বলিউডের অন্যতম সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন আরেক সুপারস্টার সম্পর্কে একসময় বলেছিলেন, তিনি নিজে এই জায়গায় আসতে পেরেছিলেন একটি ছবিতে ওই সুপারস্টারেরসঙ্গে অভিনয় করতে পেরে। বলিউডের ওই দুই সুপারস্টার হলেন রাজেস খান্না এবং অমিতাভ বচ্চন। আর এই কথাটি রাজেস খান্না সম্পর্কে বলেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। দুই সুপারস্টার অভিনীত ছবির নাম ‘আনন্দ’। প্রসঙ্গত, ওঁরা কেউই তখনও সুপারস্টার হননি। আনন্দ ছবির চিত্রনাট্যকার গুলজারের কথা থেকে জানা যায়, হৃষীকেষ মুখোপাধ্যায়ের ‘আনন্দ’-এর জন্য রাজেস খান্না নামমাত্র পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন। তবে এ কথা ঠিক বলিউডে রাজেস খান্নাই প্রথম সুপারস্টার।
গত শতকের ষাটের দশকের শেষ থেকে গোটা সত্তর দশক বলিউডের সুপারস্টার ছিলেন কাকা বা রাজেশ খান্না। এই সময় জুড়ে তাঁর কোনও প্রতিদ্বন্দি ছিল না। ওই পুরোসময়টাই বলিউডকে তিনি একাই মাতিয়ে রেখেছিলেন। উজ্জ্বল ক্যারিয়ার, প্রেম ও বিয়ে সব দিক থেকেই আলোচিত ছিলেন সুপারস্টাররাজেশ খান্না। তাঁর আগে দিলীপ কুমার, দেবানন্দ সবাই ছিলেন স্টার কিন্তু রাজেশ খান্না ছিলেন সুপারস্টার। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ এই তিন বছরে ১৫টি হিট ছবির রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। এই রেকর্ড বলিউডে বিরল। রাজেশ খান্না শুধু হিট ছবি নয়, তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন তাঁর নিজস্ব স্টাইল ও ফ্যাশনের জন্য। রাজেস খান্নার পরা শার্ট ও প্যান্টের বিশেষ স্টাইলও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল তখনকার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। তাঁর বিশেষ কাটের শার্টটিকে আজও ‘গুরু পাঞ্জাবি’ বা কলার বলা হয়। এ ছাড়া তাঁর পরা বিশেষ কাটের সাফারি-কুর্তা ব্যাপক ভাবে চালু হয়ে যায়।
মুম্বাইয়ের বাঙালি মহলে একটা সময় বেশ চালু ছিল, রাজেশ খান্নার সুপারস্টার হয়ে ওঠার পিছনে বোম্বের বাঙালিদের হাত রয়েছে। তলিয়ে দেখলে কথাটির সত্যতা অস্বীকার করা যাবে না। রাজেশ খান্না মুম্বাইয়ে প্রথম পাকাপাকি জায়গা পান ‘আনন্দ’ ছবিতে। সেই ছবিটি বানিয়েছিলেন হৃষীকেশ মুখার্জি। ওই ছবিরঅন্যতম চরিত্র ভাস্কর ব্যানার্জি ওরফে অমিতাভ বচ্চনের উদ্দেশ্যে তাঁর ‘বাবু মশাই’ সম্বোধন এতটাই জনপ্রিয় হয় যে সারা দেশে বাঙালিদের সমার্থক শব্দ হিসেবে উচ্চারিত হত। একথাও বলা হয়ে থাকে, রাজেশ খান্নাকে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেন শক্তি সামন্ত তাঁর‘আরাধনা’, ‘অমর প্রেম’ প্রভৃতি ছবিতে। তথ্য অনুযায়ি রাজেশ খান্নার অধিকাংশ ছবির গানেই রয়েছে কিশোর কুমার। রাজেশের লিপে প্রায় আশিরটিও বেশি গান গেয়েছেন কিশোর কুমার।মান্না দে-ও রাজেশ খান্নার লিপে কয়েকটি কালজয়ী গান গেয়ে গেয়েছেন।সেই সব হিট গানের সুর করেছেন শচীন দেব বর্মন, রাহুল দেব বর্মন এবং সলিল চৌধুরী।
রাজেস খান্নার ব্লকবাস্টার ছবি বলতে প্রথমেই আসে ‘আরাধনা’ আর ‘অমর প্রেম’।আর এই সব ছবির নায়িকা ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর।কলকাতায় অমর প্রেম ছবির শুটিংয়ের সময় তাঁর সুপারস্টার রাজেশ খান্নার ভক্তদের এমন ভিড় হয়েছিল যে হাওড়া ব্রিজে শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত পরিচালক নকল হাওড়া ব্রিজ তৈরি করে শুটিং করেন। রাজেশ খান্নার হিট ছবিগুলির মধ্যে অন্তত দুটি ছবি প্রথমে বাংলায় ‘গল্প হলেও সত্যি’ ও ‘নিশিপদ্ম’। ‘অমর প্রেম’ ছবিতে অভিনয়ের আগে রাজেশ খান্না উত্তম কুমারের ‘নিশিপদ্ম’ প্রায় সতেরোবার দেখেছিলেন। এরপর তিনি বলেছিলেন-গ্রেটেস্ট লিভিং অ্যাক্টর অন দ্য আর্থ’। বাংলা ছবিতে রাজেশ খান্না কাজ করেননি, কিন্তু বাংলার সঙ্গে তাঁর যোগ ছিল গভীর। সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ উপন্যাসে রাজেশ খান্নার ‘কাটি পতঙ্গ’ ছবির উল্লেখ আছে।
রোমান্টিক হিরো হিসেবে রাজেশ খান্না অদ্বিতীয়। সহঅভিনেত্রীদের সঙ্গে পর্দায় রসায়ন জমিয়ে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার! ‘আরাধনা’ ছবিতে শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে রাজেশ খান্নার রোমান্টিক দৃশ্যগুলি আজও সুপার হিট। ‘আনন্দ থেকে শুরু করে ‘আও মিলো সাজনা’, ‘মেরে জীবন সাথি’, ‘দুশমন’ ইত্যাদি ছবিতে রাজেস খান্নার রোমান্টিক সংলাপগুলো সেই সময় বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলে।
রাজেশ খান্নার বলিউড জীবনে আরও একটি বিষয় বেশ আলোচিত ছিল, তা হল তাঁর নারীসঙ্গ। প্রথম জীবনে অভিনেত্রী আঞ্জু মাহেন্দ্র-র সঙ্গে তাঁর প্রেম। পরবর্তীতে ভালবেসে বিয়ে করেন ডিম্পল কাপাডিয়াকে। বিচ্ছেদের পর অভিনেত্রী টিনা মুনিমের সাথে দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্ক ছিল রাজেসের।‘সাওতান’, ‘ফিফটি-ফিফটি’ ছবিতে তাঁরা জুটি বেঁধেছিলেন। রাজেশ খান্নার সঙ্গে অনিতা আদভানির সম্পর্কও পরবর্তীতে আলোচিত হয়।
১৯৬৬ সালে ‘আখরি খত’ ছবিতে অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি যতিন খান্না নাম পালটে হয়ে ওঠেন রাজেশ খান্না। যদিও তার আইডল ছিল স্কুল এবং কলেজে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রবি কাপুর। যিনি পরবর্তী সময়ে বলিউডে প্রতিষ্ঠা পান জিতেন্দ্র নামে। তাকে দেখেই নাকি রাজেশ খান্না অভিনয়ে এসেছিলেন।