এক নজরে

অ্যাপোলো গো ফর দ্য মুন

By admin

April 21, 2023

অর্ধ শতকেরও আগে চাঁদে মানুষের পা পড়েছিল। এতগুলি বছর পেরিয়ে চন্দ্রাভিযানের ইতিহাস-ভূগোল-বিঞ্জানের পাতা ওলটালে দেখা যাচ্ছে চাঁদ আসলে একটা উপলক্ষ মাত্র। মূল লক্ষ্য মহাকাশে আধিপত্য বিস্তার।

প্রথম পর্ব 

একটা সময় ছিল যখন সমুদ্র দখলকারীরাই নিয়ন্ত্রণ করত দুনিয়া। কিন্তু গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে পৌঁছে বোঝা গেল আগামী দিন জলের পরিবর্তে মহাকাশই সবথেকে গুরুত্ব পাবে। যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে মহাকাশ তার হাতেই থাকবে দুনিয়া শাসনের ছড়ি। একটু দেরিতে হলেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার। যার প্রথম ধাপে ১৯৫৮ সালের ২৯ জুলাই তিনি সই করেন ‘ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাক্ট’-এ। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নাসার জন্ম হয় আরও দু’মাস পরে অক্টোবরের ১ তারিখে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভিতর ও বাইরে বিমান চালনার সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে গবেষণার জন্যই গড়া হচ্ছে নাসা। এই কথা সামনে রেখে মার্কিন কংগ্রেসে পাশ হল বিল। শুরু হয় মানবসভ্যতার আধুনিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়ের।  

চাঁদে যে মানুষ পাঠাতে হবে এই ভাবনাটা ছিলই। কিন্তু প্রথমেই তো মানুষ পাঠিয়ে দেওয়া যায় না। তার আগে তার সম্পর্কে জানতে বুঝতে হবে। চাঁদের মাটি বুঝতে ১৯৬৪ সালে প্রথম একটি  ‘ল্যান্ডার’  নাম  ‘রেঞ্জার-৭’ মহাকাশযান পাঠাল নাসা। চাঁদের পিঠের মোট ৪ হাজার ৩১৬টি ছবি তুলে আনল সে। ওই সব ছবি বিশ্লেষণ করে নাসা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চাঁদের পিঠের কোন দিকটায় নামানো হবে মানুষ। কোন দিকে মানুষ নামালে বিপদের আশঙ্কা কম। যাই হোক ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই আমেরিকার ফ্লোরিডায় কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে তিন অভিযাত্রী নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন (বাজ) অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স ‘স্যাটার্ন ৫’  রকেটে চেপে তাঁদের বাহন মহাকাশযান অ্যাপোলো–১১তে যাত্রা শুরু করে। চাঁদের বুকে পা রাখার আগে একের পর এক বিপত্তি স্বত্বেও ১৯৬৯-এর ২০ জুলাই দুই মার্কিন নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের বুকে পা রাখেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার ‘ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যাক্ট’-এ সই করার ১৮ বছর পর চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখে মানুষ। তবে ঐতিহাসিক সেই  ‘অ্যাপোলো মোমেন্ট’ নিয়েও আছে বিতর্ক। নাসার দাবি,  ১৬ জুলাই যাত্রা শুরু করে ২৪-এ চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিলেন আর্মস্ট্রংরা। আর গোড়া থেকেই রাশিয়া একের পর এক প্রশ্ন তুলেছে— চাঁদে পতাকা ওড়ে কীভাবে?  ছবিতে এত ছায়াপাত কীসের?  চাঁদের মাটিতে ভারী বুটের ছাপই বা পড়ল কীভাবে?  মহাকাশ নিয়ে দুই দেশের প্রতিযোগিতা কোন পর্যায়ে উঠেছিল, তা স্পষ্ট হয়ে যায়। কেবলমাত্র তাই-ই নয়, অ্যাপোলো-১১ মিশনের উৎক্ষেপের দিন তিনেক আগে,  ১৩ জুলাই সোভিয়েত চাঁদের বিভিন্ন এলাকার মাটি সংগ্রহ করার জন্য পাঠায় লুনা-১৫। ঈগলের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য সোভিয়েত লুনা ১৫-এর পরিকল্পনা আমেরিকাকে আগাম জানিয়েও দেয়। সোভিয়েতের কপাল মন্দ ছিল। লুনা শেষ পর্যন্ত আর চাঁদে অবতরণ করতে পারেনি ধ্বংস হয়ে চাঁদের জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সোভিয়েত যে সন্দেহই করুক না কেন, অ্যাপোলো ১১-র সাফল্য আমেরিকাকে মহাশূন্য প্রতিযোগিতায় প্রথম সারিতে নিয়ে আসে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঠানো ইউরি গ্যাগারিনের প্রথম মহাকাশ পরিভ্রমণ যে আত্মশ্লাঘার সৃষ্টি করেছিল,  আর্মস্ট্রংয়ের চাঁদের বুকের প্রথম ছাপটি তার অনেকখানিই মসৃণ করে দেয়।

চলবে…