এক নজরে

অমৃতসর-লক্ষ্ণৌ ভ্রমণ

By admin

March 23, 2024

চতুর্থ পর্ব

গতকাল ওয়াগা বর্ডার থেকে ফেরার পথে আর কোথাও যাত্রীরা নেমে ছবি তুলতে চায়নি। এমনিতেই অন্ধকারে ছবি উঠবে না। ক্লান্তিতে সবারই ফেরার তাড়া ছিল। আজ পয়লা মার্চ, সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা স্নান করে বেরিয়ে পরলাম। প্রীতম ধাবায় খেলাম পনির কুলচা। সঙ্গে ঘুঘনি আর একদলা মাখন। কুলচা ময়দা দিয়ে তন্দুর রুটির মতো সেঁকা। উপরে ধনেপাতা কুচি ও মাখনের দলা। সাথে চা।

এরপর? বৃষ্টি হচ্ছে। হোটেলের সামনের বাজারে ছাতার খোঁজ করে পেলাম না। একটা ব্যাটারিচালিত অটোতে উঠে বসলাম। চলো দুর্গিয়ানা মন্দির। কিছুদূর চলার পর দেখি স্বর্ণমন্দিরের দিকে চলেছি। কাঁহা যাতা হ্যায় ভাই? ইয়ে তো গোল্ডেন টেম্পেল যানে কা রাস্তা হ্যায়! কোই বাত নেহি। বুঝুন ব্যাপারটা। যদিও ব্যাপারটা এক কিলোমিটারের মধ্যে। অটো মুখ ঘুরিয়ে চলে শেষে নামিয়ে দিল দুর্গিয়ানা মন্দির।

বেশ বৃষ্টি পড়ছে। ভিজে ভিজেই গেলাম জুতো ঘরে।একজন দন্ত বিকশিত করে জুতো নিতে নিতে হাত জোড় করে বলল, বলুন, জয় শ্রীরাম! কিউঁ? কিঁউকে রাম ভগবান হ্যায়। তো, দুর্গিয়ানা মন্দির কাঁহা হ্যায়? এই তো দুর্গিয়ানা মন্দির হ্যায়! আপ লোগ পুরি হালুয়া নেহি খায়া? ও হো! বহুত মিস্ কিয়া। যাও, যা কে খাও।ভাবলাম বোধহয় বিনামূল্যে খাওয়া। আর কথা বাড়ালাম না। নির্দেশ দেখে দেখে মন্দিরের দিকে খালি পায়ে বৃষ্টির জল মাড়িয়ে চলছি। দেখি পয়সার বিনিময়ে পুরি হালুয়া বিক্রি হচ্ছে। তখনি বুঝে গেছি যে এটা বজ্জাতদের বাসা।

কতগুলি দোকানে পুজোর ডালি বিক্রি হচ্ছে। আমার রামঠাকুরস্নাত বোনের ওসবে মতি নেই। এগিয়ে গিয়ে একটা দোকান থেকে চারশ টাকা দিয়ে দুটো ভাঁজকরা লেডিজ্ ছাতা কিনলুম। তারপর চললাম দুর্গিয়ানার মূর্তির দিকে। ডানদিকে দেখি লেখা, হনুমানজী কা মন্দির। সোজা গিয়ে দেখি স্বর্ণমন্দিরের নকল একটা মন্দির। জলের মধ্যে, সেতু দিয়ে যেতে হয়। পৌঁছে দেখি, রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। পুরোহিতদের শুধালাম, দুর্গামাতাকি মূর্তি কাঁহা হ্যায়?-এই তো হ্যায়।-ইয়ে তো রাধাকৃষ্ণ কা হ্যায়!-আরে ভাই, রাধাকৃষণইতো দুর্গাই হ্যায়! এমন সময় আর এক পুরোহিত বলল যে, বাহার যাকে বাঁয়ে তরফ সাতশ বরষ কা পুরানা দুর্গামাতাকি মূর্তি হ্যায়। বুঝলাম, সবই ব্যবসা। স্বর্ণমন্দিরের ব্যবসার নকল করে এখানে হিন্দুদের থেকে পয়সা খেঁচার ধান্দায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠান। সুবিধাও আছে। এখানে অনেক দেবতাকে রেখেছে। দক্ষিণার পরিমাণও বেশি।

দুর্গিয়ানা মন্দিরে দুর্গিয়ানারই প্রাধান্য অপ্রতুল! শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেলাম সাতশো বছরের পুরোনো দুর্গার মূর্তি। দুর্গা কাঁহা হ্যায়?-এ হি তো হ্যায়! দেখি একটা পিতলের ছোট্ট মুখ। এটাই দুর্গা। তার একপাশে সরস্বতী, আর এক পাশে নেপালী দুর্গা। কন্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে, জ্ঞান সম্মানহারা!-এসব মানছে কারা? রুদ্ধ করেছে আমার ভুবন দুঃস্বপনের তলে।তাই তো তোমায় শুধাই অশ্রুজলে -এই বলে, তাকালাম যেই ঊর্ধ্বতলে, একটি পায়রা দিল হাগিয়া মোর কপালের তলে। হনুমান একটা মনুষ্যেতর প্রাণী। তাই তার মন্দিরে আর যাইনি। এদিকে মাতা দুর্গিয়ানার আশীর্বাদে আমাদের দুজনেরই ছাতার অশেষ দুর্গতি হোলো। ছাতাদুটোরই সেলাই ছিঁড়ে গেছে। দোকানদার পুরো পয়সা ফেরত দিল।

দুর্গিয়ানা মন্দিরের ভরপুর অভিজ্ঞতার পর একটা টোটোতে (ব্যাটারীচালিত অটো) করে গেলাম আহুজা লস্যির দোকানে। অনবদ্য কেশর লস্যি! উপরে অনেকটা দুধমন্থনে পাওয়া মাখন। পেট ভরে টইটম্বুর! পাশেই ওদেরই মিষ্টি ও বেকারীর দোকান। কয়েকরকমের মিষ্টি নিলাম।

চলবে…