%%sitename%%

ক্রাইম ডাইরি

কেন প্রাণ হারাতে হল বিষ্ণুকে

By admin

August 02, 2020

প্রথম পর্ব

ইন্দ্রনীল বসু

সিআইএসএফের সকালের শিফটের কনস্টেবলকে বিস্তর খোঁজাখুজি, উকিঝুঁকি, এমনকি বিষ্ণু-বিষ্ণু নামে হাঁক পেড়েও কোনও হদিশই পেলেন না তাঁর সহকর্মীরা বিষ্ণু দাসের। নাইট ডিউটি সেরে তাঁকেই তো দায়িত্ব হস্তান্তর করার কথা ছিল বিষ্ণুর। কিন্তু কোথায় তিনি!এরপর খোঁজ করতে করতে বিষ্ণু দাসের সহকর্মীরা পৌঁছালেন খিদিরপুর ডকের ৩ নম্বর বিটের ওয়্যারহাউসের শেডে। শেডটি দেখে প্রথমে মনে হলে, আশপাশেই আছেন কোথাও তিনি। কারণ জুতো, ব্যাগ, অন্যান্য জিনিসপত্র– সবই এদিক-ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে। এমনকি একপাশে রাখা সাইকেলটিও। সবই যখন জায়গায়, তা হলে বিষ্ণু ফিরে আসবে নিশ্চয়ই। জরুরি দরকারে হঠাৎ-ই হয়তো কোথাও গিয়েছে সে। এই সব ভাবতে ভাবতেই সকাল গড়িয়ে বিকেল হল। তখনও হদিশ নেই বিষ্ণু দাসের।

নাহ্’ আর কালবিলম্ব করেননি তাঁর সহকর্মীরা। উদ্বিগ্ন সহকর্মীরা আর থাকতে না-পেরে বন্দরের আশপাশ থেকে শুরু করে কোয়ার্টার চত্বর— সব দিকে তল্লাশি চালাল। কিন্তু বিষ্ণু দাসের কোনও চিহ্নই খুঁজে পেল না তাঁরা। একটা জলজ্যান্ত মানুষ এভাবে কোথায় উধাও হয়ে গেল, তা-ই সবাইকে ভাবাতে শুরু করেছিল তখন।চিরুনি তল্লাশি চালাতে চালাতে গঙ্গা লাগোয়া ওয়্যারহাউসের কাছে পৌঁছান তাঁরা, সেখানে মেলে বিষ্ণুর জিনিসপত্র। প্রমাদ গুণলেন তাঁরা, সর্বনাশ! বিষ্ণু কী তা হলে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে! আবার কারও ধারণা হল, আত্মহত্যা তিনি করতে পারেন না, নির্ঘাৎ দুর্ঘটনাবশত নদীতে পড়ে গিয়েছেন।

এর পরই চালানো হল নদীতে তল্লাশি। টানা ৭২ ঘণ্টা। এবার প্রচেষ্টা বিফল হয়নি। হ্যাঁ, ৭২ ঘণ্টা পর নদী থেকে উদ্ধার করা হল বিষ্ণুকে। এটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, ততক্ষণে শেষ হয়েছে বিষ্ণু-উপাখ্যান। ডেকে পাঠানো হল পরিবারের সদস্যদের। মৃতদেহ দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন পরিজনরা। এ যে তাঁদের বিষ্ণুই! সেই আলিপুরদূয়ার থেকে এখানে এসেছিল কর্মসূত্রে।

স্বাভাবিক ভাবেই ময়নাতদন্তে পাঠানো হয় বছর ৪০-এর বিষ্ণু দাসের দেহ। অটোপসি সার্জেন যা জানালেন, তাতে সকলেই তাজ্জব ততক্ষণে। ভুরু যুগল যে সঙ্কুচিত হয়েছে, তা-ও সোজা হতে ভুলে গিয়েছে। রিপোর্টে জানা গেল, আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনাবশত পড়ে যাওয়া— এসব তত্ত্বই ভুল। আসলে হত্যার পর জলে ফেলা হয় বিষ্ণুর মৃতদেহ। হ্যাঁ, হত্যা। শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে। তাঁর মৃত্যুকে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করার জন্য ফেলে দেওয়া হয় জলে।

সময়কাল, ২০১৬-র জানুয়ারি মাস। বছরের শুরুতে একটি পরিবার হারাল তাঁর সন্তান-স্বামী-বাবাকে। প্রশ্ন একটাই খুনি কে? কেনই বা খুন করা হল তাঁকে। কার সঙ্গে এমন শত্রুতা থাকতে পারে বিষ্ণুর, জীবন দিয়ে যাঁর মূল্য চোকাতে হল। দক্ষিণ বন্দর থানায় খুনের মামলা রুজু হল। শুরু হল আর এক উপাখ্যানের। বিষ্ণুর খুনিদের সাজা দিতে হবে যে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী এই খুনের কিনারা করা গিয়েছিল?

চলবে…