এক নজরে

মান্না দের জলসাঘরের একটি আশ্চর্য ঘটনা

By admin

May 01, 2023

প্রায় সব মানুষের জীবনেই এক বা একাধিক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে, যা সারা জীবন মনে থেকে যায়। কেউ সেই আশ্চর্য ঘটনাকে জীবনের সেরা সম্পদ মনে করেন, কেউ জীবনের বাঁক বলে মনে করেন। এমনও হতে পারে যে ঘটনাকে তিনি আশ্চর্য বলে ভাবছেন তা আমার আপনার কাছে অতি সাধারণ। কিন্তু তাতে কি, যদি ওই ঘটনা তার জীবনে পরম যত্নে লালিত হয়।সেরকমই একটি ঘটনার কথা আজ বলতে ইচ্ছে হল ১ মে বলে।উত্তর কলকাতার সিমলাপাড়ার একটি ছেলে কুস্তির আখড়া থেকে একদিন সুধাসাগরের তীরে গিয়ে দাঁড়ায়। যৌবনের ভাললাগা সঙ্গীত হয়ে ওঠে তাঁর একমাত্র স্বপ্ন-সাধনা। তারপর সংগীতের ধ্যানে মগ্ন সেই মানুষ গানের ভূবনে জ্বেলে দেন হাজার শিখার সঙ্গীতপ্রদীপ- মান্না দে। তাঁরই মুখে শোনা তাঁর জীবনের জলসাঘরের একটি ঘটনা…

এরপর মান্না দে ১৯৫৩-৫৪ সালের একটি ঘটনার কথা বললেন। ওই সময় তিনি দ্বিতীয়বার মুম্বাই গিয়েছেন। প্রসঙ্গত; তার আগে ১৯৪২ সালেও তিনি একবার মুম্বাই গিয়েছিলেন কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে-র সঙ্গে। বেশ কয়েক বছর মুম্বাইতে হিন্দি সিনেমা দুনিয়ায় সঙ্গীত পরিচালক তাঁর কাকার সহকারি হিসাবে কাজ করেছিলেন। কিছু গানও গেয়েছিলেন। তবে তখন তিনি প্রবোধচন্দ্র দে। জনপ্রিয়তা এবং প্রতিষ্ঠা স্বত্বেও কৃষ্ণচন্দ্র দে-র অসুস্থতার কারণেই তাঁরা কলকাতা ফিরে আসতে বাধ্য হন। তখন মুম্বাইতে থাকতে মান্না দের মন পড়ে থাকত কলকাতায়। কিন্তু কলকাতা ফিরে এসে তিনি মুম্বায়ের জন্যই ছটফট করতেন।

সেবার ফিরে এসে বেশ কয়েক বছর তাঁকে কলকাতাতেই অপেক্ষা করতে হয়। তবে ফের মুম্বাই যাওয়ার সুযোগ পান। এবার কিন্তু একা। এবারও শুরুতে অ্যাসিসট্যান্ট মিউজিক ডিরেকটর। একেবারে শুরুতে হরিপ্রসন্ন দাস। তারপর একে একে ক্ষেমচাঁদ প্রকাশ, শ্যামসুন্দর, অনিল বিশ্বাস, শচীন দেববর্মন, সি রামচন্দ্র প্রমুখ সঙ্গীত পরিচালকের সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন। এবার তিনি উঠেছেন নন্দ মজুমদারে বাড়িতে। তিনি গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের জ্যাঠতুতো দাদা, ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। মান্না দে-র গানের ভীষণ ভক্ত ছিলেন।

একদিন মান্না দে মুম্বাই রেডিও-তে গান গেয়ে বেরিয়েছেন। আচমকাই একজন বয়স্ক মানুষ তাঁর মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেন। মান্না দে থমকে দাড়ালেন। একেবারেই অচেনা মানুষ। মান্না দে জিঙ্গাসা করলেন, কিছু বললবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ বলবো বলেই তো রাস্তা আটকে দাঁড়ালাম। মান্না দে মনে মনে বিরক্ত হলেও বয়স্ক মানুষ বলে সেটা প্রকাশ করলেন না। তিনি সরাসরি জানতে চাইলেন, আপনি এখন কোনদিকে যাবেন? মান্না দে এবার আরও বিরক্ত হলেন, কিন্তু সংযত হয়েই বললেন, আমি যেদিকেই যাই আপনার জেনে কি কোনও উপকার হবে? বয়স্ক মানুষটি এবার প্রশ্ন করলেন আপনার বাড়ি কোথায়?

মান্না দে বিরক্ত হলেও বুঝলেন এই মানুষটি আন্তরিকভাবেই কিছু জানতে চাইছেন। যে কারণে ওখানে দাড়িয়ে মান্না দে ওই বয়স্ক মানুষটির একটার পর একটা প্রশ্নের উরত্তর দিয়ে গেলেন। এরপরে তিনি বলেন উনি যদি মান্না দে-র সঙ্গে ফেরেন তাতে আপত্তি আছে কি না। মান্না দে বোঝেন বয়স্ক মানুষটি আসলে গাড়িতে লিফট চাইছেন। মান্না দে রাজি হয়ে যান। তিনি কোথায় কতদূর যাবেন জানতে চাইলে বয়স্ক মানুষটি জানান; তিনি মান্না দে-র বাড়ির দিকেই যাবেন।

গাড়িতে উঠে দু-এক কথার পরেই বয়স্ক মানুষটি মান্না দে-কে সরাসরি বলেন, তিনি অনেকবার মান্না দের গান শুনেছেন। গান শুনে তিনি বুঝেছেন মান্না দে আরও ভাল করে গান গাইতে চান। এসব কথা শুনতে একজন তরুণ গায়কের ভাল লাগবেই। কিন্তু তিনি মান্না দে-কে অবাক করে দিয়ে বললেন, আমি তোমাকে গান শেখাবো। সেই মুহুর্তে মান্না দে বহু কষ্টে নিজের ধৈর্যকে সংযত করেন। তবে মনে মনে বলতে থাকেন, তুমি কে হে বাপু আমাকে গান শেখানোর। আমি মান্না দে, কলকাতা থেকে আরব সাগরের পারে এসে সঙ্গীতের কাজ করছি। আমার কাকা আমার গুরু কৃষ্ণচন্দ্র দে, এছাড়া গান শিখেছি দবীর খাঁ, আমন আলী খাঁর মতো ওস্তাদদের কাছে।

মান্না দে এরপর জিঙ্গাসা করেন, মহাশয়ের নাম জানতে পারি? তিনি উত্তরে বলেন, আমি আবদুল রহমান খাঁ, সুরেশকুমার নামে আমি মুম্বাই দ রেডিওতে লাইট ক্লাসিকাল গান গাই। মান্না দে তাঁর নাম শুনে গাড়িতে বসেই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন। যে গুরুর কাছে শত অনুরোধের পরও নাড়া বাধা যায় না, তিনি কিনা নিজে এসে মান্না দে-কে গান শেখাতে চাইছেন।

মুম্বাইতে অনেক দিন মান্ন দে আবদুল রহমান খাঁর কাছে তালিম নিয়েছিলেন। মান্না দে জানান, তিনি যে বেসিক সং কিংবা ফিল্মি সঙে শাস্ত্রীয় সংগীতের যে কোনও কারুকাজে সচ্ছন্দ তার কারণ পাতিয়ালা ঘরানার আবদুল রহমান খাঁয়ের তালিম।