এক নজরে

পুরনো বন্ধুর হাত ধরেই ফের মুখ্যমন্ত্রী পল্টু কুমার

By admin

August 12, 2022

তারপর থেকে বিহারের রাজনীতিতে নীতীশ কুমার ‘পল্টুকুমার’ বা পাল্টিবাজ। নিজের প্রয়োজনে নীতীশ কুমার কখনও এনডিএ-র সঙ্গ ছাড়েন, আবার কখনও মহাজোট ছাড়েন। কিন্তু প্রত্যেকবারেই তাঁর জোট ছাড়ার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। ২০১৭-তে আরজেডির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে মহাজোট ছেড়েছিলেন। কিন্তু বিহারের মুখ্যমন্ত্রী রয়ে গিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে লালু যাদব প্রথম পশুখাদ্য মামলায় জেলে যাওয়ার পরেও ২০১৫-তে তাঁর দলের সঙ্গেই জোট করেছিলেন নীতীশ। সেটাও যেমন ক্ষমতায় থাকতে, আবার একই কারণেই তিনি ২০১৭-তে জোট ছেড়ে বেরিয়ে বিজেপির হাত ধরেছিলেন। ফের পাঁচ বছর পরে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে ফের আরজেডির হাত ধরেই মুখ্যমন্ত্রী হলেন।

উল্লেখ্য, নীতীশ কুমার দুদিন আগে পর্যন্ত জেডিইউ-বিজেপি জোটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এই জোটই ২০১৯ সালেও বিহারেনির্বাচন জিতেছিল। এখন সেই নীতীশ কুমার ফের তাঁর পুরোনো বন্ধু লালু যাদবের আরজেডি সমর্থিত জোটের মুখ্যমন্ত্রী। নতুন সরকারে তাঁর উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন লালু পুত্র তেজস্বী যাদব। বলা যায় এটি ২০১৫ সালের আরজেডি-জেডিইউ জোটের নতুন সংস্করণ। এবারও জোট শরিকদের মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস।

বিহারের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে বিহারের আটবারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশের জোটে যোগ আর জোটের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটেছে নদীর জোয়ার ভাঁটার মতো। প্রসঙ্গত, নীতিশ কুমার ও লালু প্রসাদ যাদবের দল ২০১৫ সালে একসঙ্গে লড়াই করে বিহারের ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু বেশিদিন তাঁরা একসঙ্গে থাকতে পারেনি। মাত্র দু’বছর পরেই নীতিশ-লালু প্রসাদের সঙ্গ ছেড়ে বিজেপির হাত ধরেছিলেন। পাশাপাশি একথাও বলতে হয় নীতিশ কুমারের হাত ধরেই বিহারে বিজেপি উজ্জীবিত হয়েছিল। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে নীতিশ ও বিজেপি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটে লড়লেও কিন্তু সেবছর ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ট দল হয় রাষ্ট্রীয় জনতা দল। সেই রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতৃত্বে ছিলেন মাত্র ৩২ বছরের তেজস্বী যাদব। তাঁরা পেয়েছিলেন ৭৫টি আসন। একটি আসন কম পেয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিল বিজেপি আর ৪৩ আসন পেয়ে তৃতীয় স্থান পায় নীতিশ কুমারের জেডিইউ। কংগ্রেসের দখলে ছিল ১৯টি আসন।

২০১৭ সাল থেকে নীতিশ বারবার পালটি খেয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক চরিত্র নিয়ে তেজস্বী যাদব নীতিশ কুমারকে “গিরগিটির মতো” বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু নীতিশ পালটি খেতে শুরু করেছিলেন এরও বহু আগে। ১৯৯৬ সালে নীতিশ জর্জ ফার্নান্ডেজের সঙ্গে সমতা পার্টি গঠন করেন। কিন্তু দু’বছর পরেই নীতীশ সমতা পার্টি ছেড়ে বিজেপিতে ফেরত আসেন। কেবল তাই নয়, তিনি অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীও হন।

এদিকে শরদ যাদবের সঙ্গেলালু প্রসাদ যাদবের বিচ্ছেদ ঘটলে ২০০৩ সালে লালু প্রসাদ আরজেডি গঠন করেন। এর কয়েক বছর পরনীতীশ কুমার তাঁরপুরনো দল সমতা পার্টিকে জনতা দলের সঙ্গে মিলিয়ে নতুন দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। সেই নতুন জোটের নাম হয় জনতা দল (ইউনাইটেড)।

২০১৪ সালের আগে থেকেই নীতিশ কুমার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছিলেন। কিন্তু বিজেপি সেই পদের জন্য নীতিশের পরিবর্তে নরেন্দ্র মোদীকে মনোনীত করায় নীতিশক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি ১৭ বছরের জোটের পর এনডিএ-র সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন এবং ২০১৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ফিরে আসেন। কিন্তু ফের তিনি ২০১৭ সালে আরজেডি-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মহাজোট থেকে বেরিয়ে যান। ফের বিজেপি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং জেডিইউ বিধায়কদের তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে- এই অভিযোগে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন।