিছনে লাথি কষায় সে সম্পর্ক দাম্পত্য অবধি যায় কী করে?—তুমি তো পড়ে আছ সেই প্রাচীন যুগে৷ এখনও ভাবছ নারীর ক্ষমতায়ন দরকার৷ মা গো, এই নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়টাও একটা খেল৷ সে সব দেখে ফেলেছি আমি৷ এই যে ঝাঁপিটি বাগিয়ে বসেছি আমি৷ কী ভাব এটাই সব! না গো মা৷ ভিতরে আছে নানা রাজনীতি৷— সে সব ছাড়৷ আমার তো চিন্তা হচ্ছে অন্য জায়গায়৷ এই যে নীলাঞ্জনা মেয়েটাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে আহত হল, অথচ মেয়েটাই চাইছে অভিযুক্তকে বাঁচাতে… এ তো ভয়ঙ্কর৷ এখনও এ দেশে নীলাঞ্জনার মতো ডাকাবুকো মেয়েরা আছে৷ কিন্তু এরপরে আর কি কেউ যাবে কাউকে বাঁচাতে৷ হয়তো ভাববে দাম্পত্য কলহ৷ কত মেয়ে মরবে!— একবার কোজাগরির রাতে কলকাতায় বসে শুনেছিলাম, মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু৷ আজকাল বড় সত্যি মনে হয়! আর ওই যে বলছিলাম, নারীর ক্ষমতায়নের কথা, শুনবে? ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে মেয়েদের উঁচু পদ দেওয়া হচ্ছে৷ আসলে তারা পুতুল হয়ে নাচছে৷ অর্থের ঝাঁপিখানা আছে হয়তো হাতে, কিন্তু সৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই৷ এমনকি সরোর দেওয়া বিদ্যাবুদ্ধিও বন্ধক রেখে দিয়েছে সে নারী, এমনও দেখতে পাচ্ছি চোক্ষের উপর৷ বোধহয় শুধু ঝাঁপির দখল দিয়েছে বলে নির্বোধ পুরুষের পদলেহন করে চলেছে৷ এ দিকে ঝাঁপি থেকে ক্রমশ কমছে সম্পদ৷— এমনও সব হচ্ছে রে!— হচ্ছে বই কি! আরও হচ্ছে৷ খাপ বসছে টিভিতে৷ নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে অবশ্য কোনও দিনই তাকে রেয়াত করেনি মানব সমাজ৷ ভিনদেশে মাথা নেড়া করে ঢিল ছুঁড়ে মারা হয়েছে৷ ডাইনি বলে পেটান হয়েছে৷ এ বার তো শ্লীলতাহানি৷ অভিযুক্তের নিরাপত্তা দিতে পারে না প্রশাসন৷ অথচ নিরাপত্তা তারা দিতে পারে অন্যদের৷ যারা তাদের হাতের মুঠোয়৷ ক্ষমতাধর নারী হিসাবে ভাসিয়ে দেওয়া হয় তার ছবি৷— সে কথা সত্যি বটে৷ ক্ষমতা তো আমাকেও দেওয়া হয়েছিল পুরুষের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য৷ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল দশ হাত৷ বিষয়টা প্রায় একই, বলে অনেকে৷ তবে কি জানিস, যুদ্ধটা আমি করেছিলাম আমার মতো করেই৷ আমাকে কেউ পুতুল করে রাখেনি৷ কিন্তু মর্ত্যের নারী কী ভাবে মুক্তি পাবে?—জানি না মা৷ মর্ত্যে সকলে বলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতাই মূল৷ আমি জানি না, ঝাঁপি থাকাটাই সব না৷ বোধ প্রয়োজন৷ আশু প্রয়োজন৷