এক নজরে

ইনসাফের লাল ঢেউ কি শুন্য ভোটবাক্স ভরাতে পারবে

By admin

September 22, 2022

একুশের নির্বাচনে বাংলার বিধানসভা থেকে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাওয়ার পর শূন্য থেকে ফিরে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে সিপিএম। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বামেদের ব্রিগেড সমাবেশ আক্ষরিক অর্থেই ‘দূরবীন দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না’ চালু এই প্রবাদটিকে মিথ্যে প্রমান করেছিল। গত লোকসভা ভোটের আগে, ৩ ফেব্রুয়ারিও বামেদের ব্রিগেডে মানুষের সমাগম দেখে বিরোধীরা চিন্তায় পড়েছিল। যদিও ভোটের ফলাফলে কার্যত ফাঁকা থলি হাতে দাঁড়ায় বামেরা। কিন্তু উপনির্বাচন ও পুর-নির্বাচনে ‘নো-পাত্তা’ সিপিএম ঘুরে দাঁড়ানো রাস্তার খোঁজ পায়। যে ঘুরে দাঁড়ানো একেবারে অনায়াস নয়। এই সময়ে সিপিএম দলের মধ্যে তরুণদের একটা বড়সড় সমাবেশ ঘটাতে পেরেছে। দলের নেতৃত্বে বা নীতিনির্ধারণেও তরুণদের ঠাঁই করে দিয়েছে। গত বিধানসভা ও পুরনির্বাচনে বেশিরভাগ আসনে তরুণদের প্রার্থী করা হয়েছিল। সিপিএমের তরুণরা সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি রাজপথেও ব্যাপক সক্রিয়। গত দুই দফা করোনার সময়ে সেখানে ‘রেড ভলান্টিয়ারদের’ তৎপরতা সবারই নজর কাড়ে। মাসের পর মাস ওরা কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় গরিব মানুষের জন্য ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’ চালিয়েছে। এসব তৎপরতা কলকাতাবাসীকে নিশ্চয়ই নাড়া দিয়েছে।

আরেকটি বিষয় অন্তত পুর-নির্বাচনে লক্ষ্য করা গিয়েছে- এক. সেখানে উদারপন্থি রাজনীতির স্পেসটা ছোট নয়। প্রয়োজনে শাসক ও বিরোধী উভয় দলই উদারপন্থি হতে পারে। অর্থাৎ বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক দলের জন্য সেখানে খুব বেশি স্পেস নেই। দুই. জনগণের সঙ্গে থাকলে একসময়ে জনগণ কর্তৃক পরিত্যাজ্য একটা দলও আবার উঠে দাঁড়াতে পারে। পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া সিপিএম সেই রাস্তাতে হেঁটেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে সফল হতে উদগ্রীব। উল্লেখ্য, ২০২১-এর পর বিজেপি আবার পিছু হটতে শুরু করে, কিছু ক্ষেত্রে বিজেপিকে সরিয়ে সিপিএম দু-নম্বরে উঠে এসেছে। আবার চন্দননগরের মতো জায়গায় তৃণমূলকে হারিয়ে পুর-নির্বাচনে জয়ীও হয়েছে সিপিএম। বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীকে লড়াইয়ের মুখে ফেলে দিয়েছিল সিপিএমই। ফলে সিপিএম অক্সিজেন পেয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে বাংলায়। এবার আসন্ন পঞ্চায়েত; তার আগে সিপিএম বৃহত্তর শক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে তৃণমূল দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষতবিক্ষত। তাদের দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে। অনুব্রত মণ্ডলের মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকেও জেলে যেতে হয়েছে। তৃণমূলের আরও অনেকের বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারির দাগ লেগে রয়েছে। এই অবস্থায় সরকারের দুর্নীতিকে ইস্যু করে গেমপ্ল্যান সাজিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে সিপিএমের ছাত্র-যুবরা।

সাতদিন আগেই বিজেপি নবান্ন অভিযান করে শক্তি প্রদর্শন করেছে। তারপর ধর্মতলায় আনিস খান থেকে শুরু করে সুদীপ্ত গুপ্ত, মইদুল ইসলাম মিদ্যার মৃত্যু, বেকারত্ব এবং তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি-সহ একাধিক ইস্যুতে কলকাতার রাজপথে নামলো লালেরা। হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে মিছিলে লালে লাল হয়ে উঠলো ধর্মতলা। ‘ইনসাফ সভা’য় রাস্তায় নেমে বামেরা নিজেদের শক্তি দেখাতে পেরেছে, অন্তত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আগে ভিড়ের লড়াইয়ে তারা গেরুয়াকে টেক্কা দিয়েছে। তবে কি লাল পার্টির সুদিন ফিরছে, ফের কি তার বাংলায় দাপট দেখাতে পারবে? ধর্মতলায় ইনসাফ সভার পর সিপিএম আশায় বুক বাঁধতে পারে। তাদের কর্মসূচিতে ছাত্র যুবাদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি তো সেটাই জানান দিলো৷ রাজনৈতিক বিশেষঙ্গদের কেউ কেউ বলছে, এত মানুষের উপস্থিতি, যার ফলে সভাস্থলই বদলে ফেলতে হল৷ এরা সবাইও যদি বামেদের ভোট দেয় তাহলেও তো শূন্যের আগে একটা এক বসে। কিন্তু তা কি হবে? তা নাহলে অতগুলি ভোট যাবে কোথায়? কারও কারও বক্তব্য, ১৫ বছর আগেও তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে এমন আক্ষেপ শোনা যেত৷ তিনিও বারবার বলতেন, তাঁর সভায় যারা আসেন, তাদের সকলের ভোট পেলেও তো সিপিএমকে হারানো যেত!