এক নজরে

রহস্যময় ময়দান

By admin

August 11, 2020

১৬ বছর ধরে ময়দানে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্ন

ইন্দ্রনীল বসু

প্রথম পর্ব

ঘটনাটি ২০০৪ সালের। খুন হয়েছিলেন এক তরুণী। যদিও তাঁর পরিচয় জানা গিয়েছিল বছর খানেক পরে। সেই সূত্রে জবাব মিলেছিল আরও কিছু প্রশ্নের। কিন্ত ২০০৪ থেকে ২০২০ – কেটে গিয়েছে ১৬টি বছর। আজও অধরা মোক্ষম একটি প্রশ্নের উত্তর। কোথায় মহেশ মাহাতো? কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ময়দান চত্বরে ওই তরুণীকে বিহারের বাসিন্দা মহেশই খুন করেছিল বলে জানা গেলেও আজ পর্যন্ত নাগাল পাওয়া যায়নি তাঁর। জানা যায়নি, মহেশ কেন খুন করেছিল সবিতা রায় নামে ওই তরুণীকে।                             ঘটনা সূত্রপাত, ওই বছরের ৩০ মে রাতে। ঘড়িতে তখন রাত ১১টা। ময়দান থানার ল‍্যান্ড ফোনে রিং বেজে উঠল।‘স‍্যার এখানে একটা মহিলার লাশ পড়ে আছে’। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটলেন নাইট ডিউটি অফিসার। ফোনটি করেছিলেন ময়দান মেট্রো স্টেশনের কুলিং পয়েন্টের এক নিরাপত্তারক্ষী। জওহরলাল নেহেরু রোডের দিক থেকে ময়দানের দিকে যে সোজা রাস্তা ঢুকছে ঠিক সেখানে পড়েছিল দেহটি। ওই নিরাপত্তারক্ষী পুলিশের কাছে দাবি করেন, বাথরুম করতে গিয়েছিলেন তিনি। তখনই অচৈতন্য অবস্থায় দেহটিকে পড়ে থাকতে দেখেন। পৌঁছালেন ময়দান থানার ওসি। আসলেন হোমিসাইড শাখার অফিসারও। তরুণীর পরনে সালোয়ার কামিজ। গলায় ওড়না জড়ানো। গোয়েন্দাদের অভিজ্ঞ চোখে ধরা পড়ল গলায় কালশিটে দাগ। ফলে সেটি যে শ্বাসরোধ করে খুনের ঘটনা তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। পরদিন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের রিপোর্টও তারই সবুজ ইঙ্গিত মিলল।

কিন্তু কী কারণে খুন? কে বা করা খুন করল তরুণীকে? অন্য কোথাও খুন করে কি দেহ ওই জায়গায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল?

কিন্তু কী কারণে খুন? কে বা করা খুন করল তরুণীকে? অন্য কোথাও খুন করে কি দেহ ওই জায়গায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল? এই সব প্রশ্নের থেকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল নিহত তরুণীর পরিচয় জানার। সেই পরিচয় জানতে আশেপাশের সব থানায় নিঁখোজের তালিকা মিলিয়ে দেখা শুরু করল পুলিশ। কাজে নামানো হল সোর্সদেরও। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হল তদন্তকারীদের।ফলে ধুলো জমতে থাকলো ময়দান থানার ৭৯ নম্বর কেসের সেই ফাইলে। কেটে গেল গোটা একটা বছর। যখন একেবারে ক্লু হীন কেসটি প্রায় ভুলতে বসেছিলেন তদন্তকারীরা‌ ঠিক তখনই যেন ‘মিরাকেল’টি ঘটে।বেওয়ারিশ ওই লাশের ছবি বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়েছিল। নিখোঁজ বা অশনাক্ত দেহের ছবি যেমন এখনও বিভিন্ন থানার নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো থাকে তেমনই সেই ছবিটি টাঙ্গানো ছিল টালিগঞ্জ থানার নোটিশ বোর্ডে। কিছুদিন আগে অন্য একটি থানা থেকে সেখানে বদলি হয়ে এসেছিলেন তরুণ এক অফিসার। তাঁর উপর দায়িত্ব পড়েছিল এলাকার বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাড়ি গিয়ে পরিচারক, পরিচারিকারদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। কারণ সে সময় বেশ কিছু বাড়িতে চুরি-ডাকাতির ঘটনায় এমন অনেকের যোগ মিলছিল। সে কাজেই ২০০৫ সালের একদিন মনোহরপুকুরের একটি বাড়িতে যান তিনি। সেদিন সেখানে গিয়ে ওই অফিসার জানতে পারেন, তাঁদের বাড়ির সর্বক্ষণের পরিচারিকার কোনো খোঁজ নেই এক বছর ধরে। নাহ! কোনো কিছু চুরি করে পালাননি তাঁদের পরিচারিকা সবিতা রায়। হঠাৎ একদিন বিকেলে কিছু জরুরি কাজ আছে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে উধাও হয়ে যান। তা শোনার পর থানার ফিরে যান ওই অফিসার। থানার নোটিশ বোর্ডে থাকা ময়দানে নিহত সেই অজ্ঞাত তরুণীর ছবিটিতে ফের নজর যায় তাঁর। নিছক কৌতুহলেই সেই ছবি খুলে নিয়ে পরদিন আবার মনোহরপুকুরে ওই বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে হানা দেন তিন। এক বছর ধরে যে রহস্যে জট বেঁধে পড়েছিল, বলা বাহুল্য সেই জট কিছুটা খোলে সেদিনই। ওই পরিবার ছবিটিকে তাঁদের নিখোঁজ পরিচারিকার ছবি বলে শনাক্ত করে। অনেক অল্প বয়স থেকে ওই বাড়িতে থেকে কাজ করতেন সবিতা।

চলবে…