এক নজরে

কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক

By admin

October 17, 2022

কালো মেয়েটি একদিন সংবাদ পাঠিকা হিসেবেও দর্শকদের নজর কেড়েছিল। তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিদীপ্ত সৌন্দর্য দেখেই শ্যাম বেনেগল তাঁর ‘চরনদাস চোর’ ছবির জন্য স্মিতাকে নির্বাচন করেন। প্রসঙ্গত, এর আগে স্মিতা অরুন খোপকারের ডিপ্লোমা ফিল্প ‘Teevra Madhyam’-এ অভিনয় করেছিলেন। স্মিতার বাবা মা কেউই খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। তবু ছোটদের ছবি ভেবেই তাঁরা সম্মতি দেন। কিন্তু তাঁদের মত বদলে যায় ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর। ছবিতে রানীর ভূমিকায় স্মিতাকে দেখে তাঁরা স্বীকার করতে বাধ্য হন যে মেয়েকে ছবিতে অভিনয় করতে দিয়ে তাঁরা কোনও ভুল করেননি। পরের ছবি ‘নিশান্ত’-এর জন্য শ্যাম বেনেগলের পছন্দ স্মিতা। কিন্তু এবার বাধা স্মিতার কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি কিছুতেই বিএ পরীক্ষার তিনমাস আগে স্মিতাকে হিন্দী ছবিতে অভিনয় করতে দিতে রাজি নন। পরিচালক তাঁকে ‘নিশান্ত’ যে ঠিক গড়পড়তা সিনেমা নয়; বোঝাতে পেরেছিলেন। ছবি মুক্তির পর সেন্ট জে়ভিয়ার্সের অধ্যক্ষও মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করেছিলেন যে এমন ছবির জন্য কিছু ক্লাস বাদ দেওয়া যেতেই পারে।

শ্যাম বেনেগলের ‘ভূমিকা’য় স্মিতা শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় পুরস্কার পান। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে পরিচিত স্মিতা একের পর এক মূলধারার ছবির জন্য ডাক পেতে থাকলেন। কিন্তু স্মিতা তখন মুম্বাইয়ের হিন্দী ছবির নায়িকা হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। নারীবাদী স্মিতা কিছুতেই সিনেমায় ভারতীয় নারীদের দুর্বল দেখানোর কোনও মাধ্যমকে মন থেকে মেনে নিতে পারতেন না। তাই তিনি তথাকথিত বাণিজ্যিক হিন্দী সিনেমার মুখ হয়ে উঠতে চাননি। তাঁর মত ছিল, নারীর জীবনসংগ্রামকে ছোট করে দেখিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ছবিকে তুলে ধরাই যে ছবির উদ্দেশ্য সেখানে তিনি কিছুতেই অভিনয় করবেন না।

অবশ্য পরবর্তীতে ‘মন্থন’, ‘আক্রোশ’, ‘সদগতি’, ‘চক্র’ ছবির স্মিতা ‘শক্তি’, ‘নমকহালাল’ ইত্যাদি ছবিতে অভিনয় করেন পাশাপাশি ‘মন্ডি’, ‘বাজার’, ‘মির্চ মসালা’, ‘অর্থ’-এর মতো ছবিতে নানা ধরনের চরিত্রে দর্শকের সামনে হাজির হন। সেই আশির দশকেই স্মিতা মূলধারার এই সব ছবির জগতে প্রবেশ করেছিলেন। এবং আচমকাই ভেঙে দিয়েছিলেন হিন্দী ছবির বহুকাল ধরে লালন করা মিথ—নায়িকা হতে গেলে ফর্সা হতেই হবে, চেহারায় বুদ্ধি-মেধার স্পষ্ট ছাপ থাকাটা জরুরি নয়। অভিনেত্রী আর তাঁর শরীর- আজ কেন, ভারতীয় সিনেমায় বহু দিনের চর্চিত বিষয়, যা আজও বিনোদন জগতের অন্যতম আকর্ষণ। কিন্তু স্মিতা দেখিয়ে দিতয়ে পেরেছিলেন এ দেশের সনাতন ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে এসে শ্যামবর্ণা ও প্রথাগতভাবে সুন্দরী না হয়েও একের পর এক ছবিতে নায়িকারূপেও পর্দা কাঁপানো যায়, কাঁপিয়ে দেওয়া যায় আপামর দেশবাসী পুরুষের হৃদয়ও। ভাগ্যিশ তিনি সিদ্ধান্ত বদল করেছিলেন, নাহলে এতরকম চরিত্রে স্মিতাকে দেখতে পাওয়া থেকে দর্শক বঞ্চিত হতেন।