এক নজরে

শিবরামের প্রথম ও শেষ চুমু

By admin

December 13, 2021

ইংরেজ পুলিশ স্কুলে পড়া ছেলেটিকে সন্দেহ করবে না। তাইছেলেটির পকেটে পিস্তল দিয়ে সভার মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল। ভয়ে উত্তেজনায় ছেলেটি ঘামছে। ওদিকে সাহেব মঞ্চে উঠছেন। আশপাশে দাড়িয়ে থাকা তরুণ বিপ্লবীরা তাকে ইশারা করে। কাঁপা কাঁপা হাতে ছেলেটি পকেটে হাত ঢুকিয়ে পিস্তল বের করতে যাবে ঠিক তখনই সভা মঞ্চের মাইক থেকে ঘোষণা করা হল, ‘শিবরাম চক্রবর্তী মঞ্চে উঠে এস, উদ্বোধনী সঙ্গীত গাইতে হবে’।

ভেস্তে গেল সাহেব মারার গোটা পরিকল্পনা।সাহেবকে গুলি চালানোর বদলে শিবরামকে মঞ্চে উঠে গাইতে হলউদ্বোধনী সঙ্গীত।কিন্তু তার আগেই সেই ছেলেটি  দেশের কাজ করার জন্য বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছে। মনে মনে ভাবলো ছেলেটি, তাঁর সংকল্প তাঁকে পালন করতেই হবে। তা না হলে এ জীবন বৃথা। খবর ছড়িয়ে গেলদেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ আসছেন চাঁচোলে।

সেদিন দেশবন্ধুর সভায় তাঁর বক্তৃতা শুনতে গোটা এলাকার মানুষ হাজির হন। উপস্থিত হয়েছিলেন কিশোর শিবরামও।সেদিন কিশোর শিবরাম দেশবন্ধুর ভাষণ শুনে এমন উদ্বুদ্ধ হলেন যে দেশবন্ধুর ফেরার ট্রেনের ওই বগিতেই লাফ দিয়ে উঠে পড়লেন। সোজা দেশবন্ধুর সামনে গিয়ে বললেন, ‘আপনার সঙ্গে কলকাতায় যাব।’ দেশবন্ধু জানতে চাইলেন, ‘কী করবে কলকাতা গিয়ে?’ শিবরামের সাফজবাব, ‘স্বদেশী করব।’

সাহেবকেমারতে যিনি পিস্তল ধরেছেন আবার পেট চালাতে রাস্তায় কাগজের হকারি করেছেন,রাজনীতি করেছেন, জেল খেটেছেন, ফুটপাথে রাত্রিবাস করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, আজীবন মেস-জীবন যাপন করেছেন- এক বিচিত্র জীবন ছিল তাঁর। আবার তিনিই বাংলা সাহিত্য ভান্ডারের রম্যগুরু। তবে শিবরামের সাহিত্য-জীবনের শুরুকবিতারচনা দিয়ে। প্রথম কবিতারপ্রকাশ’ভারতী’ পত্রিকায়। প্রথম প্রকাশিত ‘মানুস’ ও ‘চুম্বন’বই দুটিও কবিতার। দুটিই প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালে।পরে বেশ কিছু রাশভারি লেখা লিখলেও ধীরে ধীরে মনোযোগ দেন রম্যসাহিত্যে বা ছোটদের জন্য লেখায়। এছাড়াও লিখেছিলেন বেশ কিছু উপন্যাস, নাটক এবং প্রবন্ধ।

কৈশোরেই শিবরাম লিখে ফেলেছিলেন ‘চুম্বন’ নামে দুঃসাহসিক একটি কবিতা। সেই সময়ে কবিতা বা সাহিত্যভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে সেই বয়সকে তো দুঃসাহস বলতেই হয়। যদিও ওই বয়সেই আচমকা হলেও অভাবনীয়ভাবে চুম্বনের অভিঙ্গতা তিনি পেয়ে গিয়েছেন। মালদহে চাঁচলে থাকাকালীন পাশের বাড়ির কিশোরী রিনি যার সঙ্গে তার ঘোরাঘুরি, খেলাধুলা এবং নিজেদের অজান্তে বাল্যপ্রেম তার থেকেই শিবরাম সেই অতুলনীয় অভিঙ্গতা পেয়েছিলেন।

কলকাতা থেকে নতুন গুড়ের সন্দেশ নিয়ে এসেছিলেন বাবা আমাদের জন্য। সকালে উঠে হাতমুখ ধুতেই মা দুটো বড় বড় তালশাঁস সন্দেশ খেতে দিলেন আমায়। অমনি আমি সেই সন্দেশ হাতে করে ছুটেছি রিনির বাড়ি। রিনিকে ভাগ না দিয়ে খাওয়া যায়? আমি গিয়ে হাতের মুঠো খুলে দেখালাম রিনিকে। তক্ষুনি সে আমার হাত থেকে নিয়েদুটো সন্দেশই মুখে পুরে দিয়েছে।

‘ওমা, আমি যে একদম খাইনি রে এখনো।’ বলতেই না, সে মুখ থেকে বার করে আমার হাতে নয়, পাখি-মা তার ছানাকে যেমন করে খাওয়ায়, তেমনি করে তার মুখের গ্রাসের খানিকটা আমার মুখের মধ্যে পুরে দিয়েছে। মুখের ভেতরে মুখ ঢুকিয়ে।

সেই প্রথম চুমো পাওয়া আমার জীবনে। সন্দেশের সঙ্গে মিশিয়ে চুমো খাওয়া সেই! প্রথম অমৃত আস্বাদের জন্য আমি রিনির কাছে চিরঋণী।

প্রথম চুমু ওমন করে সন্দেশের সঙ্গে মিশিয়ে পেয়েছিলাম বলেই কি ওই চুমু জিনিসটা এমন মিষ্টি থেকে গেলো আমার কাছে চিরদিন? নাকি, চুমোর সঙ্গে মাখানো ছিল বলেই কি যতো মেঠাই এমন মিঠে লাগে আমার কাছে?