এক নজরে

নাটকীয় জীবন আর রহস্যময় মৃত্যুর নাম ক্লিওপেট্রা

By admin

November 11, 2021

তপন মল্লিক চৌধুরী

ক্লিওপেট্রার কালে যেমন প্রায় সব বাঘা পুরুষ তাঁর সৌন্দর্যের মায়াজালে আটকা পরেছিলেন, তারপরও শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত সৌন্দর্যপ্রেমীদের উপাসনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গিয়েছেন তিনি। ইতিহাস থেকে নাটকে তাঁর উপস্থিতি। বিশ্বখ্যাত অনেক সাহিত্যিক তাঁকে নিয়ে কালজয়ী উপাখ্যান রচনা করেছেন। সেই তালিকায় সেক্সপিয়ার, জর্জ বার্নড শ, হেনরি রাইডার হ্যাঁগারড তো আছেনই তেমনি আছেন ড্রাইডেন প্লুটার্ক, ড্যানিয়েলও। এঁরা প্রায় সবাই চেষ্টা করেছেন ক্লিওপেট্রার ঐতিহাসিক অবস্থান যথাযথ রাখার। দান্তের ভাষ্য অনুযায়ী, ক্লিওপেট্রা লালসার শাস্তি হিসেবে নরকের দ্বিতীয় স্তরে দাউ দাউ করে পুড়ছেন। হ্যালিওয়েল তাকে ‘দ্য উইকেডেস্ট উইম্যান ইন দ্য হিস্ট্রি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। শেক্সপিয়ার এন্টোনিয় ও ক্লিওপেট্রা উপন্যাসে ক্লিওপেট্রার রূপের পাশাপাশি তুলে ধরতে চেয়েছেন এন্টোনিয়ও ও ক্লিওপেট্রার রোম্যানটিসিজম। জর্জ বার্নড শ-ও সিজার ক্লিওপেট্রা উপন্যাসে সিজার এবং ক্লিওপেট্রার রোম্যানটিসিসম তুলে ধরেছেন। আবার হেনরি রাইডার হ্যাঁগারড তাঁর উপন্যাস ক্লিওপেট্রা তে তুলে ধরেছেন ক্লিওপেট্রার ব্যক্তিত্ব, উচ্চাভিলাষ ও কিছুটা নারী সুলভ অসহায়ত্ব। তবে ক্লিওপেট্রা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি কথা লিখেছেন রোমান লেখক প্লুটার্ক। তার কথার ভিত্তিতেই কবি, সাহিত্যিক, চিত্রকর ক্লিওপেট্রাকে এঁকেছেন, তার সম্পর্কে লিখেছেন। ক্লিওপেট্রার সঙ্গে জুলিয়াস সিজার এবং মার্ক অ্যান্টনির প্রেমের গল্প নিয়ে একাধিক সিনেমাও তৈরি হয়েছে।

রোমান রাজনীতির অত্যন্ত সংকটজনক অধ্যায়ে ক্লিওপেট্রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও প্রেম আর মৃত্যু যেন এই নারীর জীবনে একাকার হয়েছিল। ক্লিওপেট্রা ভালোবাসার উদ্দাম হাওয়া যেমন বইয়ে দিতে পারতেন, প্রয়োজনে হয়ে উঠতেন মারাত্মক হিংস্র। পথের কাঁটা মনে করলে যে কাউকে নির্মমভাবে সরিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করতেন না। তবে তাঁর জীবন যতটা নাটকীয় তার থেকে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে তার মৃত্যু। যা আজও রহস্যময়। দশ বছর আগে মার্কিন লেখিকা স্ট্যাসি মেডেলিন শিফ ক্লিওপেট্রার সম্পূর্ণ জীবনী লিখেছেন। তাঁর বইতে অক্টিয়াম যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মার্ক অ্যান্টনি এবং ক্লিওপেট্রা দলবল নিয়ে আলেকজান্দ্রিয়ায় ফেরেন। এ বিষয়ে কারও মত, ক্লিওপেট্রা এবং মার্ক অ্যান্টনি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার কারও মত, মার্ক অ্যান্টনি রোমান সাম্রাজ্যে নিজের ক্ষমতা হারানোয় ক্লিওপেট্রা তাকে হত্যা করার জন্য নাটক সাজাতে গিয়ে এসব করিয়েছেন।

ক্লিওপেট্রার আত্মহত্যা করেছিলেন, অনেকে একথা বললেও; বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে এবং সেই সাপ মিশরীয় গোখরা। এর সপক্ষে যুক্তি হচ্ছে, ক্লিওপেট্রা যে দেবীর পুজো করতেন, মিশরীয় গোখরা ছিল তার প্রিয় সাপ। বিপক্ষের যুক্তি- গোখরা সাপ কমপক্ষে ৫ ফুট লম্বা হয় এবং বড়সড় আকৃতির হলে ৮ ফুটের কম কখনোই হয় না। যে সাপের কামড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলা হয়, সেই সাপটি ক্লিওপেট্রার ঘরে একটি খাবারের ঝুঁড়িতে লুকিয়ে ছিল। কিন্তু একটি ঝুঁড়ি গোখরা সাপ লুকিয়ে থাকার জন্য কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। এছাড়াও ছোট আকৃতির গোখরা সাপের কামড়ে সরাসরি মৃত্যু হয় না। বরং চিকিৎসক ডাকার সময়-সুযোগ পাওয়া যায়।

মিশরের ইতিহাসবিদরা মনে করেন, একটি সাপ একসঙ্গে ক্লিওপেট্রা এবং তাঁর দুই দাসীকে কিভাবে মারতে পারে। অন্যদিকে ক্লিওপেট্রা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন এমনটা মানতে রাজি নন লেখিকা স্ট্যাসি মেডেলিন। প্রাচীন লেখক স্ট্রাবো আবার ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর কারণ অতিরিক্ত মদ এবং ভেষজ মিশ্রণের সঙ্গে বিষাক্ত ঔষধ পান করাকেই দায়ী করেন। তাই সত্যিটা কি সেটা অজানাই রয়ে গিয়েছে।