%%sitename%%

ক্রাইম ডাইরি

কী ভাবে খুলল জট?

By admin

July 26, 2020

দ্বিতীয় পর্ব

ছ’বছর। সময়টা নেহাত কম নয়। এতদিন পর কেন এবং কী ভাবে ‘রি-ওপেন’ হল আরতি চক্রবর্তী হত্যা রহস্যের ফাইল?ঘটনা হল বছর খানেক আগে দিনহাটা থানায় বদলি হয়ে এসেছেন ইনস্পেক্টর সঞ্জয় দত্ত। লকডাউনে কাজের চাপ তুলনামূলক ভাবে কম। ফলে থানার কিনারা না -হওয়া কেসের ফাইল উল্টেপাল্টে দেখছিলেন তিনি। সেখানেই নজর আসে আরতি চক্রবর্তী হত্যার  ফাইলটি। বিশেষ করে কেস ডায়েরিতে উল্লেখ অপরাধের ধরণ পড়েই খটকা লাগে তাঁর।ফ্ল্যাশব্যাকে তাঁর চোখের সামনে ফুটে ওঠে হুবহু একটি ঘটনা।

সালটা ২০১৮ সাল। ফেব্রুয়ারি মাস। সঞ্জয় বাবু তখন ধুপগুড়ি থানার দায়িত্বে। একদিন খবর পেলেন এক বৃদ্ধ দম্পতিকে খাওয়ারে সঙ্গে কিছু মিশিয়ে বাড়ি থেকে গয়না টাকা লুঠ করে পালিয়েছে তাঁদের কাজের লোক। কোনো রকমে যমের ঘর থেকে ফিরে আসেন বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী। কাজে ঢোকার সময় তাঁদের ওই মহিলা জানিয়েছিল, ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রিতা সে। নিয়মিত ভাই ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তা উপর অত্যাচার করেন। মহিলার কথার জালে ফেঁসে তাঁকে কাজে রেখে দেন বৃদ্ধ দম্পতি। কথাবার্তার জালে তাঁদের এতটাই ভুলিয়ে দিয়েছিল যে, মহিলা নিজের বাড়ির যে ঠিকানা দিয়েছিল তা আসল না নকল যাচাই করেও দেখেননি ওই পরিবার। তদন্তকারীরা দেখেন, যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল সেটি জাল। এমনকী, দম্পতির কাছে ওই লুটেরা মহিলার কোনো ছবিও ছিল না। কিন্তু অপরাধ তদন্তে প্রচলিত আছে, নিঁখুত অপরাধ বলে কিছু হয় না। অপরাধী কোনো না কোনো সূত্র ফেলে যায়। ধুপগুড়ির মামলায় সেই ভূলটা করেছিল পূর্নিমা ওরফে মঞ্জু। ১৪ দিন ওই বাড়িতে কাজ করেছিল সে। তারমধ্যেই একটি বিয়ে বাড়িতে নিমন্ত্রণ  ছিল বৃদ্ধ দম্পতির।

কাজের মহিলাকে নিজেদের সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। তাতেই আসে সূত্র। সেই বিয়ে বাড়ির ছবি ঘেঁটে মহিলার একটি ছবি হাতে আসে পুলিশের। ছবি হাতে এলেও তাঁর নাগাল পাওয়া ছিল জরুরি। কারণ ততখনে  পগা্রপার হয়ে গিয়েছিল অভিযুক্ত। ফলে জেলার বিভিন্ন থানার অফিসারদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সেই ছবিটি পোস্ট করেন সঞ্জয় বাবু। তা দেখেই এক মহিলা অফিসার জানান, ২০০৮ সালে তিনি দার্জিলিং সদর থানার থাকাকালীন একই ঘটনা ঘটেছিল। সেই সূত্র পেয়ে ওই থানার বর্তমান অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ধুপগুড়ি থানার পুলিশ। ঘটনার বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে সেই মামলার অভিযুক্ত মহিলার একটি ছবিও হাতে আসে তদন্তকারীদের। ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১০ বছরের ফারাক। তবে দুটি ছবি মধ্যে মিল পাওয়া যায় অনেকটাই। ধুপগুড়ির ওই বাড়িতে লুঠের পর ততক্ষণে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিল পূর্নিমা। কিন্তু আরও কিছু সূত্রকে কাজে লাগিয়ে দিন দু’য়েকের মধ্যেই বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ফেলে ধুপগুড়ি থানার পুলিশ। পরে জামিনে ছাড়া পায় সে।

ওই মামলায় সে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তদন্তকারীর জানতে পেরেছিলেন, ১৯৯৯ সালে গ্যাংটক থানায় একটি খুনের মামলায় সাত বছর জেল খাটে সে। সেখানেও খাওয়ার সঙ্গে নেশার ওষুধ মিশিয়ে খুন করে লুঠের তথ্য সামনে এসেছিল।ফলে দিনহাটার এই মামলাতেও যে ওই মহিলার হাত রয়েছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি দুঁদে অফিসার সঞ্জয় দত্তের। কিন্তু অপরাধ তদন্তে শুধু অনুমান নয়, প্রয়োজন পাক্কা প্রমাণও। আরতির খুনের পিছনে যে পূর্নিমার হাত রয়েছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু আরতি দেবীর স্বামীরও ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তাঁদের ছেলে-সহ আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। পূর্নিমার ছবি দেখানো হলে এক আত্মীয়া  শনাক্ত করেন, আরতি-সুবোধদের বাড়িতে কাজে ঢুকেছিল এই মহিলাই। এরপরই আদালতে মামলা পূনরায় খোলার জন্য আবেদন জানায় দিনহাটা থানার পুলিশ। কয়েকদিন নজরদারি চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

দুই বোনের মধ্যে ছোটো পূর্ণিমা। বিবাহিতা। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। পুলিশের বক্তব্য, দু’দশকের বেশি সময় ধরে একই কায়দায় অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছিল ওই মহিলা। মূলত বয়স্ক একাকী দম্পতি বাড়িকেই টার্গেট করত। কখনও ধরা পড়েছে। জেল খেটেছে। জেল থেকে বেরিয়ে আবার সেই একই কাজ চালিয়ে গিয়েছে। চাতুরিকে সঙ্গী করে একের পর এক অপরাধ চালিয়ে গিয়েছে এই ‘কুইন অফ ক্রাইম’।