এক নজরে

পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজে

By admin

August 08, 2020

কলকাতা ব্যুরো: এবার ফেরার পালা।না, বাড়ি ফেরা নয়। ওরা ফিরতে চান নিজের নিজের কর্মক্ষেত্রে। কেউ যাবেন চেন্নাই, আবার কেউবা ত্রিবান্দম বা ব্যাঙ্গালোর, কটক। দেশের দিকে দিকে ছড়িয়ে যাবেন ওঁরা।

কিন্তু ফিরবেন কী করে? লকডাউন শুরু হওয়ার পরে অনেক দৌড়ঝাঁপ করে কেউবা সরকারি ব্যবস্থায়, আবার কেউ নিজের উদ্যোগে ঘরে ফিরেছিলেন। কেউবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্য নিয়ে ফেরেন ঘরে। তখন সঙ্গে ছিল এক রাস দুশ্চিন্তা। উৎকণ্ঠা ছিল সঙ্গী। পকেটে ছিল রোজগারের টাকা। রাজ্যের থেকে বেশি লোক শ্রমিক হিসেবে বাইরে যান মুর্শিদাবাদ থেকে। ফলে সেখানকার ঘরে ফেরাদেরই আবার টান এখন বেরোনোর।

ঘরে ফেরার পর সময় গিয়েছে। লক ডাউন থেকে দেশ আন লক হয়েছে। ওদেরও পকেট ফাঁকা হয়েছে। ঈদের পরবও শেষ। কিন্তু কাজ নেই ঘরে। আর যে টুকু কাজ মিলছে সেখানে টাকা কম।

ফলে যে কোনো ভাবে ফিরতে হবে কাজের জায়গায়। কেউ রাজমিস্ত্রি বা জোগাড়ে, আবার কেউ সোনার দোকান থেকে ভিন্ন শহরের ফুটপাথে চা বিক্রি করবেন। কিন্তু ফেরার পথেও বাধা। ট্রেন বন্ধ। বাসও স্বাভাবিক নয়। অতএব অনেকেই আবার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দরজায় ভিড় করছেন। এমন ৫০ জনকে নিয়ে শুক্রবার চেন্নাইয়ের দিকে যাত্রা শুরু করলো বাস।

কিন্তু কেন স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের সাহায্য চাওয়া?

মুর্শিদাবাদের এমন ঘরে ফেরা শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা, লকডাউনের মধ্যে যাঁরা সরকারি সাহায্য পাননি তাঁদের অবস্থা হয়েছিল দুর্বিষহ। তখন জেলা থেকে পুলিশের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাস পাঠানোয় ফিরতে খুব বেগ পেতে হয়নি। রাস্তায় ভিন রাজ্যের পুলিশও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বাস থাকাতেই হয়তো খুব সমস্যা করেনি। আর এখনতো কাজে ফিরতে সরকারেরও সাহায্য নেই। ফলে দল বেঁধে কাজের জায়গায় ফেরার জন্য ভরসা সে সংগঠনই।শুক্রবার মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থেকে এমন পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একটি বাস যাত্রা শুরু করলো চেন্নাইয়ের উদ্দ্যেশে। এই সব শ্রমিকদের লকডাউনে ঘরে ফেরাতে বাস পাঠিয়ে উদ্যোগ নেওয়া সিটিজেনস ফর সোশ্যাল জাস্টিসের সম্পাদক অরিন্দম দাস বলেন, সে সময় প্রায় দু’হাজার শ্রমিককে আমরাই গাড়ি পাঠিয়ে ফেরার ব্যাবস্থা করে ছিলাম। তখন জেলার ২৮ টি ব্লকের মধ্যে ১৪ টিতে শ্রমিকদের ফেরাতে বাস পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ প্রশাসনের সে সময় সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল।

এখন লকডাউন উঠে যাওয়ায় এঁদের ফেরানোর ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা উপলব্ধি করছেন সংগঠনের কর্তারা। তাঁরা বলছেন, লকডাউনে সব বাস বসেছিল। ফলে গাড়ি কিছুটা কম টাকায় পেতে সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখন লকডাউন উঠে যাওয়ায় গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া অল ইন্ডিয়া পারমিট বিহীন গাড়ি এখন ভিন রাজ্যে যাবে না। আর যে গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে তার ভাড়াও অনেক বেশি। ফলে সব মিলিয়ে শ্রমিকদের ফেরানো একটু সমস্যা। তারপরেও আপাতত এই সংগঠনে আটটি বাসের ব্যাবস্থা করেছে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরাতে। এবার অবশ্য শ্রমিকদের থেকেও ভাড়া বাবদ কিছু কিছু টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে।

ফলে আবার ঘর ছাড়ছেন শ্রমিকরা।

কিন্তু যে রাজ্যে করোনার অতিমারির মধ্যেও ১০০ দিনের কাজ ১০০ শতাংশ শেষ করে কেন্দ্রের পাঠানো সব টাকা দেওয়া হয় গেছে, সেখানে কেন শ্রমিকদের কাজের সন্ধানে ফের ঘর ছাড়তে হচ্ছে? উত্তর আপাতত নেই।

প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কী ভাবে ১০০ দিনের কাজ ১০০ শতাংশ শেষ করলো রাজ্য তা জেনে চমৎকৃত কেন্দ্রীয় সরকার। এত সফলতা কীভাবে তা দেখার জন্য লোক পাঠাচ্ছে দিল্লি। ফলে কেন্দ্র ‘সেই ফর্মুলা’ জানা-বোঝার আগেই মুর্শিদাবাদ কেন, গোটা রাজ্যের পরিযায়ীরাই হয়তো রিস্ক নিয়েই ফিরে যাবেন একটু বেশি পয়সার জন্য ভিন রাজ্যে।