ফ্রান্সের প্যারিস শহরে শুরু হতে চলেছে ৩৩তম অলিম্পিক। অলিম্পিক হল গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ। শুরু হচ্ছে ২৬ জুলাই চলবে ১১ অগাস্ট পর্যন্ত। প্যারিসে প্রথমবার অলিম্পিকের আসর বসেছিল ১৯০০ সালে। শেষবার অলিম্পিক হয়েছিল ১৯২৪ সালে। একশো বছর পর আবার ওই শহরে হতে চলেছে অলিম্পিক, তাই উন্মাদনা তুঙ্গে। আর সেই নিরিখে এক আশ্চর্য রেকর্ড করতে চলেছে প্যারিস। যা লন্ডন ছাড়া আর কারও নেই। মোট তিনবার অলিম্পিকের আয়োজক হওয়ার গরিমা বিশ্বের আর কোনও শহরের নেই। প্যারিস অলিম্পিকে ৩২৯টা ইভেন্ট দেখা যাবে। ১৯ দিনের এই টুর্নামেন্টে ৩২টা খেলাকে দেওয়া হয়েছে জায়গা। মোট ১০ হাজার ৫০০ অ্যাথলিট অংশ নেবেন প্যারিস অলিম্পিকে। এই গেমস আয়োজন করার জন্য অনুমানিক ৮১ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে।
অলিম্পিকের উদ্বোধনী প্যারেডের জন্য সাধারণত ব্যবহার করা হয় প্রধান অ্যাথলেটিক স্টেডিয়াম। কিন্তু প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে সিন নদীতে। ৬-৭ হাজার অ্যাথলেট আইফেল টাওয়ারের পূর্ব কোণের অস্টারলিটজ সেতু থেকে নৌকা ও বার্জে করে সিন নদীর ৬ কিলোমিটার পাড়ি দেবেন। প্রায় ৫ লাখের বেশি দর্শক বিশেষভাবে তৈরি স্ট্যান্ড থেকে এই আয়োজন উপভোগ করবেন। ইতিমধ্যে ২ হাজার ৭০০ ইউরোর বেশি দামে বিক্রি হয়েছে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের টিকিট। তবে সিনের তীর ও আশপাশের ভবনের বারান্দা থেকেও বিনা মূল্যে উপভোগ করা যাবে বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠান।
১২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে পুরো অনুষ্ঠানটিকে। যেখানে মোট তিন হাজার নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী ও বিনোদনকর্মী অংশ নিচ্ছেন। অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা সিনের দুই তীরে, সেতুতে ও কাছাকাছি স্মৃতিস্তম্ভগুলোয় থাকবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দুই–তৃতীয়াংশ দিনের আলোয় আয়োজন করা হলেও বাকি অংশ দেখা যাবে গোধূলিবেলায়। এই আয়োজনে প্যারিসের অপরূপ সূর্যাস্তের মুহূর্তও প্রাণভরে উপভোগ করতে পারবেন দর্শকেরা। প্যারেডের পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সংগীত আয়োজন একটি বিরাট আকর্ষণ।
প্যারিস অলিম্পিকে ভারতের এমন অনেক অ্যাথলিট রয়েছেন, যাঁরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। যদিও প্রথম বার নামবেন অলিম্পিকের মঞ্চে। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে অনেকেই পদকের দাবিদার। ভারতের পদক সংখ্যা কত হতে পারে, অনেকটাই নির্ভর করবে তাঁদের পারফরম্যান্সের উপর। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কারা রয়েছেন তালিকায়।
অলিম্পিকে অভিষেক হতে চলেছে সিফ্ট কৌর সামরার, তিনি শুটার। এর আগে হানঝাউ এশিয়ান গেমসে তিনি সোনা জিতেছিলেন ফাইনালে বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে। শুটিংয়ে ভারতের আরও এক ভরসা ইশা সিং। ১৯ বছরের এই শুটার মাত্র ১৩ বছরেই হারিয়েছিলেন ভারতের তারকা শুটার হিনা সিন্ধু, মানু ভাকেরদের। ২০২২ সালে বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছেন। সঠিক নিশানায় এনেছেন অনেক পদক। এশিয়ান গেমসে রিকার্ভ টিম ইভেন্টে রুপো জিতেছিলেন তিরন্দাজ ধীরজ বোমদেবরা। এখন দেখার অলিম্পিকের মঞ্চে কেমন পারফর্ম করেন। বক্সিংয়ে নিখাত জরিন, লভলিনা বোরগোহাইয়ের পাশাপাশি প্রীতি সাই পাওয়ারের নাম নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। প্রথম বার অলিম্পিকের মঞ্চে কিন্তু প্রত্যাশা অনেক বেশি। প্যারিসে ভারতীয় অ্যাথলিটদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী হলেন ধিনিদি দেশিংহু। মাত্র ১৪ বছরের বয়সি ধিনিদির প্রথম অলিম্পিক হলেও সম্ভাবনা অনেক। সঙ্গে অভিজ্ঞ শ্রীহরি নটরাজ থাকায় গাইড করার লোকের অভাব নেই।
অলিম্পিকে হেভিয়েস্ট কোটায় (৭৬ কেজি ক্যাটেগরি) টিকিট নিশ্চিত করেছেন রীতিকা হুডা। সাক্ষী মালিক যেখানে কুস্তি শিখেছিলেন, সেখান থেকেই উঠে আসা রীতিকার। এ বার সাক্ষীর পথ পেরোনোর অপেক্ষায়। যার প্রধান হল, অলিম্পিক পদক। ভারতীয় টেবিল টেনিসে অতি পরিচিত নাম শ্রীজা আকুলা। অলিম্পিকে প্রথম। ভারতের এক নম্বর টেনিস তারকা শ্রীজা। গত আট মাস দুর্দান্ত কেটেছে তাঁর। সবটাই যেন পূর্ণতা পাবে অলিম্পিকের মঞ্চে। কুস্তিতে আরও একটা কিস্তিমাত হতে পারে অন্তিম পাঙ্ঘালের সৌজন্যে। অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দু-বার সেরার শিরোপা জিতেছেন। সিনিয়র স্তরেও পদক জিতেছেন। রাজকুমার পালের ক্ষেত্রে অবশ্য অন্য সমীকরণও নির্ভর করছে। ভারতীয় হকি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। অল্পের জন্য টোকিও অলিম্পিকের স্কোয়াডে সুযোগ পাননি। এ বার দলে রয়েছেন। টোকিওতে ব্রোঞ্জ এসেছিল হকিতে। খরা কেটেছিল পদকের। তবে সোনার পদকের খরা কাটেনি। এ বার রাজকুমারদের সৌজন্যে সেই হতাশা কাটানোই লক্ষ্য।