এক নজরে

Farm Laws Repeal: ৩ বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা নরেন্দ্র মোদীর

By admin

November 19, 2021

কলকাতা ব্যুরো: কেন্দ্রের তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে একথা ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী এদিন তাঁর ভাষণে বলেন, কৃষি বাজেট পাঁচগুণ বেড়েছে। এই বাজেটে বছরে ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। কৃষি আইন প্রণয়নের যুক্তি হিসাবে তিনি বলেন, এই তিনটি আইনের লক্ষ্য ছিল কৃষকদের, বিশেষ করে ছোট কৃষকদের ক্ষমতা বাড়ানো। কৃষকদের স্বার্থেই আইনগুলি আমরা প্রয়োগের পরিকল্পনা করেছিলাম কিন্তু এক শ্রেণির কৃষকদের আমরা বোঝাতে পারিনি। তাই আমরা তিনটি কৃষি আইন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী সাংসদ অধিবেশনে সেগুলি বাতিল করার ব্যবস্থা করা হবে। শুক্রবার মোদী বিক্ষোভকারী কৃষকদের আন্দোলন প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান।

আন্দোলনকারী কৃষক নেতারা স্পষ্ট করেছেন, তাঁরা মূলত দু’টি দাবি নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। প্রথমত, বিতর্কিত এই কৃষি আইনগুলি বাতিল করতে হবে এবং এমএসপি অর্থাৎ সর্বনিম্ন সহায়ক মূল্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণার পর কৃষকদের তরফে জানানো হয়েছে, সরকার তাঁদের একটি দাবি মেনে নিয়েছে। এই মূহূর্তে সীমানা খালি করা বা প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সম্মিলিত কিষাণ মোর্চার বৈঠকে। তবে এটা নিজেদের বড় জয় বলে মনে করছেন তাঁরা ৷

এদিকে আইন প্রত্যাহারের ঘোষণার পরই মোদীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং। টুইটে তিনি লেখেন, “দারুণ খবর! গুরুনানক জয়ন্তীতে প্রতিটি পাঞ্জাবির দাবি মেনে নেওয়া এবং তিনটি কালো আইন বাতিল করার জন্য মোদীজিকে ধন্যবাদ। আমি নিশ্চিত কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে কাজ করে যাবে!

রাহুল গান্ধী এর আগে সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছিলেন যে কেন্দ্রকে এই আইন প্রত্যাহার করতেই হবে। সেই কথাই মনে করিয়ে তিনি টুইটে লিখেছেন, দেশের অন্নদাতারা সত্যাগ্রহ করে অহংকারের মাথা নত করে দিয়েছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই জয়ের জন্য অভিনন্দন ! জয় হিন্দ, জয় হিন্দের কৃষক !

তবে এই সিদ্ধান্তে কংগ্রেসের তরফে সামগ্রিকভাবে খানিক কটাক্ষের সুর শোনা গিয়েছে। আসন্ন উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের জন্যই মোদীর এই পদক্ষেপ বলে খোঁচা শোনা গেলো প্রবীণদের থেকে। পি চিদাম্বরম টুইটে লিখেছেন, যোগী রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনের ভয়েই এই ঘোষণা ৷

নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে একই কথা লিখেছেন কপিল সিব্বালও। তিনটি খামার আইন প্রত্যাহার করা হবে। স্বাগত পদক্ষেপ। ইউপি নির্বাচনের কারণেই জ্ঞান ফিরেছে। হারানো জীবন বাঁচানো যেত !

টুইটে কৃষকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে লেখেন, বিজেপি যে নিষ্ঠুর ব্যবহার কৃষকদের সঙ্গে করেছে, তারপরও তাঁরা নিরলসভাবে লড়াই করেছেন। লড়াইয়ে আপনজনদের হারিয়েছেন। তাঁদের জন্য আমার সমবেদনা রইলো। এটি আপনাদের জয় !

সমস্ত কৃষদের সাহসী ও হার না মানা লড়াকু মনোভাবের জন্য টুইট করে কুর্ণিশ জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তিনি ট্যুইটে লেখেন, ‘আমাদের কৃষকদের শক্তি আরও দৃঢ় হল! তাঁদের দীর্ঘ এবং কঠিন সংগ্রাম, তাঁদের মনোবল সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই বিজেপিকে তার আসল জায়গা দেখিয়ে দিয়েছে।’

বিভিন্ন রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে হার নিশ্চিত বুঝতে পেরেই, কৃষি আইন প্রত্যাহার করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রকে তুলোধোনা করে একথাই বললেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা ৷ শুক্রবার মোদীর ঘোষণার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, সরকার বুঝতে পেরেছে যে, এ দেশে কৃষকদের থেকে কেউ বড় নয় ৷ এই আইন নিয়ে বিক্ষোভকে ঘিরে কেন কৃষকদের উপর পুলিশের লাঠি চললো, কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হল সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রিয়াঙ্কা ৷

পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসও প্রথম থেকেই কৃষকদের পাশে থেকে এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে। কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত নবান্নে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। আর এদিন কৃষক আইন প্রত্যাহারের পর শুধু তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নয়। একাধিক প্রথম সারির নেতারাও নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন।

তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় বলেন, এই আইন প্রত্যাহার আসলে দেশের গণতন্ত্রের জয়। দিল্লির সীমানায় গত বছর থেকে আন্দেলন চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। বিজেপি সেই আন্দোলন ভাঙার অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারে নি। এটাই গণতান্ত্রিক শক্তি।

এরপরই বিজেপির উদ্দেশে খোঁচা দিয়ে সৌগত রায় বলেন, সামনে পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচনে ভরাডুবির ভয়েই বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করলেন মোদী। সাংসদের অধিবেশনে বিক্ষোভ এড়াতেই আগেভাগে এই ঘোষণা করা হলো।

একই সুর শোনা গিয়েছে তৃণমূলের অপর সাংসদ সুখেন্দশেখর রায়ের গলাতেও। তিনিও মনে করেন নির্বাচনের চাপেই বিজেপির এই পিছু হঠা। সুখেন্দুশেখর বলেছেন, আসন্ন পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের কথা ভেবেই এই সিন্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি হারতে চলেছে তা বুঝতে পেরেই এই সিদ্ধান্ত। দেরিতে হলেও বোধহয়।

মোদীর ঘোষণার পরই কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়েই একাধিক টুইট করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। প্রথম টুইটেই তিনি খোঁচা দিয়েছেন তিনি লিখেছেন, ‘অহংকারের হার। অহঙ্কারের হার, অতিরিক্ত গর্ব থেকে ভূপতিত।’

সদ্য বিজেপি থেকে দলবদল করে তৃণমূলে আসা বাবুল সুপ্রিয় শুক্রবার ত্রিপুরা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, দেশের স্বার্থে নিঃসন্দেহে এটা কৃষকদের জিত। আইনগুলো দরকার ছিল কি না? তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে এর সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক আছে কি না? তা জানা নেই। কৃষকরা আমাদের দেশের স্তম্ভ। তাদের আন্দোলন ফলপ্রসূ হয়েছে। এতেই আমি আনন্দিত।

কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান জানান, নরেন্দ্র মোদী জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে আবার একটা নতুন চাল চেলেছেন। এতে তাঁর অনুতাপের কোনও বিষয় নেই। তিনি বিল প্রত্যাহার করেছেন। এটা কৃষকদের জয়। যে সমস্ত কৃষক নিজেদের  আত্মবলিদান দিয়েছেন, বহু মা বোনেরা তাঁদের সন্তানকে হারিয়েছেন, স্বামী হারিয়েছেন, নিজেরা অত্যাচারিত হয়েছেন আজ তাঁদের এই ত্যাগের বিনিময়েই জয় এসেছে।

কৃষকদের লড়াইয়ে সমর্থন জানিয়ে এদিন টুইট করেছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতারাও।

তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন “ঐতিহাসিক লড়াই, ঐতিহাসিক জয়”। একটানা একবছর কৃষক আন্দোলনের চাপে অনিচ্ছুক, কৃষক বিরোধী নরেন্দ্র মোদী সরকার বাধ্য হলো তিনটি কৃষক বিরোধী কৃষি আইন বাতিল করতে। সমস্ত আন্দোলনকারী কৃষকদের অভিনন্দন।

পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলনরত কৃষকদের মধ্যে যারা মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং এই আন্দোলন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। এটা গণতন্ত্রের জয়।