নরেন্দ্র মোদী ২০১৯-এ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরলেন। কিন্তু তারপর থেকে লাগাতার বাড়তে শুরু করলো জ্বালানির দাম। পাশাপাশি অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়েছে রান্নার গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের। এরপর ২০২০-তে করোনা অতিমারী, লকডাউন ও ২০২২-এ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ফের একবার আর্থিক মন্দা দেখা দিতে পারে। অতিমারী পরবর্তী কালে দেশের অর্থনীতি যখন কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখনই মন্দার ভ্রুকুটি। অন্যদিকে ঠিক বাজেটের আগেই নরেন্দ্র মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির জালিয়াতি নিয়ে হিনডেনবার্গের রিপোর্ট সরকারকে যথেষ্ট বিপাকে ফেলেছে। যা নিয়ে সরকার এখন পর্যন্ত মুখ বন্ধ রেখেছে। ওই রিপোর্ট নিয়ে যা বলারবলছে কেবলমাত্র আদানি গোষ্ঠী।
বাজেটে দেশের কতখানি লাভ বা ক্ষতি হবে তা নিয়ে কি আমজনতা মাথা ঘামান? মাথা যদি ঘামিয়েও ফেলেন তাতে মাথা ব্যাথা ছাড়া আর কোনও লাভ হবে না তাদের। যেমন বাজারে সোনার দাম না কমল তা নিয়ে নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তের কি বা আসে যায়৷ কিন্তু আয়করে যদি এক ধাক্কায় ছাড়ের উর্ধসীমা ২ লাখ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে মধ্যবিত্তদের উপকার হয়৷ কারণ, কিছুটা হলেও করের হাত থেকে তাদের রেহাই মেলে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের যে বাজেট পেশ করেছেন তাতে আয়করে বিপুল ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছেন। দেখা যাচ্ছে, আগে বছরে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ছাড়-সহ আয়কর দিতে হত না। নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী, তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭ লাখ টাকা। নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী, বছরে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়, সম্পূর্ণ করশূন্য। ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে ৫ শতাংশ,৬ থেকে ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে১০ শতাংশ কর, ১২ থেকে ১৫ লাখ আয়ে ২০ শতাংশ ও ১৫ লাখের বেশি আয়ে ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে। নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী, বছরে ৯ লাখ টাকা আয় করলে এখন আর ৬০ হাজার টাকা কর দিতে হবে না, দিতে হবে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা।
এবার প্রশ্ন, বাজেটের এই ঘোষণায় কি আমজনতার পকেটে সরাসরি টাকা ঢুকবে বা তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে?না, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণযে বাজেট পেশ করেছেন তাতে নিম্নবিত্তদেরপকেটে সরাসরি বাড়তি টাকা আসার বা ভোগ্যপণ্য কেনার ক্ষমতা বাড়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। কিন্তু মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের আয় বাড়ানোর যথেষ্ট রাস্তা করে দিয়েছেন তিনি। স্বল্প মেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদের হার না বাড়ালেও বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানোর রাস্তা খুলে দিয়েছেন। একইভাবে সরকার মোবাইলের দাম কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের হাতে মোবাইল পৌঁছে যাবে, আরও বেশি সংখ্যক মানুষ দুনিয়া সম্পর্কিত তথ্যে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবেন বলে সরকারের ধারণা। একইভাবে সিগারেট সহ তামাক জাতীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার মনে করছে যুব সমাজ কিছুটা হলেও নেশার ঝোঁক কমবে৷ কিন্তু সরকারের আর্থিক সমীক্ষায় মূল্যবৃদ্ধির হার কমার কোনও আশা দেখা যাচ্ছে না। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী নতুন অর্থ বছরে জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে ৬.৫ শতাংশ। দেশে হুহু করে বাড়ছে বেকারত্ব। মোদী কর্মসংস্থানের গান যতই বাজান না কেন, বাস্তবে তা কাটা রেকর্ড। বছরে দু’কোটি চাকরি বহু আগেই কমিকে পরিণত হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় সরকারকে আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু ব্যবস্থা নিতেই হয় আবার ভোটের কথাও ভাবতে হয়। তার জন্যই মধ্যবিত্তের ভোটব্যাঙ্ক মাথায় রেখে বাজেট।