এক নজরে

#arjunsingh: দীর্ঘ ৩ বছর পর অভিষেকের হাত ধরে ঘরে ফিরলেন অর্জুন

By admin

May 22, 2022

কলকাতা ব্যুরো: মুকুল রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এবার অর্জুন সিং। প্রায় তিন বছর পর তৃণমূলে ফিরলেন ভাটপাড়ার দাপুটে নেতা তথা বিজেপি সাংসদ। রবিবার ক্যামাক স্ট্রিটে তৃণমূল সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে জোড়াফুল পতাকা হাতে তুলে নিলেন তিনি। আর তারপরই বদলে ফেললেন নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের ছবি। সূত্রের খবর, সোমবারই অর্জুন সিং নবান্নে গিয়ে দেখা করবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

পুরনো দলে ফিরে নতুনভাবে কাজ করতে চান তিনি। বারবারই অর্জুন সিং জানিয়েছেন, পাট শ্রমিকদের জন্য তিনি যে কোনও দিকে যেতে প্রস্তুত। সে কথাই রাখলেন। রবিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা হাতে নিলেন অর্জুন সিং। তাঁকে একে একে উত্তরীয় পরিয়ে দেন জেলার অন্যান্য বিধায়করা। সকলের সঙ্গে একসারিতে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন বারাকপুরের সাংসদ। শুরু করলেন রাজনৈতিক কেরিয়ারের আরেক ইনিংস।

সময়ের হিসেবে ৩ বছর ২ মাস ৮ দিন। তারই মধ্যে বহু ফাঁকফোকর চোখে পড়েছে। উপলব্ধি হয়েছে, এই দলে থেকে মানুষের কাজ করা যায় না। কারণ, এই দল শুধু ফেসবুকের সংগঠন। কিন্তু মানুষের কাজটা করতে হয় মাঠে নেমে। যাঁরা বরাবর সেভাবে সংগঠনের কাজ করেছেন, তাঁরা কখনও কাজের যথাযথ সুযোগ পায়নি। বঙ্গ বিজেপি শুধুই এয়ার কন্ডিশন ঘরে বসে রাজনীতি করে। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে এভাবেই সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের সদ্য প্রাক্তন শিবিরের সমালোচনায় মুখর হলেন বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং।

সেইসঙ্গে দলবদলের কারণও ব্যাখ্যা করলেন। স্বীকার করলেন, ভুল বোঝাবুঝিতে দল ছেড়েছিলাম। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলাম। রবিবার বিকেলে ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে সাংবাদিক বৈঠকে অর্জুন বলেন, বাংলার বিজেপি এসি ঘরে বসে আর ফেসবুকে সংগঠন করেন। আমরা, যাঁরা গোড়া থেকে মাঠে নেমে সংগঠন করি, মানুষের কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছিল। পাটের সমস্যা নিয়ে আমি বারবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বলেছিলাম। বাংলার পাটশিল্পের ক্ষতি মেনে নেব না। কেন্দ্রের কাছে পাট নিয়ে আমাদের যা দাবি ছিল, তার ৩০% আদায় করতে পেরেছি। ৭০% এখনও বাকি।

পাশাপাশি এদিন পাটশিল্পকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎপরতার কথা মনে করিয়ে অর্জুন সিং বলেন, জুটের সমস্যা অবহেলা করছিল কেন্দ্র। ৬২ টি জুটমিল থেকে ৫০, সেখান থেকে ১৫ টি। বাকি সব বন্ধ। আমি সেই লড়াইয়ের জন্য আমি মন্ত্রীকে বুঝিয়েছি। নভেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়েছিলেন মোদীকে। তারপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আমি জানিয়েছিলাম, প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে লড়াই করব। মমতার নেতৃত্বে দেশে বড় লড়াই সংগঠিত হবে। আমি সৈনিক হিসেবে তাতে থাকতে চাই।

ইতিমধ্যে তাঁর জগদ্দলের বাড়ির সামনে থেকে বিজেপির পতাকা খুলে নেওয়া হয়েছে বলে খবর। ৩০ মে জগদ্দলে সভা করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দফায় দলবদলের পর সেখানেই প্রথম দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেবেন অর্জুন সিং। সভায় উপস্থিত থাকবেন বারাকপুরের বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, দমদমের সাংসদ সৌগত রায়. মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মদন মিত্ররা। শোনা যাচ্ছে, এই সভায় অর্জুনপুত্র পবন সিং যোগ দেবেন তৃণমূলে। পবন এই মুহূর্তে ভাটপাড়ার বিজেপি বিধায়ক।

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে ঘাসফুল শিবির ছেড়ে পদ্ম শিবিরে পা রেখেছিলেন ভাটপাড়ার তিনবারের বিধায়ক অর্জুন সিং। ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, অর্জুন আশা করেছিলেন, তাঁকে বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে টিকিট দেওয়া হবে। কিন্তু আশাহত হন। আর সেই কারণেই সম্ভবত অসন্তুষ্ট হয়ে জোড়া ফুল শিবির ত্যাগ করে গেরুয়া শিবিরে প্রবেশ করেছিলেন। তার ‘পুরস্কার’ হিসেবে ২০১৯ এ বিজেপি অর্জুন সিংকে বারাকপুরের প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ের সুযোগ দেন। বারাকপুরের ২ বারের তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে অনায়াসে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন ভাটপাড়ার দাপুটে নেতা অর্জুন সিং।

তারপর অবশ্য পদ্ম শিবিরে অর্জুনের কাজকর্মের রাস্তা ততটা মসৃণ হয়নি। সম্প্রতি পাটশিল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বিজেপি সাংসদ। পাট শ্রমিকদের স্বার্থে প্রয়োজনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও একমঞ্চে আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। দফায় দফায় কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। ত্রিপাক্ষিক আলোচনা হয় জুট বোর্ডের সঙ্গেও। সূত্রের খবর, শেষ বৈঠকে অর্জুন সিংয়ের চাপের মুখে পড়ে পাটের বর্ধিত দাম প্রত্যাহার করার পথে হেঁটেছে জুট বোর্ড। তা নিঃসন্দেহে অর্জুন সিংয়ের সাফল্য। তবে তারপরও গেরুয়া শিবিরে আর থাকতে চাননি বারাকপুরের সাংসদ।

২০১৯ সালের ১৪ মার্চ লোকসভা ভোটের আগে দিল্লি গিয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অর্জুন। সেই দলবদলের মঞ্চে ছিলেন মুকুল রায়ও। তিন বছরের বেশি সময় কাটিয়ে অর্জুনের প্রত্যাবর্তন ঘটল তৃণমূল শিবিরে। সেই সঙ্গে একটি বৃত্তও সম্পূর্ণ হল।

তবে এদিন অর্জুন দলত্যাগ করতেই বারাকপুরের সাংসদকে তোপ দাগলেন প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারছিলেন না বলেই দল ছাড়লেন অর্জুন। রবিবার বিকেলে অর্জুন সিং তৃণমূলে ফেরার পরই সাংবাদিক বৈঠক করেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, অর্জুন সিং ক্ষমতায় থেকে রাজনীতি করে এসেছেন। বিরোধী হয়ে রাজনীতি করাটা যে কতটা কঠিন সেটা বুঝতে পেরেছেন এখন। ওঁর ব্যক্তিগত সমস্যা আছে তাই উনি চলে গিয়েছেন।

এরপরই দিলীপ দাবি করেন, অর্জুনের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। তাই উনি যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর কথায়, উনি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করা লোক। ওনার পক্ষে পুলিশের বিরুদ্ধে গিয়ে লড়াই করা অত্যন্ত কঠিন। দিলীপ এদিন আরও বলেন, পার্টির যখন জেতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখন অর্জুন এসেছিলেন। বিজেপির সংগঠন উনি তৈরি করেননি। কোনও ভুল বোঝাবুঝিও হয়নি। বিজেপি নিজের মতো করে লড়বে।