এক নজরে

#JhaldaCouncillorMurder: সুপারি দিয়ে খুন তপন কান্দু, গ্রেপ্তার দাদা

By admin

April 03, 2022

কলকাতা ব্যুরো: ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলরকে খুনের ঘটনায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। এর আগে কাউন্সিলর তপন কান্দুর ভাইপোকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আর এবার গ্রেফতার করা হল তপন কান্দুর দাদা নরেন কান্দু এবং মহম্মদ আসিক খানকে। জানা যাচ্ছে আসিক খান একজন দুষ্কৃতী, যাকে সুপারি দিয়েই ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে দাদা নরেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, ৫ লক্ষ টাকা সুপারি দিয়েছিল নরেন। আসিক খান সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করে। জানা গিয়েছে, শুক্রবার বোকারোর জরিডির গাইছাদ গ্রামের বাসিন্দা ধৃত কলেবর সিং নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন সিটের তদন্তকারীরা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই নরেন কান্দু এবং আসিক খান সম্পর্কে তথ্য হাতে আসে। নিহত কাউন্সিলর তপন কান্দুর দাদা তথা ধৃত ভাইপো দীপকের বাবা নরেন কান্দুকে শনিবার দিনভর জেরা করেন তদন্তকারীরা। সেইসঙ্গে নরেন কান্দুর ঘনিষ্ঠ ঝালদার কুটিডি এলাকার বাসিন্দা তথা একসময় বিহারে থাকা আসিক খানকেও জেরা করা হয়। এরপর সন্ধেবেলা তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন তাদের গ্রেপ্তারির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

তবে এই গ্রেফতারির খবর পেয়ে কিছুটা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু। তিনি একেবারে প্রথমেই যে অভিযোগ পত্র জেলা পুলিশ সুপারকে দিয়েছিলেন, তাতে নাম ছিল নরেন এবং তাঁর ছেলে দীপকের। যদিও সিবিআই তদন্তের দাবিতে এখনও অনড় পূর্ণিমা দেবী। এ দিন তিনি বলেন, আরও অনেকে জড়িত রয়েছে এই হত্যাকাণ্ডে। তাঁদের ধরার জন্য সিবিআই তদন্ত প্রয়োজন।
একই দাবি জানিয়েছেন নিহতের আর এক ভাইপো মিঠুন কান্দুও। তিনি বলেন, পারিবারিক বিবাদ বলা হলেও এতে রাজনীতির যোগ একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ধৃত নরেন এবং তাঁর ছেলে দুজনেই তৃণমূলের সক্রিয় নেতা ছিলেন বলে দাবি মিঠুনের। তিনি বলেন, এই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাজ্য পুলিশ এই বিষয়গুলি দেখবে না। তাই প্রয়োজন সিবিআই তদন্তের।

কলেবর সিং এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম চক্রী। পুলিশ তাকে জেরা করে জানতে পারে, ‘ভাড়াটে খুনি’ বিহারের বাসিন্দা। পারিবারিক দ্বন্দ্ব রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়ার কারণেই কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু যে খুন হয়েছেন, তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছিল সিটের কাছে। ঝালদা পুর শহরের দু’নম্বর ওয়ার্ডে তপন কান্দুর জয় ও কংগ্রেসের তরফে পুরপ্রধান পদে দাবিদারের কারণেই ক্রোধবশত ষড়যন্ত্র করে এই খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের হাতে তথ্য মিলেছিল। ৩ থেকে ৪ বছর ধরে তপন কান্দুকে হত্যার চেষ্টা করেছিল নরেন কান্দু।  যেহেতু নরেনের নিজের ছেলে তপন কান্দুর কাছে পুরভোটে হেরে গিয়েছেন, তা নিয়ে ক্রোধ ছিল নরেনের। 

অন্যদিকে সুদের কারবারি নরেন কান্দুর সঙ্গে ঝালদার কুটিডির বাসিন্দা আসিক খানের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ। বছর ষাটের আসিক একসময় বিহারে থাকত। আসিক খানকেই মোটা টাকার সুপারি দেওয়া হয়েছিল বলে সিটের প্রাথমিক অনুমান। আসিক তার পরিচিত ঝাড়খণ্ডের বোকারোর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ কলেবর সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কলেবরকে সুপারি হিসেবে ৫ লক্ষ টাকার কথা জানায় আসিক। কিন্তু ৫৪ বছর বয়সী কলেবরের নামে একাধিক মামলা থাকলেও এই ‘রাজনৈতিক খুন’ করার সাহস দেখায়নি সে। তাই সে বিহারের দুই খুনির সঙ্গে রফা করে বলে অভিযোগ।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এরপরই ওই দুই খুনি ও কলেবর ঝালদায় ঢুকে গত ১৩মার্চ তপন কান্দুকে খুন করে ঝালদা-বাঘমুন্ডি সড়কপথ ধরে কুটিডি গ্রামে গিয়ে নিশ্চিন্তে ডেরা বাঁধে। খুনের অপারেশন সেরে আসিক খানের ঘরেই ছিল আততায়ীরা। ঘটনায় কোনও সিসিটিভি ফুটেজ না পেয়ে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন দুষ্কৃতীদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে পুলিশ। সেই মোবাইল নম্বরের টাওয়ার লোকেশনে দেখা যায়, কলেবর ঝালদায় রয়েছে এবং বৃদ্ধ আসিক খানেরও খোঁজ মেলে। গত বুধবার বিকেলে তাকে জেরা করে ধৃত কলেবরের খোঁজ পায় পুলিশ। আর সেই কলেবরকে গ্রেপ্তার করে তার সঙ্গে থাকা বিহারের খুনিদের খোঁজ পেয়ে যায় সিট। আর তারাই জানিয়ে দেয়, এই খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী নরেন কান্দু। তবে কে খুন করেছিল, তা অবশ্য এখনও পুলিশ জানায়নি। 

গত ১৩ মার্চ বিকেলে হাঁটতে গিয়ে ঝালদা-বাঘমুন্ডি সড়কপথে গোকুলনগর গ্রামের কাছে আততায়ীদের হাতে খুন হয়ে যান কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। এরপরে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। নিহতের স্ত্রী তথা কাউন্সিলর পূর্ণিমা কান্দু এই ঘটনার বিচার চেয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিলেন। এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলছে। আগামী সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে এই খুনের মামলা রয়েছে। সিবিআই তদন্তের দাবি সেদিন বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। তবে পুলিশ এই খুনের ঘটনাকে “সম্পূর্ণ পারিবারিক” বলে দাবি করলেও এর আসল রহস্য উদ্ঘাটনে বদ্ধপরিকর তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু। সোমবার যদি কলকাতা হাইকোর্ট কোনওভাবে সিবিআই তদন্তের দাবি মেনে নেয় তাহলে কি ঝুলি থেকে আসল সত্য বেরিয়ে আসতে পারে? সেই কারনেই কি তড়িঘড়ি এই গ্রেপ্তার করে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করছে পুলিশ? ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।