প্রপিতামহ !!! মানে ঠাকুরদার বাবা!! ছোটবেলা থেকেই এটা উচ্চারণ করতে গিয়ে জিভে গিঁট পড়ে যেত। এদিকে কিছু করারও নেই, তাঁর জন্য আমাদের পরিবারের এত প্রভাব আমাদের পাড়ায়। আমার প্রপিতামহের নাম কবি গুরু , আরে কি সব ভাবছেন আপনারা? কবি গুরু, কবিগুরু নয়, মানে ওনার নাম ছিল গুরুপদ গুছাইত আর উনি ছড়া লিখতেন মাঝে মাঝে, তাই পাড়ার লোক ওনাকে কবি গুরু বলতো। আমাদের এই যে বিরাট বাড়ি, এটা ও উনি বানিয়ে গেছেন। শান্তিনিকেতন!! শান্তিনিকেতনে কিন্তু শান্তিতে দুদণ্ড থাকার জো ছিল না একদম। শরিকি বিবাদে আমাদের সবাইকে পাড়ার লোক আদর করে শান্তির ছেলে বলে ডাকতো।
আমাদের বাড়িতে একটা জিনিস কিন্তু খুব বিখ্যাত ছিল – ঝামেলা । বছরে একবার করে সাতদিন ভারতের যত ঝা পদবী ওয়ালা লোক আছেন তাঁরা এসে যোগদান করেন এবং তাদের থেকে এটি বিখ্যাত। কিন্তু এইবার লাগলো সত্যিকারের অশান্তি। অনেকদিন ধরেই সমস্যা চলছে টুকটাক, খাওয়ার দোকান, চায়ের দোকান নিয়ে সমস্যা, যাঁরা গান গাইতেন তাদের নিয়ে সমস্যা, এসব চলছিল। এইবার ঠাকুরদা খুব রাগ করে বললেন এবার থেকে ঝামেলার মাঠে পাঁচিল দেবো আর যাকে তাকে ঢুকতে দেবো না, বুড়ো বয়সে এতো ঝঞ্ঝাট সহ্য করা যায় না। যে কথা সেই কাজ- দিল্লি থেকে পারমিশন করে আনা ,হেড মাস্টারমশাইকে বলা, মিস্ত্রি ডেকে কাজ শুরু হলো শুভদিনে। ঠাকুরদা খুব খুশি, এতদিন পরে একটা কাজের মতো কাজ করতে পেরে ।
হঠাৎ একদিন পাঁচ-সাতজন এসে হাজির। ঠাকুরদাকে ডাকাডাকি করে একশেষ। সবে ঠাকুর্দা চাড্ডি ভাত খেয়ে দুটো টুইট করে একটু ঘুমাতে যাবেন, আর যত্তসব!! মনে মনে গালি দিয়ে ঠাকুর্দা বাইরে বেরিয়েই থ- এটা কি ? পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড শোভিত এরা কারা? একটা গুণ্ডা টাইপ লোক বাতাসা খেতে খেতে বললো ঠাকুরদা- আমরা কবি গুরু স্মৃতি রক্ষা কমিটির লোক, আপনি এসব কি করছেন?? কলকাতায় করতে পারবেন বা যাদবপুরে ?? খুবই লজ্জার ব্যাপার! এসব ছাড়ুন তো , পাড়ার ছেলেরা একটু পার্টিসিপেট করবে না? কিছু মনে করবেন না, বৃহত্তর জনগণের স্বার্থে আমরা কালকে এসে এই মানবাধিকার বিরোধী পাঁচিল একটু বেশি করে ভেঙে দেবো । ঠাকুর্দা রাগে তোতলাতে তোতলাতে বললেন আআআম্মার দিদিদিদ্দিল্লিতে বলা আছে, সই করে কাগজ করিয়েছি- ভাঙবে বললেই হলো। আমি চেয়ারম্যান, পুলিশ, মিলিটারি ডাকবো।বিনীত হাসিতে গাল ভরিয়ে ভদ্রলোক উত্তর দিলেন, চিন্তা করবেন না ঠাকুরদা, কালকের পাঁচিল ভাঙ্গা অনুষ্ঠানে তো ওনারাই চিফ গেস্ট!