এই প্রথম বার্মিংহামের এজবাস্টনে টেস্ট জিতলো ভারতীয় ক্রিকেট দল। ১৯৬৭ সাল থেকে ভারত এই মাঠে ম্যাচ খেলেছে কিন্তু রবিবারের পর্যন্ত জিততে পারেনি। সুভমান গিলের নেতৃত্বে তৈরি হল নতুন ইতিহাস। বার্মিংহাম টেস্ট জয় বিদেশের মাটিতে সবথেকে বড় টেস্ট জয়। কেবল তাই নয়, ২০১৯ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৩১৮ রানে ম্যাচ জিতেছিল আর বার্মিংহামে জিতল ৩৩৬ রানে। এজবাস্টনে এর আগে কোনও এশীয় দেশ টেস্ট ম্যাচ জেতেনি। ফলে শুধু ভারতীয় দল হিসেবেই নয়, এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত রেড-বল ম্যাচে প্রথম এশীয় দল হিসেবেও ম্যাচ জিতল।
সুভমান গিল প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক যিনি বার্মিংহামে টেস্ট ম্যাচে জয় পেলেন। এই মাঠে আগে ৮ জন ভারতীয় অধিনায়ক (পতৌদি, ওয়াদেকর, ভেঙ্কটরাঘবন, কপিল, আজহার, ধোনি, কোহলি, বুমরাহ) ছিলেন কিন্তু কেউ জিতেননি। শুভমান গিল কেবল প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবেই নয়, প্রথম এশীয় অধিনায়ক হিসেবেও বার্মিংহামে টেস্ট ম্যাচ জিতে ইতিহাস তৈরি করলেন। ইংল্যান্ডে এটিই ভারতের ১০ম টেস্ট জয়। গিল হলেন সপ্তম ভারতীয় অধিনায়ক যিনি ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেলেন। তার আগে অজিত ওয়াদেকর, কপিল দেব, সৌরভ গাঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়, এমএস ধোনি এবং বিরাট কোহলি এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। কোহলি ৩টি টেস্ট জিতেছেন। গিল অধিনায়ক হিসেবেও এবং সবথেকে কম বয়সে প্রথম বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয়ের রেকর্ড গড়লেন। ছাপিয়ে গেলেন গাভাসকরকে। এবং দ্বিতীয় টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪৩০ রান করে গাভাসকরের ভারতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট-ম্যাচ রান ৩৪৪-এর রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। শুভমান গিলের ৪৩০ রান একটি টেস্টে বিদেশি ব্যাটারদের সর্বোচ্চ। ছাপিয়ে গেলেন মার্ক টেইলরের ৪২৬ রানের রেকর্ডকে। টেস্ট এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান করার নিরিখেও পঞ্চম স্থান করলেন গিল। গ্রাহাম গুচ, টেইলর, লারা, সাঙ্গাকারা–এর পর যারা টেস্টে ৪০০+ রান করেছেন।
শুভমান গিল বিশ্বের একমাত্র ব্যাটার যিনি কোনও টেস্ট ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ২০০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫০+ রান করেছেন। ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে টেস্টে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করার তালিকায় গাভাসকর ও কোহলির পাশে নাম লেখালেন শুভমান গিল। প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি ও দ্বিতীয় টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করা ভারতীয় ব্যাটারদের তালিকায় শুভমান গিল গাভাসকরের পর দ্বিতীয়। প্রথম দুই টেস্টে তিন সেঞ্চুরি – কোহলির পর দ্বিতীয় ভারতীয় অধিনায়ক হলেন শুভমান গিল। তাঁর ২৬৯ রানের ইনিংস হল কোহলির ২৫৪ রানকে ছাপিয়ে ভারতীয় অধিনায়কদের সর্বোচ্চ। ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে বিদেশে সর্বোচ্চ তেন্ডুলকারের ২৪১ রান (২০০৪, সিডনি) ছাড়াল। ইংল্যান্ডে টেস্টে সর্বোচ্চ রান করা বিদেশি অধিনায়ক হওয়া বব সিম্পসন (৩১১, ১৯৬৪) ও গ্রেম স্মিথ (২৭৭ + ২৫৯, ২০০৩)–এর পর তৃতীয়। ইংল্যান্ড সফরে সেহওয়াগ, দ্রাবিড় এর পর ২৫০+ রান করা তৃতীয় ভারতীয় হলেন গিল। এছাড়া ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে পতৌদি, গাভাসকর, তেন্ডুলকার, ধোনি এবং কোহলির পর ডাবল সেঞ্চুরি করা ষষ্ঠ ব্যাটার হলেন গিল।
শুভমান গিল (২৫ বছরে ২৯৮ দিনে) পতৌদির (২৩ বছর ২৩৯ দিন) পর দ্বিতীয় কমবয়সী অধিনায়ক যিনি ডাবল সেঞ্চুরি করলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্টে তিন ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরি করা ভারতীয়দের মধ্যে আজহারউদ্দিন, ভেঙ্গসরকার, দ্রাবিড়ের পর চতুর্থ হলেন গিল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অধিনায়ক হিসেবে দুই টেস্টে ধারাবাহিক সেঞ্চুরির ইতিহাসেও তিনি তৃতীয়। প্রথম দুই টেস্টে শতরান করা ভারতীয় অধিনায়কদের তালিকায় কোহলির পরে দ্বিতীয়। প্রথম ভারতীয় ও বিশ্বে পঞ্চম ক্রিকেটার যিনি একটি টেস্টে চারটি ১০০+ পার্টনারশিপে জড়িত: হানিফ মুহাম্মদ, গুচ, টেইলর, রুট। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৯৯—ম্যাচে ১০/১৮৭ (৪১.১ ওভার)। ইংল্যান্ডে খেলায় ভারতের সেরা রেকর্ড (চেতন শর্মার ১০/১৮৮ ছাপিয়ে, ১৯৮৬ এডজবাস্টনে)। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ভারতের রানের নিরিখে সবথেকে বড় টেস্ট জয়ের তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট জয়। ঘরের মাঠে ৪৩৪ রানে ম্যাচ জয় ভারতের সবথেকে বড় জয়। বার্মিংহাম জায়গা করে নিল চতুর্থ নম্বরে। ইংল্যান্ডের মাটিতে এর আগে এত বড় ব্যবধানে টেস্ট ম্যাচ জিততে পারেনি কোনও ভারতীয় দল। বার্মিংহাম টেস্ট জয় সেই নিরিখেও জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।