এক নজরে

ফরোয়ার্ড ব্লকের সিংহ ও আন্দামান।

By admin

February 26, 2023

প্রথম পর্ব

আজ থেকে প্রায় ৩৫-৩৬ বছর আগে হঠাৎ করে একদিন একা একাই চলে গিয়েছিলাম ‘আন্দামান’। সেখানে থেকেও গিয়েছিলাম প্রায় তিন সপ্তাহ। সেই সফরটা ছিল বেশ ঘটনাবহুল। সে সময়ে বেশ কিছু ছবি তুলেছিলাম, তার কিছুই এখন আর নেই। অত বছর আগের স্মৃতিও অনেকটা ফিকে। তবুও কিছু বন্ধুর আবদারে স্মৃতি থেকে লিখে ফেললাম, কিছু কল্পনা অবশ্যই মিশে গেছে। তবে মূল ঘটনা একেবারেই বাস্তব। আজকের দিনে আকছার অনেকেই আন্দামান বেড়াতে যান তাই ভ্রমণ কাহিনির বর্ণনা এখানে বাহুল্য। আমি শুধু জাহাজে যাওয়ার সময়ের কিছু অভিজ্ঞতা ও আন্দামানের কিছু ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে চাইছি। পড়তেও পারেন না পড়লেও কোন ক্ষতি নেই।

যতদুর মনে পড়ে সালটা ১৯৮৩। লক্ষ্মী পুজোর ঠিক পরে পরেই আমি কলকাতায় এসেছি কোনো একটা কারণে। এটা স্পষ্ট মনে আছে দিনটা ছিল শুক্রবার। বাবুঘাটের বাসস্ট্যান্ডে টকঝাল আচার, কাঁচা পেঁয়াজের টুকরো, আর ছাতু খেয়ে মনে হল স্ট্রান্ডরোড ধরে হেঁটেই হাওড়া স্টেশনে যাবো। তখন বছর কুড়ি-বাইশের‍ যুবক, লুকিয়ে চুরিয়ে সিগারেট খেতে শুরু করেছি। কিন্তু কলকাতায় লুকবো কাকে? তাই বেশ নিশ্চিন্তে একটা ক্যপস্টেন সিগারেট (ফিলটার বিহীন, কাঁচির ছাপ দেওয়া, যেটাকে কেউ কেউ কাঁচি সিগারেটও বলতেন) ধরিয়ে হাঁটা লাগালাম।

‘শিপিং কর্পোরেশনের’ অফিসটার সামনে এসে মনে হল একটু বাথরুম করলে ভালো হতো। কলকাতার রাস্তায় এখনো যেখানে খুশি কুত্তার মতো ঠ্যাং তুলে ও কম্মটি সেরে নেওয়া যায়, তখন তো কথাই ছিল না। তবুও কিছু একটা ভেবে শিপিং করপোরেশনের অফিসে ঢুকে পড়লাম। দোতলায় উঠে বাথরুম সেরে বেরিয়ে দেখি এক কাউন্টারের সামনে বেশ কিছু লোক লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কৌতুহলী হয়ে জানলাম আন্দামান যাওয়ার জাহাজের টিকিটের লাইন। জাহাজ নাকি রবিবার ছাড়বে, মাঝে মাত্র একটি দিন। কত টাকা? মাত্র ১০০?

তখনকার দিনে ১০০ টাকা মোটেই কম নয়, অন্তত আমাদের মতো পরিবারের কাছে। আমার পকেটে শ’দুয়েক ছিল, তাই লাইনে দাঁড়িয়েই পড়লাম। টিকিট পাবোই এমন নিশ্চয়তা ছিল না, না পেলেও খুব একটা অখুশি হবো এমনটাও নয়। কিন্তু কি আশ্চর্য পেয়ে গেলাম ‘এম ভি হর্ষবর্ধনে’র ব্যাঙ্ক ক্লাসের টিকিট।

জাহাজ ছাড়বে রবিবার বিকাল তিনটায় খিদিরপুরের ‘তিন নম্বর ডক’ থেকে। কিন্তু আমাদের আসতে হবে দুপুর বারোটার মধ্যেই কারণ সেখানে নাকি মেডিক্যাল  চেক আপ হবে। আজ বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা, মাঝে মাত্র একটা গোটা দিন, কারণ রবিবার বেরোতে হবে সকাল সকাল। ভাবছিলাম ঝোঁকের মাথায় টিকিট কেটে কি ঠিক করলাম?  আন্দামানের কিছুই তো জানি না, তাও আবার জাহাজে চেপে একেবারে সমুদ্র পেরিয়ে। বাড়িতেই বা কি বলবো? অকপটেই বলি বেশ ভয় ভয় করছিলো। আর টাকা? আমার কাছে অবশ্য হাজার খানেক টাকা আছে, ভোটের সময় ‘সিংহ’ এঁকে পেয়েছিলাম।

কিছু দিন আগে ছিল পঞ্চায়েত ভোট। আমাদের ও অঞ্চলে তখন ‘আর এস পি’ আর ‘ফরোয়ার্ড ব্লকে’র দাপট ছিল বেশ। ‘গ্রাম পঞ্চায়েত’, ‘সমিতি’ দু জায়গায় দাঁড়িয়েছে ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থীরা, ঠিকঠাক সিংহ আঁকার লোক নেই। ‘হাত’,’কাস্তে হাতুড়ি তারা’, ‘কোদাল বেলচা’  কিংবা ‘কাস্তে ধান শিষ’ এঁকে ফেলা যায় কিন্তু সিংহ আঁকতে গিয়ে সবই হয়ে যায় শেয়াল। ছোট থেকেই একটু আধটু আঁকতে পারতাম, দেওয়াল লিখতে পারতাম ভালোই। সুতরাং আমার ডাক পড়লো। আমার আঁকা সিংহ যে খুব ভালো হতো এমনটা নয়, তবে ওই অঞ্চলের মধ্যে হয়তো খানিকটা ভালো। ওদের শেয়ালের যায়গায় আমারটা হয়ে যেত কেশর লাগানো বড় সাইজের বেড়াল। কেশরটা আঁকতাম খুব মন দিয়ে, আসলে কেশরেই বাজিমাত

(চলবে)