এক নজরে

চড়া বাড়ি ভাড়া বাঁচাতে প্লেনে চড়ে ক্লাস  

By admin

February 28, 2024

বিশ্বের উন্নত অনেক দেশেই আবাসন সংকট এখন তীব্র। অনেক শহরে তো থাকার মতো বাড়ি মেলে না, যদি বা মেলে তার এমন ভাড়া যা শুনলে চোখ উঠবে কপালে। বাধ্য হয়ে তাই অফিস কিংবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরেই থাকেন অনেকে। অফিস দূরে হলে যাতায়াতের কষ্ট এড়াতে অনেকেই কাছাকাছি বাড়ি ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাতে শ্রম ও সময় দুটোই বাঁচে। কিন্তু যদি দেখা যায়, ওই এলাকায় বাড়ি ভাড়া এত বেশি যে, সেখানে থাকার চেয়ে দূর থেকে যাতায়াত করাই ভাল, তাহলে সেই কষ্টটুকু মেনে নিতে রাজি হন অনেকে। তাই বলে বিমানে করে যাতায়াত করার কথা ভাবাই যায় না! কিন্তু যা ভাবা যায় না সেটাই করেছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার শিক্ষার্থী টিম চেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে দু’দিন ক্লাস করতে হয় টিমকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি ভ্যানকুভার এলাকায় বাড়ি ভাড়া প্রচুর বেশি এবং এতটাই বেশি হিসাব করে দেখা গেল এক কামড়ার একটি বাড়ি ভাড়া বাবদ তাকে যে টাকা দিতে হবে তার চেয়ে বিমানে করে যাতায়াত করলে খরচ তুলনায় কম হবে। কারণ টিম চেন থাকেন ক্যালগেরিতে আর তাকে থাকতে হবে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কাছাকাছি ভ্যানকুভারে। প্রতি সপ্তাহে দু’দিন বিমানে চড়ে যাতায়া করে ক্লাস করেন তিনি। প্রতিবার আসা–যাওয়ার ভাড়া পড়ে ১৫০ আমেরিকান ডলার। মাসে ১ হাজার ২০০ ডলার। ভারতীয় টাকায় ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা প্রায়। কিন্তু ভ্যানকুভারে একটি অ্যাপার্টমেন্টের মাসিক ভাড়া ২ হাজার ১০০ ডলার  ভারতীয় টাকায় প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার। তাই তিনি বিমানে চরে যাতায়াতের সিদ্ধান্ত নেন। বিমানে চড়ে ক্লাস করেও তাঁর ৯০০ ডলার বেঁচে যায়।

চেন নিজের অভিজ্ঞতা লিখে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আমি অনেক দূর থেকে ইউবিসির নিয়মিত যাত্রী এবং আমি ক্যালগেরিতে থাকি। মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার আমার ক্লাস থাকে, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়। আমি সকালে ভ্যানকুভারে উড়ে যাই এবং রাতে ক্যালগেরিতে ফিরে আসি। আমি এয়ার কানাডায় ফ্লাইটে যাতায়াত করি।’চেন আরও লিখেছেন, ‘জানুয়ারি মাসে আমি এই ভাবে সাতবার আসা–যাওয়া করেছি। দেখলাম, এতে আমার ডলার অনেক বেঁচে যাচ্ছে, কারণ আমাকে ক্যালগেরিতে বাড়ি ভাড়া দিতে হচ্ছে না। তাছাড়াও আমি আমার মা–বাবার সঙ্গে বাড়িতে থাকতে পারছি। ভ্যানকুভারে বাড়ির ভাড়াও দিতে হচ্ছে না। অনেকেই চেনের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। আবার অনেকে বলেছেন, এমন বিমান ভ্রমণের জন্য তো তাঁকে অস্থির সময় কাটাতে হয়, সঙ্গে অনেক সময়ও লেগে যায়। অন্য একজন লিখেছেন, এক ঘণ্টার যাত্রা খারাপ নয়। কিন্তু নিয়মিত বিমানবন্দরে যাতায়াতের ফলে জীবনীশক্তি ক্ষয়ে যায়। কেউ লিখেছেন, ফ্লাইট মিস করার চিন্তাও তাঁর বড় মাথাব্যথা। আরেকজন লিখেছেন, আধুনিক সমস্যার আধুনিক সমাধান।

টিম চেনের মতো আরেক জন ছাত্রের কথা বলা যায়, তাঁরও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বাড়িভাড়া ছিল বড্ড চড়া, তাই খরচ বাঁচাতে তিনিও বিমানে চড়ে ক্লাসে যেতেন। আর এভাবেই তিনি বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি হাসিল করেছেন। তাঁর নাম বিল ঝৌ। লস অ্যাঞ্জেলস থেকে বার্কলিতে গিয়ে পড়াশোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বসবাস করতে গেলে তাঁর পকেট ফাঁকা হয়ে যাবে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেপিঠে এক বেডরুমের ফ্ল্যাটের ভাড়াই আকাশছোঁয়া। কিন্তু ‘চড়া’বাড়িভাড়ায় না থেকে বিল ঝৌ সপ্তাহে তিন দিন করে লস অ্যাঞ্জেলস থেকে বিমানে যাতায়াত করে ক্লাসে পৌঁছতেন। আবার বিমানেই ফিরে আসতেন লস অ্যাঞ্জেলসে, নিজের বাড়িতে।

প্রতি দিনের বদলে সপ্তাহের সোম, বুধ এবং শুক্রবার— এই তিন দিনের গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসগুলি করতেন বিল। লস অ্যাঞ্জেলস থেকে সান ফ্রান্সিসকো নিয়মিত বিমানে চড়ায় ‘ফ্রিকুয়েন্ট ফ্লায়ার্স মাইলস’-সহ ক্রেডিট কার্ডে যে পয়েন্টগুলি সংগ্রহ করতেন, তা দিয়েও পরে টিকিট কেটেছেন। বিমানবন্দরের কাছে মেট্রো স্টেশনের পার্কিংয়ে নিজের গাড়ি রেখে দিতেন বিল। এতে বিমানবন্দরের পার্কিংয়ের তুলনায় খরচ পড়ত কম। প্রায় এক বছর ধরে দূরের শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য মোট ২৩৮টি উড়ান ধরেছেন বিল। বিমানভাড়া মেটাতে মোট ব্যয় করেছেন ২,৪১৩ ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা ২ লক্ষ টাকারও বেশি।