এক নজরে

শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর – কিছু কথা

By admin

September 11, 2020

১২৫ বছর ধরে একটা বক্তৃতা স্মরণ করে আসছে একটা জাতি। তবু জাতীয় জীবনে এখনও জাতপাত আর ধর্মান্ধতা রয়ে গেছে। দুটোকেই সারা জীবন ঘৃণা করে এসেছেন স্বামী বিবেকানন্দ। তার শিকাগো বক্তৃতায় তা খুব স্পষ্ট করে বলেছেন স্বামীজি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় একটাই যারা তাকে রাজনীতির ময়দানে নামিয়ে নির্লজ্জ ভোট কেনার জন্য ব্যাস্ত তারাই আবার তার বক্তৃতা নিয়ে আস্ফালন ও করছেন। স্বামীজি তথা গোটা একটা ধর্মকে ভুল ব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষের কাছে হাজির করা হচ্ছে। এর থেকে কুৎসিত ও নির্মম পরিহাস বঙ্গজীবনে আর কিছু হতে পারে বলে মনে হয় না। কিছু রাজনৈতিক দল রাস্তায় রাস্তায় স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তিও স্থাপন করে থাকেন আজকাল। শুধু মনে করিয়ে দি স্বামীজি ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেলাকেও চরম ঘৃণার চোখে দেখে এসেছেন। ঠিক এইখানেই বোধ হয় শিকাগো বক্তৃতার বর্তমান ভারতবর্ষে প্রয়োজনীয়তা এবং যৌক্তিকতা।

নরেন্দ্রনাথ দত্ত এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি প্রমাণ ছাড়া কোনো কিছু মানতেন না। এমনকি তার গুরুদেব শ্রীরামকৃষ্ণকে ও না। বারে বারে বলতেন , ” ডোন্ট বিলিভ অনিথিং উইদাউট এভিডেন্স।” জাতিভেদ, কুসংস্কার আর বাল্য বিবাহ কেও মানেননি কোনোদিন। হিন্দু হয়েও হিন্দু গোড়ামি কে তীব্র ভাবে তার লেখায় , কথায় সমালোচনা করে গেছেন। রামকৃষ্ণ সংস্পর্শে আসার আগে অবধি হিন্দুদের ঈশ্বর ও মানতেন না নরেন্দ্র। তারপর রামকৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ও মানেনি। একদিন রামকৃষ্ণ জিজ্ঞেস করে ছিলেন ” আমার কাছে আসিস কেনো তবে।” বিবেকানন্দের উত্তর ছিল “ভালোবাসি তাই আসি।” গুরুর প্রতি শিষ্যের এই ভালোবাসাই মুগ্ধ করেছিল রামকৃষ্ণ কে। তারপর তো ইতিহাস। রামকৃষ্ণ তার সর্বস্ব দিয়ে গেলেন বিবেকানন্দকে । বলে গেলেন, ” নরেন লোকোশিক্ষা দেবে।” এই লোকোশিক্ষার প্রথম ধাপ তৈরি হলো শিকাগো ধর্মসভায়। এতদিন ধরে অপরিচিত বিবেকানন্দ এবার শুধু ভারতাত্ম তার বানী শোনালেন তাই নয়, রামকৃষ্ণের পরিচয় ঘটালেন বিশ্ব সভায়। প্রথম প্রথম বক্তৃতা দিতে ভয় পেয়েছিলেন। সে কথা তার এক চিঠিতে তার শিষ্য আরাশিনগা পেরুমাল লেখা এক চিঠিতে জানিয়েছেন স্বামীজি। সকালে যখন তার বক্তৃতা দেবার ডাক পড়ে তখন তিনি নাকচ করে দেন। পরে দ্বিতীয় বারের ডাক আসায় বক্তৃতা দিতে ওঠেন। মাত্র কয়েক মিনিটের বক্তৃতা। জয় করে নিলেন আমেরিকা বাসির হৃদয়। পরে ক্রিস্টোফার ইসার‌উড বলে গেছেন , ” দেয়ার ওয়াজ ট্রিমেন্ডাস পাওয়ার ইন হিস ওয়াডস ( there was tremendous power in his words )। তার কথার পিছনে ব্যাথা ছিল, ব্যাথার পিছনে অনুভূতি আর অনুভূতির পিছনে গুরুকৃপা। ৪০০০ দর্শককে ওই কয়েক মিনিট মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়েছিলেন। শুনিয়েছিলেন সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা । আর দুটি সংস্কৃত শ্লোক ছিল তার কথায় যার সারমর্ম রামকৃষ্ণের বহুল প্রচারিত বানী – যত পথ তত মত। মূল ব্যাখ্যা ছিল একটাই ধর্মীয় গোড়ামি আর সাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যেই যে ব্রহ্ম আছে সেটাই বারে বারে পরিষ্কার করে দিয়েছেন স্বামীজি। সব অসদ্ভাবের সমস্ত রকম অবসান চেয়েছেন তিনি। তাজমহল বা হাঙ্গিং গার্ডেন অফ ব্যাবিলনের মতোই বিষ্ময় কর ছিল সেই ভাষণ যা আজও সমান জনপ্রিয় আর মূল্যবান রয়ে গেছে ১৩০ কোটির ভারতবর্ষে।