এক নজরে

অমৃতসর-লক্ষ্ণৌ ভ্রমণ

By admin

March 05, 2024

প্রথম পর্ব

তিন ঘন্টা দেরীতে অবশেষে অমৃতসর রেলওয়ে জংশন স্টেশনে দুর্গিয়ানা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস সুপার স্লো হয়ে ঢুকল রাত আটটা দশে। অটোচালক ও হোটেলের দালালদের ছোবল এড়িয়ে স্টেশনের বাইরে এসে বুকিং.কম্ এর অ্যাপে একটা হোটেল দেখে মালপত্র নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। জি টি রোড ক্রস করে দুপা হেঁটেই প্রথমে নজরে এল হোটেল মাঝা। সাড়ে সাতশ টাকায় মোটামুটি একটা ঘর পেলাম। আজ রাত্রিটা-তো থাকি, পরে দেখা যাবে।

হোটেলে মালপত্র রেখেই গেলাম জি টি রোডের উপরই স্টেশনের ঠিক উল্টো দিকে লাভলি প্রিতম ধাবায়। একশো আশি টাকায় স্পেশাল ভেজ থালি। ভাত, তরকা, ডাল, পনির বাটার মশালা, দু পিস্ লচ্ছা পরোটা, পাঁপড়, স্যালাড। একটা থালি দুজনে ভাগ করে খেলাম। আমাদের কথাবার্তা শুনে লোকগুলি বুঝল যে আমরা বাঙালি। এই দোকানে একজন বর্ধমানের বঙ্গসন্তান কাজ করে। ফেরার পথে একটা স্প্রাইট কিনলাম।

হোটেলে ঢুকেই গরম জলে দুজনে ভাল করে স্নান করলাম। বিরক্তিকর ট্রেন যাত্রায় আমি আড়াইটে নাগাদ একটা ঘুম দিয়ে উঠে তোয়ালে জলে ভিজিয়ে সারা গা মুছে নিয়েছিলাম। তাতে বেশ কিছুটা আরাম পেয়েছিলাম। ছোট্ট বাথরুমে ঢুকতে ও বেরোতে বেশ ঘেন্না লাগছিল। কমোডে বসেও ভয় লাগছিল, যদি ইউটিআই হয়? স্যাভলন ছিটিয়ে তারপর বসেছি। কমোড সাওয়ার দিয়ে এত ধীরগতিতে জল আসছিল যে একটা মশাকেও তাড়ানো যাবেনা।

বাতানুকুল কম্পার্টমেন্টেও আরশোলার একটা ছোট সংস্করণ ঘুরছে। মাঝে মাঝে দুর্গন্ধ নাকে আসছে। কোনও স্প্রের ব্যবস্থা নেই। আবার এক ছুপারবাইজার এসে ফিডব্যাক্ নিল।আরএসি-র যাত্রীরা বার্থ না পেয়ে মেঝেতেই বিছানা পেতে শুয়ে পড়েছে। কী বাজে দৃশ্য!

খাবার, চা, কফি, জল ইত্যাদির বিক্রেতারা সচল ছিল। আমার বোনের কল্যাণে সকালে বেরোনোর আগে ভাত ও কাঁচা কুমড়োর ছক্কা, সঙ্গে বেগুন ভাজা দিয়ে প্রাতঃরাশ সাঙ্গ করেছি। দুপুর দেড়টা নাগাদ ট্রেনে ওর বানানো রুটি, বেগুনভাজা, আলু চচ্চড়ি ও মিষ্টি দিয়ে ভালোই স্বাস্থ্যকর মধ্যাহ্নভোজন সারলাম। বিকেলে বোনের বানানো কেক ও মিষ্টি খেলাম। আর খেলাম আপেল ও কমলা লেবু। রাতে আমি খেলাম রুটি আর আলু চচ্চড়ি, সঙ্গে মিষ্টি। বোন মুড়ি দিয়ে আলু চচ্চড়ি আর মিষ্টি খেল।

এর মাঝে বেশ কয়েকপ্রস্থ চা ও কফি, বিস্কুট, লজেন্স, বাদাম তক্তি খেয়েছি। আর দুচোখ ভরে দেখেছি বাইরের প্রকৃতির পরিবর্তন।কখনও ধানক্ষেত, কখনও আখ ও সরষের ক্ষেত। মাঝে পেয়েছি ছোটনাগপুর মালভূমির মাতাল করা দৃশ্য! কলকাতা, আসানসোল, ধানবাদ, গয়া, সাসারাম, মোঘলসরাই(অধুনা দীন দয়াল উপাধ্যায়), বেনারস, লক্ষ্ণৌ, মোরাদাবাদ, সাহারাণপুর, আম্বালা, লুধিয়ানা, জলন্ধর, বিয়াস, অমৃতসর।

হাওড়াসহ বিভিন্ন এলাকার ষাট সত্তরজন ছেলে লক্ষ্ণৌ নামল, ঘুড়ি ওড়াবে ও প্যাঁচ শিখবে। লক্ষ্ণৌ নাকি ঘুড়ি ওড়ানোতে এদেশে এক নম্বরে।ইংরেজদের দ্বারা তাড়িত নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ্ খিদিরপুরে নিয়ে আসেন ঘুড়ি ওড়ানো ও বিরিয়ানির সংস্কৃতি। ছেলেগুলোর চীৎকার, চেঁচামেচিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। তবে ওরা ভালো। অনেক গল্প হোলো। ঘুড়ি নিয়ে অনেক তথ্য পেলাম।

ক্রমশ…