HG22X5

এক নজরে

ইলিয়াডের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বীর অ্যাকিলিস

By admin

December 04, 2023

ট্রয় যুদ্ধের পটভূমিকায় রচিত হোমারের ‘ইলিয়াড’মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র অ্যাকিলিস গ্রিক পুরাণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বীর। কথিত, ট্রয় যুদ্ধের সব যোদ্ধাদের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন ছিলেন অ্যাকিলিস। তবে গোড়ালির কারণে অপরাজেয় এই যোদ্ধার জীবনাবসান হয়। অ্যাকিলিস শরীরের ছোট্ট একটি কারণে প্রাণ হারানোর পর অ্যাকিলিসের গোড়ালি পরিণত হয় প্রবাদ বাক্যে।

গ্রিক পুরাণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বিচারের ভার ছিল থেমিসের ওপর। তবে থেমিস ছিলেন টাইটান, যে কারণে তিনি দেবীর মর্যাদা পাননি। কিন্তু দেবী না হয়েও সারাক্ষণ স্বর্গ, মর্ত্য, আকাশ আর  বায়ুমণ্ডলের একচ্ছত্র অধিপতি, গ্রিকদের প্রধান দেবতা জিউসের ধারেকাছেই থাকতেন তিনি। থেমিসের পরামর্শেই জিউস পেলেউসের সঙ্গে সাগরপরী থেটিসের বিয়ে দেন। তবে কেউ কেউ বলেন অন্যতম প্রধান ও স্মরণীয় টাইটান প্রমিথিউস নিজে জিউসকে জানিয়েছিলেন, থেটিস এমন এক সন্তানের জন্ম দেবে যে জ্ঞানে-গুণে তার বাবাকেও ছাড়িয়ে যাবে। তখন জিউস তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাগর দেবতা পোসাইডনের সঙ্গে বিরোধ ভুলে আয়োলকাসের রাজা পেলেউসের সঙ্গে থেটিসের বিয়ে দেন। এই পেলেউস-থেটিসের ঘরেই জন্ম নেন মহাবীর অ্যাকিলিস।

পেলেউস এবং থেটিসের বিয়েতে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় কলহদেবী এরিস ‘শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর প্রাপ্য’বাক্যখচিত স্বর্ণ আপেল বিবাহসভায় নিমন্ত্রিত তিন দেবী- হেরা, অ্যাথেনা এবং আফ্রোদিতির মাঝখানে ছুঁড়ে দিয়ে গ্রিক ও ট্রয়ের যুদ্ধের বীজ বপন করেন। অ্যাকিলিসের জন্মের পরে ভাগ্যদেবীরা থেটিসকে জানিয়েছিলেন, অ্যাকিলিস হয় নিরুপদ্রব দীর্ঘজীবন লাভ করবে নয়তো ট্রয়ের যুদ্ধে বীরের মতো মৃত্যুবরণ করবে। পুত্রস্নেহে কাতর থেটিস দ্বিতীয় সম্ভবনার ভয়ে রীতিমতো ভীত হয়ে পড়েন। ছেলেকে নিয়তির হাত থেকে বাঁচাতে প্রথমে ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে ছুটে যান স্টিক্স নদীতে। অ্যাকিলিসকে আঘাতের অসাধ্য, চিরঞ্জীব বীরে পরিণত করার জন্য এই নদীকেই তিনি বেছে নেন আশ্রয়স্থল হিসেবে।

স্টিক্স হলো স্বর্গ আর মর্ত্যের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা পবিত্র একটি নদী। এমনকি দেবতারাও এই নদীকে পবিত্র হিসেবে মানেন। এই নদীর জল শরীরের যেখানে স্পর্শ করানো হয়, সে জায়গাগুলি কোনো ব্যথা কিংবা জরা স্পর্শ করতে পারে না। থেটিস তার ছেলের সম্পূর্ণ শরীর এই নদীর জলে ডুবিয়ে দেন। ফলে অ্যাকিলিসের শরীরেও ব্যথা বা জরা স্পর্শ করতে পারেনি কোনোদিন। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল অ্যাকিলিসের গোড়ালি। কারণ জলে ডুবোনোর সময় থেটিস অ্যাকিলিসের গোড়ালি ধরে রেখেছিলেন। ফলে স্টিক্স নদীর জলে ভিজতে পারেনি অ্যাকিলিসের গোড়ালি।  গোড়ালির আঘাত থেকেই যায় আর সেটিই ছিল অ্যাকিলিসের একমাত্র দুর্বলতা। এই দুর্বলতার কারণেই অ্যাকিলিসের মৃত্যু হয়।

বীরত্বের কারণেই অ্যাকিলিস ট্রয়ের যুদ্ধে যোগ দেন। গ্রীস আর ট্রয়ের মধ্যে এই যুদ্ধের মূল কারণ ছিল ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিসের একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত। আফ্রোদিতি তাকে বর দিয়েছিলেন, মর্ত্যের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হেলেনের সঙ্গে তার প্রেম করিয়ে দেবেন। আফ্রোদিতি তার কথা রাখেন। কিন্তু গণ্ডগোল বাধে অন্য জায়গায়। এই হেলেন ছিলেন গ্রীকদের অন্যতম প্রধান রাজ্য স্পার্টার রাজা মেনেলাউসের স্ত্রী। সর্বনাশা রূপ তাকে গ্রিক ও রোমান পুরাণের সর্বাধিক আলোচিত নারী চরিত্রে পরিণত করে। হেলেনের প্রেমের টানে প্যারিস ছুটে যান স্পার্টায়। আতিথ্য গ্রহণ করেন মেনেলাউসের। তার স্ত্রীর সঙ্গে প্রেম, পরে মেনেলাউসের অবর্তমানে হেলেনকে নিয়ে পালিয়েও আসেন। এই ঘটনায় গ্রীস ও ট্রয়ের মধ্যে শুরু হয় ভয়ংকর এক যুদ্ধ যা ইতিহাসে ট্রয়ের যুদ্ধ নামে পরিচিত।  যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব দেখান অ্যাকিলিস।  ট্রয়ের সেরা বীর হেক্টরকে মুখোমুখি লড়াইয়ে পরাস্ত করেন এই বীর যোদ্ধা।

যুদ্ধশেষে গ্রীকরা জয়ী হয় ঠিকই, কিন্তু জয়ের প্রাক্কালে প্রাণ হারান অ্যাকিলিস। মারা যান ওই প্যারিসের হাতেই। যুদ্ধবিদ্যায় তেমন পারদর্শী না হলেও ধনুর্বিদ্যা ভালোই জানতেন প্যারিস। তার ছোঁড়া একটি বিষমাখা তীর এসে লাগে অ্যাকিলিসের গোড়ালিতে, শরীরের ছোট্ট একটি অংশের দুর্বলতা দিয়েই মৃত্যু অ্যাকিলিসের দেহে প্রবেশ করে।  জানা যায়, ট্রয় যুদ্ধ চলাকালে অ্যাকিলিস তার মা থেটিসকে অনুরোধ করেন যেন একটিবারের জন্য হলেও তিনি হেলেনের সঙ্গে মিলিত হতে পারেন। যুদ্ধকালীন সময়ে এই অনুরোধ রক্ষা করা এক প্রকার দুঃসাধ্য ব্যাপার হলেও মা থেটিস অন্যভাবে পুত্রের আবদার মেটান। স্বপ্নের মধ্যে মিলিত হন অ্যাকিলিস আর হেলেন। এই কারণে গ্রিক পুরাণে হেলেনের পঞ্চস্বামীর মধ্যে অ্যাকিলিসকেও গণ্য করা হয়। তবে হেলেন নয়, লাইকোমেডিসের কন্যা ডাইডামিয়ার গর্ভে জন্মগ্রহণ করে অ্যাকিলিস পুত্র নিওপ্টলেমাস।