এক নজরে

আটদিন ধরে মাটির নিচে আটকে ৪০ শ্রমিক

By admin

November 20, 2023

সাত দিন পেড়িয়ে আট দিন হয়ে গেল ৪০ শ্রমিক মাটির নিচে আটকে রয়েছেন। এখনো তাঁদের উদ্ধার কাজে উল্লেখ করার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। বরং তাঁদের নিরাপত্তা ও জীবন নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। গত রবিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় ব্রহ্মখাল-যমুনাত্রী জাতীয় মহাসড়কের অংশে নির্মাণাধীন ওই টানেলটির একটি অংশ ধসে পড়ে। পরে খবরে বলা হয়, টানেলটি ধসে পড়ার আগের রাতে সেখানে ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। ধসের পর যারা টানেলের বেরিয়ে যাওয়ার মুখে কাজ করছিলেন তারা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। কিন্তু মাটির প্রায় ২০০ মিটার গভীরে কর্মরত ৪০-৪১ জন শ্রমিক আটকা পড়ে যান। টানেলটি প্রায় ৪ হাজার ৫৩১ মিটার লম্বা। মাটি ধসে সেটির বেরিয়ে যাওয়ার মুখটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

মাটির নিচে আটকা পড়া শ্রমিকরা ভালো আছেন বলে এখনো দাবি করা হচ্ছে। টানেল ধসে পড়ার দিন সকাল থেকেই তাদের পাইপের মাধ্যমে খাবার, জল ও অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা ওয়াকি-টকির মাধ্যমে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যদিও বলা হচ্ছে, শ্রমিকদের মধ্যে মাথাব্যথা, উদ্বেগ এবং বমি বমি ভাবের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে বিশাল আকারের এক ড্রিল মেশিন দিয়ে মাটি গর্ত করে শ্রমিকদের বের করে আনার যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছিল শুক্রবার সেটা আটকে যায়। ভেঙে যায় ড্রিল মেশিনটি। শনিবার দ্বিতীয় আরেকটি ড্রিল মেশিন আসার কথা ছিল। সেটি দিয়ে পুনরায় ড্রিল কাজ শুরু হবে বলে জানা যায়।

ধসে পড়া টানেলের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মাটি ছাড়াও বড় বড় বোল্ডার থাকায় ড্রিল করার কাজ ব্যহত হচ্ছে। শুক্রবার ভূগর্ভে ড্রিল মেশিনটি বন্ধ হয়ে গেলে উদ্ধারকর্মীরা সেটি পুনরায় চালু করার চেষ্টা করে। সেই সময়ে বড় ধরনের ফাটলের শব্দ শোনার পর তারা কাজ থামিয়ে দিয়েছে বলে জানা যায়। কি কারণে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেলটির একটি অংশ ধসে পড়লো সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো তথ্য জানায়নি। তবে ভারতের পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখণ্ডে নিয়মিতই ভূমিধস, ভূমিকম্প এবং আকস্মিক বন্যা হতে দেখা যায়। টানেলটি উত্তরাখণ্ডের যে জাতীয় মহাসড়কে নির্মিত হচ্ছে সেটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চারধাম হিন্দু তীর্থযাত্রা মহাসড়কের অংশ। ধসে পড়া টানেলটি রাজ্যের উত্তর কাশীর সিল্কিয়ারাকে দন্দলগাঁও-এর সঙ্গে সংযুক্ত করবে। যার ফলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান উত্তর কাশীর থেকে যমুনাত্রী ধামের মধ্যেবর্তী সড়ক পথের দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার কমে যাবে। উত্তরাখণ্ডে হিন্দুদের চারটি তীর্থস্থানকে জুড়ে দেওয়ার লক্ষ্যে চারধাম মহাসড়কটি নির্মিত হচ্ছে।।৮৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার।

২০১৮ সালে টানেলটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০২২ সালের জুলাই মাসে সেটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে ঠিক ছিল। পরে তা পিছিয়ে ২০২৪ সালের মে মাস করা হয়। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। মোদী সরকার চাইছে নির্বাচনের আগেই মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে। এদিকে, ভূতত্ত্ববিদ, স্থানীয় বাসিন্দা এবং কর্মকর্তারা মনে করছেন, পাহাড়ের ভেতর দিয়ে দ্রুত নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার কারণেই টানেল ধসের ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনাস্থলে  আটকে পড়া শ্রমিকদের পরিবারের লোকজনেরা যত সময় যাচ্ছে ততই আশা হারাচ্ছেন।  চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় মাটির নিচে আটকা পড়ে থাকায় শ্রমিকদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাদেরকে পুনর্বাসন জরুরি।  

প্রসঙ্গত, গত সাত দিনে তিনটি পদ্ধতিতে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সবগুলি প্রচেষ্টাই বিফল হয়েছে। প্রথমে চেষ্টা করা হচ্ছিল ভূমি ধসের ফলে সুড়ঙ্গের ভেতরে যে মাটি-পাথর জমা হয়েছে, সেগুলো সরিয়ে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনোর। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরে ফের ধস নামে, তাই সেই পদ্ধতি বাতিল করা হয়। পরে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে ধ্বংসাবশেষের ভেতরে গর্ত খোঁড়ার চেষ্টা হয়। সেই যন্ত্রও খারাপ হয়ে যায়। তারপরে দিল্লি থেকে আরেকটি বড় মাটি কাটার যন্ত্র এনে ধ্বংসাবশেষের ভেতর দিয়ে ৯০০ মিলিমিটার ব্যাসের একটা পাইপ গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। শুক্রবার রাতে সেই যন্ত্রও থমকিয়ে যায়। এখন ইন্দোর থেকে আরও বড় একটা যন্ত্র আনা হয়েছে।