এক নজরে

এক আজব গ্রামের নাম বাদ্রাপুর

By admin

February 19, 2023

সন্তানের জন্য নাম রাখা অভিভাবকদের জন্য সব সময় কঠিন কাজ। কিন্তু ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ধারওয়াড় জেলার বাদ্রাপুরগ্রামের বাসিন্দারা এক্ষেত্রে একটি অভিনব প্রথা বেছে নিয়েছেন। কর্ণাটকের বাদ্রাপুরের হাক্কি পিক্কি উপজাতি সম্প্রদায় সন্তানদের নামকরণে এক অদ্ভুত রীতির প্রচলন করেছে। সেই প্রথা চালু হয়েছে ১৫ বছর আগে।উল্লেখ্য, ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে বাদ্রাপুরে ৭১৪টি পরিবার ছিল এবং মোট জনসংখ্যা ৩৫২৪ জন যার মধ্যে ১৭৮৭ জন পুরুষ এবং ১৭৩৭ জন মহিলা ছিলেন। ০-৬ বছর বয়সী ৪৪৪ শিশু ছিল।

বেঙ্গালুরু শহর থেকে বিশ মিনিটের পথ এই গ্রাম। পাহাড় ও অরণ্য ঘেরা এই গ্রামে এলেই শুনবেন আরও বিচিত্র সব কথাবার্তা। এই গ্রামে এমনই নিয়ম চলে আসছে বহুদিন ধরেই। সেখানে এগুলো খুব স্বাভাবিক হলেও বাইরের মানুষের কাছে অস্বাভাবিক। এখানে শিশুদের নাম রাখা হয় বিভিন্ন নামবাচক বিশেষ্য দিয়ে। সেগুলি হতে পারে কোনও বিখ্যাত জায়গা, সরকারি অফিস, যানবাহন কিংবা কোনো খাবার। হতে পারে কোনো সেলিব্রেটি, রাজনৈতিক দল বা বিখ্যাত সোশ্যাল মিডিয়া। সোজা কথায় সন্তান জন্ম নেওয়ার পর যে নাম মনে আসে, সেটাই হয় সন্তানের নাম।

বাদ্রাপুর গ্রামের বাসিন্দারা খুবই সাধারণভাবে জীবনযাপন করে। এখানে নেই আভিজাত্যের ছোঁয়া। বাড়িগুলো টালির ছাদ দেওয়া। এখানকার আদিবাসীদের বলা হয়‘হাক্কি পিক্কি’। কন্নড় ভাষায় ‘হাক্কি পিক্কি’ শব্দের অর্থ ‘পাখি শিকারি’। বাদ্রাপুর গ্রামে এই সম্প্রদায়ের ১৪০টি পরিবারের বাস। তারা গুজরাথিওয়া, কালিওয়ালা, মেওয়ারা, পানওয়ারা এই চারটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত।

হাম্পি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ট্রাইবাল স্টাডি’ বিভাগের গবেষণার মাধ্যমে জানা গিয়েছে, ‘হাক্কি পিক্কি’ সম্প্রদায়ের মানুষদের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন রাজপুত। রাণা প্রতাপের সেনাবাহিনীর যোদ্ধা। তাদের পদবী ছিল সিংহ। মোগলদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর এই সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষেরা আশ্রয় নিয়েছিলেন দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অরণ্যে। যাযাবরের মত ঘুরে বেড়াতেন এখানে সেখানে। খিদে মেটাতে বাধ্য হয়ে জঙ্গলের পশু ও মাছ স্বীকার করতেন। এটিই হয়ে যায় তাদের পেশা। ১৯৭০ সালে ভারতের বন দফতরের আইনে শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে আসতে বাধ্য হয় তারা। এখন তাদের পেশা হস্তশিল্প। হাক্কি পাক্কিদের হস্তশিল্প বেশ জনপ্রিয়। হস্তশিল্পগুলো গ্রামবাসীরা বিক্রি করেন দীপাবলি ও রমজান মাসে। বিভিন্ন মেলাতেও দেখা যায় হাক্কি পাক্কিদের হস্তশিল্পের দোকান।

মূলত জঙ্গল ছেড়ে বাইরে আসার পর থেকেই সন্তানদের অদ্ভুত নাম রাখতে শুরু করে তারা। এর উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের আসল পরিচয় গোপন রাখা। বাদ্রাপুর গ্রাম প্রধানের নাম ‘হাইকোর্ট’। তার জন্ম হয়েছিল ভারতের হাইকোর্টের পাশে এক তাঁবুতে। এজন্যই তারা বাবা-মা সন্তানের নাম রাখেন হাইকোর্ট। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে- হাইকোর্টের দাদার নাম ছিল ব্রিটিশ। তিনি জন্মেছিলেন ব্রিটিশ আমলে। এখানে এক ছোট্ট মেয়ের নাম মাইশোর পাক। এটি সেখানকার একটি মিষ্টির নাম। মাইশোরের বাবা সেই মিষ্টি খেতে এতোই ভালোবাসেন যে নিজের মেয়ের নামই রেখে দেন এটি।

এখানে এলে দেখা পাবেন মিলিটারির। তার ছেলের নাম বাহুবলী। ভারতের জনপ্রিয় দক্ষিণী সিনেমা বাহুবলী দেখে ভালো লেগে যায় তার। এরপর সন্তান জন্মালে তার নাম রেখে দেন বাহুবলী। এখানকার মানুষের আছে ভারতের নাগরিকত্ব ও জাতীয় পরিচয় পত্র। সেখানেও তাদের এই নাম দেওয়া। অদ্ভুত সব নামের তালিকা থেকে বাদ যায়নি প্রযুক্তি বিশ্বও। আছে ফেসবুক, গুগলও। ভবিষ্যতে আসবে হয়তো টুইটার কিংবা ইনস্টাগ্রাম।

রাজনৈতিক দল হিসেবে কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টি একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও বাদ্রাপুর গ্রামে কংগ্রেস ও জনতা একে অপরের খুব ভালো বন্ধু। কিছু দিন আগেই এই রাজ্য কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টির জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল।শুধু নামকরণেই নয়, আরও কিছু দিক থেকে হাক্কি পিক্কিরা ব্যতিক্রম। এ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ প্রায় ১৪টি ভাষার মিশ্রণে কথা বলতে পারে। রীতি অনুযায়ী, এ সম্প্রদায়ের বিয়েতে বরেরা কনেদের যৌতুক দিয়ে থাকেন। বিচ্ছেদের সময় নারীদের বিয়ের সময় পাওয়া যৌতুক থেকে অর্ধেক ফেরত দিতে হয়।