এক নজরে

অঙ্কিতার পর পাশ না করেই চাকরি যোগে মুখ পুড়ল সুকন্যার

By admin

August 17, 2022

কলকাতা ব্যুরো: রাজ্যর শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল বাবা প্রভাব খাটানোয় তাঁর নাম উঠে আসে প্যানেলের প্রথমেই। এবার সেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়াল শাসকদলের আর এক দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যার। ইতিমধ্যেই নিয়োগে গরমিলের অভিযোগে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতাকে। আর বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হল অনুব্রত কন্যাকে। জানা গিয়েছে বুধবার রাতেই কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন সুকন্যা।

মঙ্গলবারই জানা গিয়েছিল বুধবার সকালে অনুব্রত কন্যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বীরভূমের নীচুপট্টির বাড়িতে যাবেন সিবিআই আধিকারিকরা। সেই কারণে বুধবার সকাল থেকেই নজরে ছিল অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূমের বাসভবন। সকাল থেকেই একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল রাজ্যবাসী। যার প্রতিমুহূর্তেই একের পর এক টুইস্ট। মাঝে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধান। তার মধ্যেই ফের অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূমের বাড়িতে হানা সিবিআই আধিকারিকদের। বুধবার বেলা ১২ টা ১৭ মিনিট সিবিআইয়ের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল পৌঁছে যায় অনুব্রত মণ্ডলের নীচু পট্টির বাড়িতে। এদিন আঁটঘাট বেঁধে অনুব্রত কন্যাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভাবনা ছিল সিবিআই আধিকারিকদের। কিন্তু জেরার মুখোমুখি হতে রাজি হননি সুকন্যা। তিনি জানান, বাবা হেফাজতে রয়েছেন, মাকে সদ্য হারিয়েছি। তাই এখন কোনও কথা বলব না। আর সেই কারণেই ১০ মিনিটের মধ্যেই মণ্ডল বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা।

সিবিআই সূত্রে খবর, এদিন সুকন্যাকে নোটিস দেওয়া হয়েছে।প্রসঙ্গত, বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করার পরই তাঁর সম্পত্তির খোঁজে তল্লাশি শুরু করে সিবিআই। আর তখনই উঠে আসে অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের নাম। তাঁর নামে একাধিক সম্পত্তি ও কোম্পানির হদিশ পায় সিবিআই। পেশায় শিক্ষিকা সুকন্যার এত সম্পত্তি এল কোথা থেকে, তা জানতে তাঁকে জেরা করার সিদ্ধান্ত নেয় সিবিআই।

তবে বুধবার সকালে প্রথমে অনুব্রতর চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। তাঁকে প্রায় ২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর অনুব্রতর নিচুপট্টির বাড়িতে যান তদন্তকারীরা। এদিন বাড়িতেই ছিলেন সুকন্যা। এরপর সিবিআইকে তদন্তে সহযোগিতা না করায় মিনিট দশেকের মধ্যে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সিবিআই আধিকারিকরা।

তবে এদিন সিবিআইয়ের জেরার হাত থেকে নিস্তার পেলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। এদিন দুপুরেই কলকাতা হাইকোর্টে টেট পাশ না করেই প্রাথমিকে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠলো অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডলের বিরুদ্ধে। কলকাতা হাইকোর্টে প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায়, এমনই অভিযোগ জানিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম।

তিনি আদালতে জানান, স্কুলে যেতেন না সুকন্যা। তাঁকে সই করানোর জন্য রেজিস্ট্রার আসত বাড়িতে। সুকন্যা মণ্ডল বীরভূমের বোলপুরের কালিকাপুর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। সেই চাকরি নিয়েই এবার সামনে এল বেনিয়মের অভিযোগ। আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বুধবার হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে জানান, সুকন্যা টেট পাশ না করেই চাকরি পেয়েছিলেন। সেই সংক্রান্ত নথিও এদিন আদালতে জমা দিয়েছেন আইনজীবী।

তবে শুধু অনুব্রত-কন্যাই নয়, অনুব্রত ঘনিষ্ঠ ৬ জনের বিরুদ্ধে টেট পাশ না করে চাকরি করার অভিযোগ জানিয়েছেন ওই আইনজীবী। যে ছয় জনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল, অনুব্রতর ভাই সুমিত মণ্ডল, ভাইপো সাত্যকী মণ্ডল, নেতার পিএ অর্ক দত্ত। এছাড়া তালিকায় রয়েছেন বিদ্যুৎ গায়েন, কস্তুরী চৌধুরী ও সুজিত বাগদি নামে আরও দুই জন। তাঁরাও অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করা হয়েছে। আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টের মধ্যে সকলকে হাইকোর্টে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম আদালতের বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, মামলাকারী জানতে পেরেছেন সুকন্যা মণ্ডল টেট ফেল করে চাকরি করছেন। সুকন্যা মণ্ডল ছাড়া আরও পাঁচ জন টেটে পাশ করেননি, কিন্তু চাকরি করছেন। শুধু তাই নয়, এই সুকন্যা মণ্ডল স্কুল পর্যন্ত করতেন না। এতদিন ধরে বেতন পাচ্ছেন। কখনও তিনি বলতেন চাকরি করেন না, আবার কখনও বলতেন চাকরি করেন। কিন্তু কোনওদিন স্কুল যাননি।