এক নজরে

ভোগের মেনু

By admin

October 17, 2020

শক্তির আধার হলেও বাংলায় দেবী দুর্গাকে প্রধানত মাতৃরূপে কিংবা কন্যারূপেই বরণ করা হয়। সে যেন ঘরেরই মেয়ে উমা। পুত্র, কন্যাদের নিয়ে দিন কতেকের জন্য এসেছে বাপের বাড়ি। সে কারণেই পুজোর ভোগ রান্নার ক্ষেত্রে জমিদার কিংবা বনেদি বাড়ির কর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশ থাকতো, মনে রাখবে বাড়িতে মেয়ে আসছে। কুটুম নয়। ভোগ রান্নার ক্ষেত্রেও সেটা মাথায় রেখো। অতীতে সাধারণত দুর্গাপুজো হতো রাজ বাড়ি, জমিদার বাড়ি কিংবা কোনো বনেদি বাড়িতেই। ক্রমে ক্রমে তা বারোয়ারি থেকে সার্বজনীন হয়েছে। ভোগ রান্নার দায়িত্বও মোটের ওপর সামলাতেন বাড়ির মহিলারাই। পারিবারিক নিজ নিজ পদ্ধতিতেই তারা বানাতেন মায়ের ভোগ।

পারিবারিক এবং এলাকাভিত্তিতে ভোগের আয়োজন এবং তার রন্ধনপ্রণালীতেও তার ফারাক থাকে। শাস্ত্রে রুই, ইলিশ, শোলের মতো আঁশ যুক্ত মাছই ভোগে নিবেদনের বিধান থাকলেও, পূর্ব বাংলার মাকে বোয়াল মাছ নিবেদন করার প্রচলনও ছিল। বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মাতা ঠাকুরানীকে ভোগে দেওয়া হয় শোল মাছের টক। এই মাছ নাকি মায়ের খুব পছন্দের। এখন মাগুর মাছের মহার্ঘ হলেও আগে তা মিলতো মাঠেঘাটেই। গরিব মানুষেরা সেই মাগুরের টক নিবেদন করতেন মাকে। চিল্কিগড়ের কনক দুর্গা মন্দিরেও সে কারণে মাছের এই পদগুলি ভোগে থাকে। আবার বীরভূমে লর্ড সিংহাদের পারিবারিক দুর্গাপুজোয় কাঁচা শোল মাছ তেঁতুল জলে সেদ্ধ করে বানানো হতো মাছের টক। তারাপীঠের ভোগে থাকে শোল পোড়া, ফুল্লরায় চুনো মাছের টক, কালীঘাটে থাকে চিংড়ির পদও।

তবে নিরামিষই হোক কিংবা আমিষ, ভোগে কিন্তু পেঁয়াজ, রসুনের কোনো ব্যবহার নেই। অতীতে ভোগে নুনও দেওয়া হতো না। কারণ মনে করা হতো, রান্নায় নুন দিলে তা পরিণত হয় উচ্ছিষ্টে। সে কারণে শুধু ভোগ রান্নার ক্ষেত্রেই নয়, আগে নিমন্ত্রণ বাড়ির কোনো রান্নাতেও নুনের প্রচলন ছিল না। কলা পাতা কিংবা শাল পাতার এক কোনে দেওয়া হতো নুন। পাতের পাশে নুন পরিবেশন করার সেই ধারা অবশ্য আজও বজায় রয়েছে। দুর্গা সাত্ত্বিক, সিংহ রাজসিক এবং অসুর তামসিক রূপের প্রতীক। পুজোর অন্ন ভোগও হয় ওই তিন ধরনের।

উমা ঘরের মেয়ে হলে কি হবে, সেও তো মা। সরস্বতী, লক্ষী, গণেশ, কার্তিক তো ছোট। তাই ‘ছোট’দের আগে খাইয়েই তারপর মায়ের ভোগ রান্নার প্রচলনও রয়েছে বাংলার কোথাও কোথাও। খিচুড়ি, পাঁচ রকম ভাজা এবং পায়েস দিয়ে আগে সন্তানদের খাইয়েই কোনো কোনো জায়গায় শুরু হয় মায়ের ভোগ রান্না। সন্তানদের ভোগকে বলা হয় ‘ বাল্য ভোগ’।