এক নজরে

দ্বিভূজা থেকে রাজবংশী মেয়ে রূপে অন্য দুর্গা

By admin

October 04, 2022

হুগলি জেলার বলাগর ছাড়াও দু’হাতের দুর্গাপুজো হয় বীরভূম জেলার মল্লারপুরের জমিদার জগন্নাথ রায়ের বাড়িতে। প্রায় ৩০০ বছর ধরে দু’হাতের দুর্গামূর্তি এই বারিতে পুজো হয়ে আসছে। প্রতিমার ডান হাতে অভয় মুদ্রা আর বাঁ হাতে পদ্ম। তবে এই দুর্গামূর্তির সঙ্গে থাকে না লক্ষ্মী, গনেশ কার্তিক ও সরস্বতী।রীতি মেনে নদিয়া জেলার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের পাবাখালি গ্রামে রায়চৌধুরি বাড়িতে পূজিতা হন দ্বিভুজা দুর্গা।মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের ‘অনুপ্রেরণায়’ এই পুজো শুরু। সম্রাটের থেকে ‘রায়চৌধুরি’ উপাধি পান তৎকালীন বাংলাদেশের যশোহর জেলার মহেশপুরের জমিদার।মহেশপুরের সেই জমিদারি নেই। নেই সেই ঠাঁটবাটও। দেশভাগের পর রায়চৌধুরিরা চলে আসেন নদিয়া জেলার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের পাবাখালি গ্রামে। ঠাঁইছাড়া হয়ে সমস্যায় পড়লেও পুজো বন্ধ হয়নি। এখনও নিষ্ঠা সহকারে দুর্গাপুজো হচ্ছে রায়চৌধুরি পরিবারে। রীতি মেনে এখনও সন্ধিপুজোর সময় শূন্যে গুলি ছোড়া হয়। দশমীতে দেবীকে পান্তাভোগ দেওয়া হয়। আর তামাক ভোগ পান শিবঠাকুর।

যুগে যুগে কালে কালে মূর্তির রূপের রদবদল ঘটেছে মানুষের কল্পনায়। যদিও মানুষের গল্পকথায় দেবী রূপ বদলে কখনও দশভূজা রণাঙ্গিণী, কখনও অতসী বা গোধূমবর্ণা, কোথাও নীলজীমূত সঙ্কাশা। তাই হয়ত কবি নজরুল লিখেছে, ‘মানুষ এনেছে দেবতা, দেবতা আনেনি মানুষ’।অভিনব আর একটি দুর্গাপুজোর কথা উল্লেখ্য। হুগলি জেলার বলাগড়ের পাটুলিতে কয়েকশো বছর ধরে ব্যতিক্রমী এক দ্বিভুজা দুর্গা পূজিতা হয়ে আসছেন। সেখানে দেবী ‘মঠের মা’ নামেই পরিচিত। পুজোটি মঠবাড়ির বলেই এর নাম। প্রাচীনকালে সেখানে একটি বৌদ্ধমঠ ছিল। পরবর্তীকালে বৌদ্ধধর্মের অবক্ষয়ের দরুন বহু বৌদ্ধ দেব-দেবী হিন্দুদের লৌকিক দেব-দেবীতে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। সমাজ-সংস্কৃতি বিজ্ঞানী বিনয় ঘোষের লেখা থেকে জানা যায়, এই মঠবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এক বৌদ্ধ তান্ত্রিক। আজও মঠবাড়ির পুজোয় দেখা যায় বৌদ্ধ তন্ত্রাচারের বিবর্তিত রূপ।

দুর্গা শুধু দেবী রূপেই নয়, কোথাও পুজো পেয়ে থাকেন সাধারণ রূপেও। চ্যাপ্টা নাক, পটলচেরা চোখ, একেবারে জৌলুসহীন সাধারণ এক গ্রাম্য মেয়ে-এই রূপকে আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায় রাজবংশী নারী রূপ। ১৮১০ সাল থেকে দেবী দুর্গা এই রূপেই বন্দিত হয়ে আসছেন জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের আমগুড়ি এলাকায়।দুশো বছরের বেশি সময়কাল ধরে দুর্গাকে এই রূপেই দেখে আসছেন এখানকার মানুষ। দেবি দুর্গাও এখানে সাধারণ রাজবংশী মেয়ে হিসাবেই মানুষের পুজো পেয়ে আসছেন। এই পুজো করে আসছেন আমগুড়ির বসুনিয়া পরিবার। তবে বসুনিয়া পরিবারের দুর্গা রাজবংশী পরিবারের মেয়ে হলেও তাঁর গায়ের রং লাল।

অন্যদিকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটশহর থেকে ১৫ কিমিদূরে বোয়ালদাঁড় গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্ভূক্ত ফুলহারা গ্রামে যে দুর্গাপুজো হয় সেই দেবী মূর্তি আসলে মনসা। আত্রেয়ী নদী সংলগ্ন এই গ্রামে প্রায় শ’খানেক পরিবারের বাস। গ্রামবাসীরা বহুকাল ধরেই নিষ্ঠাভরে দুর্গা পুজো করে আসছেন। কিন্তু তাদের অসুরদলনী মনসা রূপেই বন্দিত হন হয় সন্ধিপুজো থেকে দশমী পর্যন্ত। মনসা হলেও পুজো হয় দুর্গা পুজোর সব রীতিনীতি মেনে। ফুলহারা গ্রামের দুর্গামূর্তির রুপ মনসা হওয়ার কারণ হিসাবে বলা হয়; বহুকাল আগে এই গ্রামে ভয়ংকর সাপের উপদ্রব দেখা গিয়েছিল। সাপের উপদ্রব যাতে কমে তার জন্য গ্রামের একজনের বাড়িতে মনসা পুজো আরম্ভ হয়েছিল। তাতে নাকি সাপের উপদ্রব কমেছিল। এরপর থেকে গ্রামে দুর্গা পুজোর প্রচলন হলেও তারা মনসারূপী দুর্গামূর্তি বেছে নেয়।