অদ্ভুতুড়ে

৬০০ কিশোরীর রক্ত জলে মিশিয়ে স্নান

By admin

February 24, 2024

ইতিহাসের পাতায় খুন, হত্যার অনেক ঘটনা আছে যা জানলে মানুষ খুব আশ্চর্য হয়। সেই সব খুন-হত্যার নৃশংসতায় মানুষ শিঁউরে ওঠে। মহারানী এলিজাবেথ ব্যাথোরি ছিলেন তেমনই এক সিরিয়াল কিলার যার কথা জানলে যে কেউ আতঙ্কে ভুগবে৷ দু’চোখ থেকে ঘুম ছুটে যাবে। জানা যায়, অন্তত কয়েকশো কিশোরীকে ধরে এনে তিনি হত্যা করেছিলেন নিজের দুর্গে। একথাও জানা যায়, নিজের যৌবন ধরে রাখতেই নাকি তিনি দিনের পর দিন নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন। হাঙ্গেরিয়ান অভিজাত পরিবারের এলিজাবেথ ব্যাথোরির রক্তপিপাসু দানবীতে পরিণত হওয়াকে অনেকেই কাউন্ট ড্রাকুলার সঙ্গে তুলনা করেন। কথিত আছে, ছ’বছর বয়সে এলিজাবেথ প্রকাশ্যে এক জিপসির নৃশংস প্রাণদণ্ড দেখেছিলেন। এরপরেই নাকি এলিজাবেথের মনোজগত ওলটপালট হয়ে যায়। নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতাকে তিনি স্বাভাবিক বলে ভাবতে শিখে যান।

এলিজাবেথ বাথোরির জন্ম ১৫৬০ সালের ৭ আগস্ট রয়্যাল হাঙ্গেরিতে। তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা ছিলেন প্রবল প্রতাপশালী। বড় ভাই আর দুই ছোট বোনকে নিয়ে তাঁর ছোটবেলা কাটে রয়্যাল হাঙ্গেরির একসেড দুর্গে। বেশ আনন্দেই কেটেছিল সময়টুকু। প্রথানুযায়ী পরিবার তাঁকে বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে পড়ায়। মেধাবি এলিজাবেথ অল্প বয়সেই বেশ কয়েকটি ভাষায় কথা বলতে শিখে যান। কিন্তু চার বা পাঁচ বছর বয়সে বেশ কয়েকবার খিঁচুনির শিকার হয়েছিলেন এলিজাবেথ। এরপর থেকে তার মাথাব্যথা, মাঝে মাঝে আগ্রাসী আচরণ ইত্যাদি প্রবণতা দেখা যেতে থাকে।

দশ বছরের এলিজাবেথের সঙ্গে হাঙ্গেরির সার্ভার পরিবারের ছেলে ফ্রান্সিস নাদাসদির বিয় ঠিক হয়। তারপর এলিজাবেথকে সার্ভারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তাদের পারিবারিক আদবকেতা শিখে নিতে পারেন। সার্ভারে থাকাকালীন গুজব রটে যে এলিজাবেথ নাকি স্থানীয় এক কৃষকের ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন। অকালে স্বামী ফ্রান্সিসের মৃত্যুর জন্যেও এলিজাবেথকে অনেকে দায়ী করেন, বলা হয়, এলিজাবেথ স্বামীকে বিষ খাইয়েছেন। এও বলা গৃহভৃত্যদের উপর শারীরিক অত্যাচার করতেন এলিজাবেথ। তাদের চিৎকারে নাকি তাঁর মাথাব্যথার উপশম হতো। স্থানীয় অনেক গরিব পরিবারের মেয়েরা দুর্গে কাজ করতো, পান থেকে চুন খসলেই এদের উপর নিজের হাতের সুখ মেটাতেন এলিজাবেথ। এরপর থেকেই এলিজাবেথের অত্যাচারের রোমহর্ষক নানা কাহিনী লোকমুখে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

বলা হয় এলিজাবেথ অন্তত ৬০০ জনকে খুন করেছিলেন। তিনি জলে কিশোরীদের রক্ত মিশিয়ে স্নান করতেন। তাঁর এই অভ্যাস দীর্ঘদিনের। যে কোনো মানুষের রক্ত নয়, চাই বালিকা কিংবা কিশোরী মেয়েদের টাটকা রক্ত। তাঁকে কেউ একজন বলেছিল, যৌবন অক্ষত রাখতে এটাই অমোঘ ওষুধ। যদিও তারও অনেক আগে থেকেই, রক্তের প্রতি এক অদম্য নেশা গড়ে উঠেছে তাঁর মধ্যে। প্রসঙ্গত, হাঙ্গেরির বিখ্যাত কাউন্ট বাথোরি পরিবারের অত্যাচারের গল্প সে অঞ্চলের কৃষকদের মুখে মুখে ফিরতো। আর সেইসব অত্যাচার চোখের সামনে দেখতে দেখতে বড় হয়েছিলেন কাউন্টেস এলিজাবেথ বাথোরি। গুপ্তচর সন্দেহে একবার এক কৃষককে ধরে আনা হয়েছিল তাঁর বাবার সামনে। প্রমাণের দরকার পড়েনি, কেবলমাত্র সন্দেহবশতই তক্ষুনি মৃত্যুপরোয়ানা জারি হয় সেই কৃষকটির বিরুদ্ধে। একটি মৃত ঘোড়ার পেট চিরে কৃষকটিকে ঢুকিয়ে তারপর সেলাই করে গোর দেওয়া হয় জ্যান্ত লোক সমেত মৃত ঘোড়াটিকে।

মানুষকে অত্যাচার করে, কষ্ট দিয়ে এক অদ্ভুত আনন্দ পেতেন এলিজাবেথ। কাউকে যন্ত্রণা পেতে দেখলে তাঁর শরীর জুড়ে শিহরন হত। যৌনতার ক্ষেত্রে পুরুষ-নারীর বাছবিচার করতেন না তিনি, পাহাড়ি দুর্গপ্রাসাদের চোরাকুঠুরিতে প্রতিদিন মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গুনতেন অসংখ্য কিশোরী। কিশোরীদের উপর অত্যাচার করার এই অভ্যাসের সূত্রপাত হয়েছিল বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই। এলিজাবেথের স্বামী অটোমান বিদ্রোহ দমনের জন্য ঘুরে বেড়াতেন আর সেই সুযোগে ফাঁকা প্রাসাদে চার বিশ্বস্ত পরিচারিকাকে নিয়ে নিজের বিকৃত উল্লাসে মাততেন এলিজাবেথ। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি মেয়েরাই ছিল এলিজাবেথের শিকার। তাদের গায়ে সুচ ফুটিয়ে দিতেন তিনি। ছ্যাঁকা দিতেন আগুনে পোড়ানো লোহার শলাকা দিয়ে, আর তারপরেই হয়তো তাদের ফেলে দিতেন বরফগলা জলে। এছাড়াও পৈশাচিক অত্যাচারের নিত্যনতুন পদ্ধতি খুঁজে বেড়াতেন এলিজাবেথ। তাঁকে নিষ্ঠুর করে তুলেছিল অনন্ত যৌবন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।

কিন্তু পাপ চিরদিন চাপা থাকে না। কানাঘুষো চলছিলই। একসময় গোপনে তদন্ত শুরু করলেন এক কাউন্ট। সম্পর্কে তিনি এলিজাবেথের ভাই। সৈন্যসামন্ত নিয়ে শেষমেশ এলিজাবেথের দুর্গে হানা দেন। আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসে সেই ভয়ংকর কাহিনি, যা বহুদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল। এলিজাবেথকে তার জঘন্য অপরাধের জন্য গ্রেফতার করা হয়৷ কুকর্মের জন্য তাঁকে মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া হলেও, তাঁকে তার নিজের মহলের একটি কামরায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল। বন্দিদশায় চার বছর পর মৃত্যু হয় মহারানী এলিজাবেথ ব্যাথোরির।