%%sitename%%

বাঁকা চোখে

ইতি করোনা

By admin

July 30, 2020

অনিমা বসু

সবে মাথাটা গলিয়ে ছিলাম, বডিটা পুরো ঢোকাতে পারলেই কেল্লা ফতে! ব্যস–এর মধ্যেই নতুন চক্রান্ত! আবার  লকডাউনের ঘোষণা। আরে বাবা, আবার লকডাউন না করলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হত শুনি! রাজ্যে তো বেকার গুনে শেষ করা যায় না। ঘুরে বেড়াচ্ছে আর  গাল দিয়ে মন্ত্রীদের বাপ চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করছে।  নতুন ঘোষণা না হলে লেন্ডি-গেন্ডি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য রেডি হয়েই ছিলাম। অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করে শান দেওয়াও ছিল। শুধু মার্কেটে ডেলিভারির অপেক্ষা। কিছু সাধারণ গরিবগুর্বোও মারা যেত বটে। সে  কি আর করা যাবে! কোল্যাটারাল ড্যামেজ বলে  যাকে। ফালতু লকডাউনের চক্রান্তটা করে সব গুবলেট করে দিলে। তার ওপরে পাবলিককে মাস্ক পরা, হাত ধোয়ানোর জন্য সবাই মাঠে নেমে পড়েছে। রাস্তায় আবার মুখে মাস্ক না থাকলে পুলিশ হেবি পেদাচ্ছে। আবার ফাইনও করছে।আবার কিছু লোক তো সক্কাল থেকে ফেসবুকে বসে পরছে আমার শ্রাদ্ধ করতে। মাস্ক পড়া নিয়ে জ্ঞান থেকে আমি ছোয়ার আগেই কি কি ওষুধ রাখতে হবে তার ফিরিস্তিও ইউ টিউব, ফেসবুকেই দিয়ে দিচ্ছেন না-ডাক্তার থেকে ডাক্তাররা। এটা বাড়াবাড়ি না! ষড়যন্ত্র না, আমার বিরুদ্ধে।কেসটা আমাদের হাতে থাকলে, না-থাকতো এত শিক্ষিত বেকার, না হতো ধর্ণা, মিটিং-মিছিল, সব ভ্যানিশ।  হা-ঘরে বেকার আর ওই এসি ঘরে থাকা দামি দামি মানুষগুলো, তাদের মধ্যে আবার কিছু বুদ্ধিজীবী নাকি বলে তাও আছে। এই সবগুলো এমনিতেই ডিপ্রেশনে ভুগছিল। ডিপ্রেশন একটা আধুনিক অসুখ। এখন হেব্বি ডিমান্ড এই রোগটার।ডিপ্রেশন আর করোনার ককটেল । ভাবুন একবার। কি ডেডলি কম্বিনেশন । পুরো জমে ক্ষীর হয়ে যেত দাদা। তা না উল্টে লকডাউন এর চক্করে পরে, আমাদের চ্যালা চামুন্ডারা সব ঝিমিয়ে গেল। দিব্যি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল সংক্রমণ আর মৃত্যু ।

অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করে শান দেওয়াও ছিল। শুধু মার্কেটে ডেলিভারির অপেক্ষা। কিছু সাধারণ গরিবগুর্বোও মারা যেত বটে। সে কি আর করা যাবে! কোল্যাটারাল ড্যামেজ বলে যাকে। ফালতু লকডাউনের চক্রান্তটা করে সব গুবলেট করে দিলে। তার ওপরে পাবলিককে মাস্ক পরা, হাত ধোয়ানোর জন্য সবাই মাঠে নেমে পড়েছে। রাস্তায় আবার মুখে মাস্ক না থাকলে পুলিশ হেবি পেদাচ্ছে। আবার ফাইনও করছে।

সারা পৃথিবী জুড়ে একটার পর একটা দেশে ঘুরে ধুম মাচালে, ধুম মাচালে ডান্স করছিলাম। কি রেপুটেশন মাইরি, কলার উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম, বেশ একটা কুলীন কুলীন ভাব । তা না  দিল প্রেস্টিজে গ্যামাক্সিন ঢেলে। ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু এর পর এরকম বনেদি মানে খানদানি জিনিস আর কেউ দেকেচে! একেবারে ভগবান বিষ্ণুর অবতার। যুগে যুগে থুরি শতাব্দীতে শতাব্দীতে আমরা এই নানা রূপে অবতীর্ণ হয়ে থাকি। এবারে একেবারে হিরণ্যকশিপু অবতারে নেমেছি। তো পাবলিক বুঝলো না। দিল সব ব্যাটা সায়েন্টিস্টকে আমাদের পেছনে লেলিয়ে। এখন ভ্যাকসিন, না ট্যাকসিন -তাই তৈরি করার জন্য সব হুটোপাটি শুরু করে দিয়েছে।  যাই হোক। যে কতা বলছিলাম, আমাদের একটা সুবিধা কি বলুন তো, আপনাদের যেমন পরিবার পরিকল্পনা, জন্মনিয়ন্ত্রণ, এই সমস্ত গণ্ডগোলের কেস  আছে, আমাদের মধ্যে আবার সে সব নেই । আমরা খুব কষ্ট সহিষ্ণু আর উদার জাত। জন্মনিয়ন্ত্রণের  পরোয়া করিনা। ভগবানের দান দাদা, যত পারি বাড়িয়ে যাই। কোনরকমে একটা ওয়ে ইন মানে ঢোকার রাস্তা পেলেই হল। সড়াৎ করে সেঁধিয়ে যাই আপনাদের ভেতরে। একেবারে সোজা ফুসফুসে গিয়ে ল্যান্ড করি। কি সুন্দর থাকার জায়গা  মাইরি। ওটা আমাদের হেব্বি পছন্দ। তার পরে হাঁকাতে থাকি একটার পর একটা গোল। গোলকিপার যতক্ষণে মাঠে নামে ততক্ষণে গোলপোস্টটাই হাওয়া। একেবারে খুঁটিশুদ্ধ  ।তারপরে এম্বুলেন্স, অক্সিজেন, ইন্ট্রাভেনাস  ইনজেকশন, যতই চার্জ করো না কেন, স্পিকটি নট। আমি করোনা। এসেই যখন পড়েছি তখন দু-দশ কোটি না নিয়ে যাব না।